এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > সমান্তরাল প্রশাসন চালিয়ে সরকারের ঘুম উড়িয়ে দিয়েছেন রাজ্যপাল? ঘুরিয়ে মেনে নিলেন মমতা-পার্থ?

সমান্তরাল প্রশাসন চালিয়ে সরকারের ঘুম উড়িয়ে দিয়েছেন রাজ্যপাল? ঘুরিয়ে মেনে নিলেন মমতা-পার্থ?


রাজ্যের রাজ্যপাল হিসেবে জাগদীপ ধনকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই সরকারের সাথে তার দূরত্ব বাড়তে শুরু করেছে। বিভিন্ন ইস্যুতে রাজ্যের শাসকদলের সাথে দ্বৈরথ শুরু হয়েছে রাজভবনের প্রধান ব্যক্তির। যার সরাসরি প্রভাব রাজ্যের প্রশাসনিক বনাম সাংবিধানিক কাজকর্মে পড়ছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। বস্তুত, শীতকালীন অধিবেশন চলতে চলতে হঠাৎ বিধানসভার অধিবেশন দুইদিন স্থগিত হয়ে যাওয়া রাজ্যের ইতিহাসে এক নজিরবিহীন ঘটনা।

শাসকদলের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছিল, বিধানসভায় পাস হওয়া বিলে রাজভবনে পাঠানো সত্বেও রাজ্যপাল সেই বিল সই করে না পাঠানোতেই দুইদিন এই অধিবেশন মুলতবি করে দেওয়া হয়েছে। তবে আশ্চর্যজনকভাবে বৃহস্পতিবার অধিবেশন বন্ধ থাকলেও বিধানসভায় যাওয়ার কথা জানিয়ে দেন রাজ্যপাল জাগদীপ ধনকার। বিধানসভায় বন্ধ থাকা তিন নম্বর গেটে গিয়ে শোরগোল তুলে দেন তিনি। এইভাবে একজন সাংবিধানিক প্রধানকে বিধানসভায় ঢুকতে না-দেওয়ায় তিনি অপমানিত বোধ করছেন বলে জানান রাজ্যপাল জাগদীপ ধনকার।

কেন একজন সাংবিধানিক প্রধান হয়ে রাজ্যপাল বিধানসভায় ঢুকতে পারবেন না! তা নিয়ে শাসকদলের বিরুদ্ধে প্রশ্ন করে বিশেষজ্ঞরা। তবে এবার ফের রাজ্যপালের বিরুদ্ধে মুখ খুলে শোরগোল তুলে দিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। দুজনেই অভিযোগ করে জানালেন যে, রাজ্যপাল সমান্তরাল প্রশাসন চালানোর চেষ্টা করছেন। আর সরকারের দুই প্রধান ব্যাক্তি এইভাবে রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধানকে অপমান করায় রাজ্যে ভয়ানক সঙ্কট তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন একাংশ।

বস্তুত, এদিন যখন রাজ্যপাল বিধানসভার গেটে দাঁড়িয়ে শোরগোল তুলে দিয়েছেন, ঠিক তখনই কলকাতায় তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক অনুষ্ঠানের উদ্বোধনে নাম না করে সেই রাজ্যপালকে কটাক্ষ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যেখানে তিনি বলেন, “রাজ্যপাল বাংলায় সমান্তরাল প্রশাসন চালাতে চাইছেন। এরাজ্যে মহারাষ্ট্র মডেলে সমান্তরাল প্রশাসন চালাতে চাইলে তা সহজ হবে না। আমরা ছেড়ে কথা বলব না। লড়াই করতে হলে করব।” বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সম্প্রতি মহারাষ্ট্রে সংখ্যাগরিষ্ঠ না থাকা সত্ত্বেও ভোররাতে বিজেপির দেবেন্দ্র ফড়নবিশকে সরকার গঠন করিয়ে দিয়েছেন সেখানকার রাজ্যপাল।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

যা নিয়ে সেই রাজ্যপালের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিল বিরোধীরা। পরে অবশ্য বিজেপিকে সরিয়ে সেখানে সরকার গঠন করেছে শিবসেনা, এনসিপি এবং কংগ্রেস জোট। আর এই পরিস্থিতিতে মহারাষ্ট্রের রাজ্যপালের সঙ্গে বাংলার রাজ্যপালের তুলনা করে জাগদীপ ধনকারকে কটাক্ষ করলেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান। এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এই রাজ্যের রাজ্যপাল সমান্তরাল প্রশাসন চালাতে চাইছেন। রাজ্যের মানুষের প্রয়োজনে বিধানসভায় বিল আনতে চাইলে তার অনুমতি দেওয়া নিয়ে দেরি করায় অধিবেশন মুলতুবি রাখতে হয়। সারাদেশে সমান্তরাল প্রশাসন চলছে।”

তিনি আরও বলেন, “মহারাষ্ট্রের চেয়ে বাংলায় 100 গুণ বেশি করে সমান্তরাল প্রশাসন চালানোর চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু কিছুতেই তা মেনে নেওয়া হবে না।” অর্থাৎ রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান বুঝিয়ে দিতে চাইলেন, রাজ্যে সাংবিধানিক প্রধানের কাজে তিনি মোটেও খুশি নন। এদিকে একইভাবে এদিন বিধানসভার অধিবেশন বন্ধ থাকা সত্ত্বেও সাংবিধানিক প্রধান হিসেবে রাজ্যপালের সেখানে যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলতে দেখা গেছে তৃণমূলের মহাসচিব তথা শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। তিনি বলেন, “রাজ্যপাল যা করছেন তাতে তার পদের গরিমা তিনি নিজেই নষ্ট করছেন। তিনি চাইলে কালীঘাট, দক্ষিণেশ্বর যেতে পারতেন।”

তাঁর মতে, “বিধানসভা বন্ধ রয়েছে। সেখানে গেলেন কেন! বোঝা গেল না। তার পদটি সাংবিধানিক। কিন্তু তার আচরণ প্রশাসনিক প্রধানের মত। তিনি রাজনীতি করতে চাইলে করতেই পারেন। কিন্তু সাংবিধানিক পদে থেকে নির্বাচিত সরকারের কাজে হস্তক্ষেপ করা, তার পদের প্রতি অবমাননার শামিল।” বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারপক্ষ বুঝিয়ে দিতে চাইছে যে, তারা রাজ্যে সাংবিধানিক প্রধানের বিরুদ্ধে এই ভাবেই লড়ে যাবেন। অর্থাৎ তারা কোনোভাবেই সাংবিধানিক প্রধানের এহেন আচরণকে বরদাস্ত করবেন না।

তবে যদি সরকার পক্ষ নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকে এবং রাজ্যপালও যদি নিজের অবস্থানে অনড় থাকেন, তাহলে রাজ্যে যে বড়সড় সাংবিধানিক সংকট দেখা দিতে পারে, সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশ্লেষকেরা। তবে সরকারপক্ষ বিধানসভায় রাজ্যপালের যাওয়া নিয়ে কটাক্ষ করলেও তাতে খারাপ কিছু দেখছে না বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। এদিন এই প্রসঙ্গে বিধানসভার বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের আব্দুল মান্নান বলেন, “কোনো ব্যক্তি নন। রাজ্যপালের পদকে অসম্মান করা উচিত নয়।”

অন্যদিকে এই প্রসঙ্গে বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “রাজ্যপাল যাচ্ছেন শুনেই সরকার কেন পালিয়ে বেড়াবে, তা বোধগম্য নয়। তিনি নাকি বিধানসভার লাইব্রেরী দেখতে চেয়েছেন! তাদের আপত্তির কারণ কি তা জানা গেল না! যতদিন এই পদটি রয়েছে, ততদিন তাকে মান্যতা দেওয়া উচিত।” তবে বিরোধীরা তাদের মতামত পেশ করলেও, সরকার বনাম রাজ্যপালের সম্পর্কের তিক্ততা যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে তার প্রভাব জনসাধারণের কাজে পড়ে কিনা, সেদিকেই নজর থাকবে সকলের।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!