এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > শিক্ষকদের আন্দোলন ‘ভাঙতে’ জিও বার করেও উদাসীন সরকার, বৃহত্তর আন্দোলনের পথে উস্থি?

শিক্ষকদের আন্দোলন ‘ভাঙতে’ জিও বার করেও উদাসীন সরকার, বৃহত্তর আন্দোলনের পথে উস্থি?


জুলাই মাসে গোটা রাজ্য সরগরম হয়ে উঠেছিল – প্রাথমিক শিক্ষকদের ন্যায্য বেতনের দাবিতে আমরণ অনশনের জেরে। রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষকদের সংগঠন উস্থি ইউনাইটেড প্রাইমারি টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারে প্রাথমিক শিক্ষকরা কলকাতার রাজপথে আমরণ অনশনে বসেন। তাঁদের স্পষ্ট দাবি ছিল, কেন্দ্রীয় নির্দেশিকা অনুযায়ী প্রাথমিক শিক্ষকরা বহু কষ্ট করে নিজেদের শিক্ষাগত যোগ্যতা বাড়িয়ে নিতে বাধ্য হলেও, রাজ্য সরকার তাঁদের কিছুতেই কেন্দ্রীয় হারে বেতন দিচ্ছেন না।

আর এর ফলে, বর্তমানে তাঁদের বেতন এমন জায়গায় থমকে গেছে যা রীতিমত লজ্জাস্কর! ভরতীয় রেলে কাজ করা একজন সাফাইকর্মীর বেতন এ রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষকদের থেকে বেশি। এই নিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে আর্জি জানিয়ে, শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বহুবার বৈঠক করলেও – রাজ্য সরকার শিক্ষকদের কথা ভাবেনি। উল্টে, এই নিয়ে আন্দোলন করতে গেলে সমাজ তৈরির কারিগরদের শান্তিপূর্ণ মিছিল স্তব্ধ করতে পুলিশ দিয়ে জলকামান চালানো হয়েছে।

এমনকি, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নিজেদের দাবির কথা জানানোর অপরাধে বহু শিক্ষককে ‘অন্যায় ভাবে’ বদলি করা হয়েছে। আর তাই কার্যত অনন্যোপায় হয়ে – আমরণ অনশনে বসার সিদ্ধান্ত নেন রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষকরা। প্রথমে এই আন্দোলনকে গুরুত্ত্ব দিতে চাননি রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রী! মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলীয় সমাবেশে নাম না করে শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে তো বলেই দেন, কেন্দ্রীয় হারে বেতন চাইলে কেন্দ্রে চলে যান! কিন্তু যাঁরা সমাজ তৈরির কারিগর, তাঁদের আন্দোলনকে কি এত সহজে দমানো যায়?

ফলে, ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এই আন্দোলনের ব্যাপকতা – গোটা রাজ্যের শিক্ষিত ও সুশীল সমাজ পাশে দাঁড়ান শিক্ষকদের এই মানবিক দাবির। আর সেই আন্দোলনের চাপে শেষপর্যন্ত পিছু হঠতে বাধ্য হয় রাজ্য সরকার। এক দলীয় সমাবেশে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, রাজ্যের আর্থিক অবস্থার কথা ভেবে শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধির সব দাবি মানা না গেলেও, তাঁদের পিবি-২ থেকে বাড়িয়ে পিবি-৩ স্কেল দেওয়া হবে। এই নিয়ে জিও-ও প্রকাশ করে রাজ্য সরকার। আর শিক্ষকরাও নমনীয় মনোভাব দেখিয়ে আমরণ অনশন প্রত্যাহার করে নেন।

কিন্তু, সেই ঘটনার পর দুমাস পেরিয়ে গেলেও কোনো বর্ধিত বেতন এখনও হাতে পান নি রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষকরা। ফলে, তাঁদের আন্দোলন ভাঙতেই কি রাজ্য সরকার এমন জিও বার করেও উদাসীন বসে আছে? এই প্রশ্ন যখন ক্রমশ জাঁকিয়ে বসছে – তখন আবার শিক্ষকদের মনের কথা তুলে ধরতে এগিয়ে এল উস্থি। গতকাল কলকাতার প্রেস ক্লাবে এক সাংবাদিক বৈঠকে উস্থির তরফে এই প্রসঙ্গে বেশ কিছু কথা তুলে ধরা হয়। একইসাথে জানানো হয়, সরকার সদর্থক পদক্ষেপ না নিলে পুনরায় বৃহত্তর আন্দোলনের পথে হাঁটবেন তাঁরা।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

এই প্রসঙ্গে সংগঠনের রাজ্য সভাপতি সন্দীপ ঘোষ ও রাজ্য সম্পাদিকা পৃথা বিশ্বাস জানান, গত দেড় বছর ধরে লাগাতার শিক্ষক আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা অর্থাৎ UUPTWA গত 26 শে জুলাই, 2019 একটি বেতন ক্রম বৃদ্ধির অর্ডার হাতে পাই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শিক্ষা দপ্তরের পক্ষ থেকে। এই অর্ডারটি ও পরবর্তীতে এই অর্ডারের ব্যাখ্যা শিক্ষা দপ্তরের জয়েন্ট সেক্রেটারি যা দিয়েছেন তা অস্পষ্ট ও অদ্ভুত! এই অর্ডারটি বিবেচনা করে নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির ব্যাখ্যা খুব তাড়াতাড়ি জানতে চাইছি রাজ্য সরকারের শিক্ষা দপ্তরের কাছে –

১. এই অর্ডার অনুযায়ী প্রাথমিক শিক্ষকদের শুধু গ্রেড পে নয়, সঙ্গে পে-ব্যান্ডও পরিবর্তন হয়েছে। এটা রাজ্য সরকারও স্বীকার করে নিয়েছে তাদের অর্ডার ও ব্যাখ্যায়। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে অনেক পুরনো প্রাথমিক শিক্ষকদের বেসিকে গ্রেড-পে তে মাত্র 300 টাকা বেড়েছে। যদিও আপনাদের (সংবাদমাধ্যমের) মারফত আমরা এই কিছুদিন আগেও ন্যূনতম 8000 টাকা বাড়বে জানতাম যা সত্যিকার অর্থে বাস্তব ও সঠিক।

২. পে-কমিশন দেওয়া হয় বিভিন্ন উপযুক্ত সূচক অনুসারে। পূর্ববর্তী বেতন কাঠামো সরকার কম মনে করে পূর্ববর্তী বেতনের সাথে একটি সমানুপাতিক সূচক গুন করে নতুন বেতন নির্ধারণ করে। আশা করি এক্ষেত্রে সরকার মনে করেছেন আমাদের বেতন কাঠামো ঠিক নয়, তাই বেতন কাঠামোর পরিবর্তনের ঘোষণা করেছেন। এই কারণে আমাদের দাবি উপযুক্ত সমানুপাতিক গুনিতকে আমাদের নতুন বেতন কাঠামোতে উন্নিত করা হোক।

৩. অর্ডারটি পুরোপুরি ফাংশানাল প্রমোশনাল অর্ডার মনে হওয়া সত্ত্বেও কেন সাতটি ইনক্রিমেন্ট আমরা পাবনা তার কোনো ব্যাখ্যা নেই।

৪. মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, আমাদের এবং আপনাদের (সংবাদমাধ্যমের) সাথে সাক্ষাৎকারেও বলেছিলেন, প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য, মাদ্রাসার ট্রেন্ড শিক্ষকদের সাথে রাখবেন না। কিন্তু, এই অর্ডার ও তার ব্যাখ্যা অনুসারে মাদ্রাসার সাথে বঞ্চনা চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। আমাদের মনে হয় পশ্চিমবঙ্গের প্রাথমিক শিক্ষক কূল প্রতারিত হচ্ছে।

৫. এই বঞ্চনা যদি প্রাথমিক শিক্ষকদের সাথে পুনরায় ঘটতে থাকে তবে আমরা অর্থাৎ UUPTWA আবার রাস্তায় বৃহত্তর আন্দোলন ও উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হব।

উস্থি ইউনাইটেড প্রাইমারি টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের এই সাংবাদিক বৈঠকের পরে স্বাভাবিকভাবেই রাজ্য-রাজনীতিতে ঝড় উঠে গেছে। রাজ্য সরকার এইভাবে কথা দিয়েও (জিও প্রকাশ করে), তা না রেখে শিক্ষিত সমাজকে এইভাবে কি করে বঞ্চিত করতে পারে দিনের পর দিন – উঠে গেছে সেই প্রশ্নও। ফলে, শিক্ষকদের এই বঞ্চনার অবসান ঘটাতে রাজ্য সরকার যদি অবিলম্বে সদর্থক পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে খুব শীঘ্রই কি আবারো গোটা রাজ্য শিক্ষক আন্দোলনে উত্তাল হবে? ক্রমশ বাড়ছে সেই জল্পনা।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!