নিরাপত্তা সুনিশ্চিত না হলে লোকসভা ভোট নিতে যাবেন না শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীগণ – জানুন বিস্তারিত কলকাতা বিশেষ খবর রাজ্য December 20, 2018 সারা ভারতবর্ষ জুড়ে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এ রাজ্যে ভোট কর্মীদের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহলে। কয়েক মাস আগে পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে এসেছিলেন ভোটকর্মীরা তার পরিপ্রেক্ষিতে পুনরায় ভোটগ্রহণের জন্য তাঁদের নাম চেয়ে পাঠানোয় আতঙ্ক এবং ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। বিগত পঞ্চায়েত নির্বাচনে উত্তর দিনাজপুরের রহতপুর হাই মাদ্রাসার শিক্ষক রাজকুমার রায়ের প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করার সময় হঠাৎ নিখোঁজ এবং মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা আজও শিহরিত করে রাজ্যের ভোটকর্মীদের। “সারা রাজ্যে নির্বাচনের নামে যে প্রহসন এবং ভোট কর্মীদের উপর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছিল তা যে কোনো শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের কাছে লজ্জার” – এই দাবি তুলে এর বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী-শিক্ষানুরাগী ঐক্যমঞ্চ। দলমত নির্বিশেষে গড়ে ওঠা এই ঐক্যমঞ্চ সারা রাজ্যের ভোট কর্মীদের উদ্দেশ্যে আহ্বান জানিয়েছে, লোকসভা ভোটের জন্য নাম পাঠানোর পূর্বে প্রত্যেকে যেন তাঁর সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে লিখিতভাবে আবেদন করে জানান যে যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়া যেন কোনমতেই তাঁদের নাম নির্বাচন দপ্তরে ভোট কর্মী হিসাবে না পাঠানো হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত না নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী সহ তাদের জীবনের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা হচ্ছে ততক্ষণ তাঁরা ভোটকর্মী হিসাবে অংশগ্রহণ করতে অনিচ্ছুক। এ ব্যাপারে শিক্ষক শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্যমঞ্চের যুগ্ম সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারী বলেন, ‘আমরা রাজ্যের সমস্ত শিক্ষক, শিক্ষিকা, শিক্ষা কর্মী এবং যাঁরা ভোট কর্মী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন তাঁদের আবেদন জানিয়েছি যেখানে যে কর্তৃপক্ষ নির্বাচনের জন্য নাম পাঠাবেন তাঁদের উদ্দেশ্যে ব্যক্তিগত বা সমষ্টিগত ভাবে চিঠি লিখে জানান যে – নাম পাঠানোর পূর্বে তাঁরা যেন নির্বাচন দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের কাছে জানতে চান যে তাঁদের নিরাপত্তার জন্য কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। যদি যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হয় তাহলে যেন কোনো ভোট কর্মীর নাম না পাঠানো হয়। যথাযথ অর্থাৎ স্বচ্ছ নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং জীবনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সুনিশ্চিত না করা হলে আমরা গোটা রাজ্য জুড়ে ভোট বয়কটের ডাক দেব। একগুচ্ছ দাবি জানিয়ে আগামী ২৪ শে ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের দপ্তরে আমরা ডেপুটেশন দেবো। তাতেও কাজ না হলে সারা রাজ্য জুড়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলবো ঐক্য মঞ্চের তরফ থেকে’। আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে। আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে। আপনার মতামত জানান - ঐক্যমঞ্চের সভাপতি বিশ্বজিৎ মিত্র বলেন, ‘ভোট গ্রহণের আগের দিন থেকে ভোট বাক্স জমা দেওয়ার পর বাড়ি ফেরা পর্যন্ত প্রতিমুহূর্তে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলতে হয় ভোটকর্মীদের। ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে থাকা, খাওয়া এমনকি ভোট বাক্স জমা দেওয়ার পর বাড়ি ফেরা পর্যন্ত প্রতিমুহূর্তে জীবনের ঝুঁকির আতঙ্ক যেন তাড়া করে বেড়ায়। এমনকি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে নাম মাত্র নিরাপত্তারক্ষী দিয়ে ভোট গ্রহণ করার ফলে নির্বাচনের নামে প্রহসন হয় – যা ভোট কর্মীগণ জীবনের নিরাপত্তার কারণে মাথা নিচু করে মেনে নিতে বাধ্য হন। যেখানেই একটু প্রতিবাদ করা হয় সেখানেই নানা ধরনের হুমকি, হেনস্থা, এমনকি শারীরিক আক্রমণ পর্যন্ত করা হয়’। বিশ্বজিৎবাবুর আরও বক্তব্য, ‘অনৈতিক কাজে বাধ্য করা হয় শিক্ষক সমাজকে। এ জিনিস কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তাই আমরা সারা পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষিত মানুষের কাছে আবেদন জানাই আপনারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে এর বিরুদ্ধে সবাই এগিয়ে আসুন। নিরাপত্তা, মান-মর্যাদা এবং গণতন্ত্র রক্ষার প্রশ্নে দলমত নির্বিশেষে এগিয়ে আসুন সবাই। কোন দল জিতল বা কোন দল পরাজিত হলো – এ আমাদের দেখবার বিষয় নয়। আমরা চাই গণতান্ত্রিক ভাবে মানুষ তাঁর অধিকার – স্বচ্ছতার সঙ্গে ভোটকেন্দ্রে য়োগ করবেন। তাকে সুনিশ্চিত করাই আমাদের দায়িত্ব’। এরপরেই ক্ষোভের সঙ্গে বিস্বজিৎবাবু বলেন, ‘নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংবিধান প্রণীত দায়িত্ব আমরা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে চাই, অথচ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের একাংশ এবং বিভিন্ন দল বারংবার আমাদের চোখের সামনে অন্যায় ও অনৈতিক ভাবে মানুষের অধিকারকে পদাদালিত করবে – এ মেনে নেওয়া যায় না। কেবল নিষ্ক্রিয় প্রতিবাদ নয় কার্যক্ষেত্রে সবাই একসাথে এগিয়ে আসুন প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার জন্য। তবেই আগামী দিনে নিরাপত্তা, মান-মর্যাদা, গণতন্ত্রকে আমরাই রক্ষা করতে পারবো’। আপনার মতামত জানান -