এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > করোনা আবহেও মমতা সরকারের বদলি নীতি নিয়ে বাড়ছে ক্ষোভ! তীব্র অসন্তোষ সরকারি কর্মীমহলে

করোনা আবহেও মমতা সরকারের বদলি নীতি নিয়ে বাড়ছে ক্ষোভ! তীব্র অসন্তোষ সরকারি কর্মীমহলে


বাংলার রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের রাজ্য সরকারের উপর বঞ্চনার অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই। প্রথমে তা ছিল ডিএ ও পে-কমিশন নিয়ে। আর তারপরে এই দুই বিষয় নিয়ে প্রতিবাদ করলেই পড়তে হয়েছে ‘রাজরোষে’ বলে অভিযোগ। যার ফলশ্রুতি হিসাবে নাকি রাজ্যজুড়ে দলমত নির্বিশেষে শুরু হয়েছে ‘বদলি সন্ত্রাস’! রাজ্য সরকারি কর্মচারী মহলে কান পাতলেই দীর্ঘশ্বাসের সঙ্গে – এই ৩ বিস্ফোরক অভিযোগ শোনা যায়।

কিন্তু, করোনা আবহে যখন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মানবিক হয়ে উঠে পরিযায়ী শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানোর কথা বলছেন – ঠিক তখনই তাঁর প্রশাসনের বিরুদ্ধে এই ‘বদলি সন্ত্রাসের’ বিস্ফোরক অভিযোগ পুনরায় উঠল। যা নিয়ে রীতিমত ঝড় উঠে গেছে রাজ্য সরকারি কর্মচারী মহলে। দলমত নির্বিশেষে সকলেই প্রায় গর্জে উঠছেন – রাজ্য সরকারের এহেন পদক্ষেপে।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের জুন মাসে নবান্নের মধ্যেই বকেয়া ডিএ, পেকমিশনের দীর্ঘসূত্রিতা ও ঠিকাকর্মীদের দাবিদাওয়া নিয়ে স্লোগান দেন বাম কর্মচারী সংগঠনের নেতারা। আর তারপরেই নজিরবিহীনভাবে তাঁদের আটক করে পুলিশ। টিফিনের সময় অর্থাৎ যেটা তাঁদের ব্যক্তিগত সময় – সেই সময়ে গণতান্ত্রিকভাবে দাবিদাওয়া নিয়ে সোচ্চার হওয়াতে রাজ্য সরকারের এই পদক্ষেপে যখন সরকারি কর্মচারীরা ফুঁসতে শুরু করেছেন তখনই রাজ্য সরকারের তরফে আরও কঠোর মনোভাব দেখানো শুরু হয় বলে অভিযোগ।

এই ঘটনার জেরেই সংশ্লিষ্ট সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের একের পর এক বদলি শুরু হয়। এমনকি, সেই বদলির হাত থেকে বাদ যান না প্রথমসারির কর্মচারী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদকদেরও। যার নজির বহু চেষ্টা করেও কেউ রাজ্যে তো বটেই, গোটা ভূ-ভারতেই প্রায় খুঁজে পাচ্ছেন না। আর বর্তমানে যখন পরিযায়ী শ্রমিকদের নিজেদের ঘরে ফেরাতে আন্তরিক বলে বার্তা দিচ্ছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, তখন রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা আশা করেছিলেন – এবার তাঁদের ব্যাপারেও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নেবে রাজ্য সরকার।

কিন্তু তাঁদের সেই আশায় কার্যত জল ঢেলে কো-অর্ডিনেশন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজয়শঙ্কর সিনহা এবং স্টিয়ারিং কমিটির সাধারণ সম্পাদক সঙ্কেত চক্রবর্তীকে আরও ছমাস দার্জিলিংয়ের বিজনবাড়ি ব্লক অফিস এবং কালিম্পং ২ ব্লক অফিসে কাজ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশনামা দিল রাজ্য সরকার। এই নিয়ে সঙ্কেতবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে বাড়ি থেকে এতদূরে এইভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়ার অবশ্যই হতাশাজনক। কিন্তু, চাকরির শর্ত অনুযায়ী এই সরকারি সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া ছাড়া আর কিছুই করার নেই।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

কিন্তু, এই নিয়ে কার্যত ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন বিধানসভার বাম-পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী। তিনি এদিন জানান, আমি নিজে এ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছিলাম, তাঁর সঙ্গে কথা বলেছিলাম। মুখ্যমন্ত্রী তখন বলেন, আমি এক মাসের মধ্যে বিষয়টি দেখে নিচ্ছি! তবে ওঁরা যেন নবান্নে গোলমাল না করেন। এক মাস পেরিয়ে বছর ঘুরতে চলল, মুখ্যমন্ত্রী ওঁদের কলকাতায় ফেরানোর ব্যবস্থা তো করেনইনি উল্টে আবার নির্দেশিকা জারি করে বুঝিয়ে দিলেন সরকার আসলে বিরোধী স্বর দমন করতে চায়।

ক্ষোভের সঙ্গে সুজনবাবু জানান, কোনও গণতান্ত্রিক পরিমণ্ডলে এই সরকারের বিন্দুমাত্র আস্থা নেই! এদিকে এই প্রসঙ্গে সরকারি কর্মচারী পরিষদের রাজ্য আহ্বায়ক দেবাশীষ শীলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিস্ফোরকভাবে বলেন, এই রাজ্য সরকার সরকারি কর্মীদের ব্যাপারে বিন্দুমাত্র মানবিক নয়। দিনের পর দিন চলছে বঞ্চনা – আর এই নিয়ে কেউ প্রতিবাদ করলেই, চলছে ভয়ঙ্কর বদলি সন্ত্রাস। বিজয়বাবু বা সঙ্কেত চক্রবর্তীর সঙ্গে যা ঘটেছে তাও এই বদলি সন্ত্রাসের এক চরম নিদর্শন।

দেবাশীষবাবু আরও বলেন, তবে আমাদের সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে তো আরও ভয়ঙ্কর মনোভাব দেখাচ্ছে এই রাজ্য সরকার! একদা সিএমওতে কাজ করা সঞ্জীব পালকে বহু দূরে পাঠানো হয়েছে সার্ভিস ইউটিলাইজেশন দেখিয়ে। অন্যদিকে, সুবীর সাহাকে এত দূরবর্তী স্থানে সরাসরি বদলি করা হয়েছে যে তাঁর অফিস যেতে আসতে ৬-৭ ঘন্টা রাস্তাতেই কেটে যায়! ডিটেলমেন্টের ক্ষেত্রে তো তবু ফেরত আসার সুযোগ আছে। কিন্তু সঞ্জীব-সুবীর সহ অন্যান্যদের ক্ষেত্রে যে মনোভাব দেখানো হচ্ছে – তা আরও মারাত্মক!

অন্যদিকে, কার্যত একই মত, স্টিয়ারিং কমিটির রাজ্য সম্পাদক পার্থপ্রতিম দেরও। পার্থবাবু এদিন জানান, চাকরির শর্ত অনুযায়ী বদলি করা হচ্ছে। কিন্ত, বদলির প্রক্রিয়া দেখলেই বোঝা যাচ্ছে – সরকারের মনোভাব ঠিক কি! সরকারি বঞ্চনা বা দাবিদাওয়া নিয়ে যাঁরাই মুখ খুলছেন – বেছে বেছে তাদেরই বদলি করা হচ্ছে। সবথেকে বড় কথা, যাঁর বাড়ি সোনারপুর তাঁকে পাঠানো হচ্ছে পাহাড়ে, যাঁর বাড়ি হাওড়ার গ্রামাঞ্চলে তাঁকে বদলি করা হচ্ছে মুর্শিদাবাদের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। আসলে, সরকারের বশ্যতা স্বীকার না করা এবং দলদাসত্ব গ্রহন না করার কারনে এইভাবে সরকারি কর্মচারীদের পরিযায়ী হওয়ার আদেশ দিলো রাজ্য সরকার! এতেই স্পষ্ট এই রাজ্য সরকারের রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের প্রতি মনোভাব।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!