এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > 2021 এর ভোট বৈতরণী পার করতে কাকে চান তৃণমূল নেতা কর্মীরা? নাম নিয়ে দ্বন্দ্ব দলের অন্দরেই

2021 এর ভোট বৈতরণী পার করতে কাকে চান তৃণমূল নেতা কর্মীরা? নাম নিয়ে দ্বন্দ্ব দলের অন্দরেই

তৃণমূলে শেষ কথা বলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একথা কারোরই অজানা নয়। গত 2011 সালে দীর্ঘ 34 বছরের বাম শাসন হঠিয়ে লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে দলকে ক্ষমতার স্বাদ পাইয়েছেন তৃনমূল নেত্রী। তারপর রাজ্যের শাসন ক্ষমতায় বসে মুখ্যমন্ত্রী হয়ে প্রায় নয় বছর ধরে তিনি তার দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। আর এই দীর্ঘ নয় বছর ধরে মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলাতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অনেক চড়াই-উৎরাইয়ের সম্মুখীন হতে হয়েছে।

বিরোধীদের তরফ থেকে নানা দুর্নীতির অভিযোগ সহ নানা বিপর্যয় নিয়ে কার্যত নাস্তানাবুদ হয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সরকার বলে দাবি ভোট বিশেষজ্ঞদের। বর্তমানে করোনা ভাইরাসকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের বিরুদ্ধে আরও সরব হচ্ছে রাজ্যের বিরোধী দল ভারতীয় জনতা পার্টি। যত দিন যাচ্ছে, যত সময় যাচ্ছে, তত এগিয়ে আসছে 2021-এর বিধানসভা নির্বাচন। বিজেপি এই বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসকে কুপোকাত করে রাজ্যের ক্ষমতা দখল করতে উদ্যোগী।

এতদিন তৃণমূলের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শেষ কথা বললেও, এবার সেকেন্ড-ইন-কমান্ড-এর অঘোষিত দায়িত্বে রয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরই ভাইপো তথা যুব তৃণমূলের সর্বভারতীয় সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন জেলা নেতাদের বিভিন্ন বার্তা দিচ্ছেন, ঠিক তেমনই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেও গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিতে দেখা যাচ্ছে। তাই এমন পরিস্থিতিতে আগামী 2021 এর বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের বৈতরণী পার করার প্রধান দায়িত্বে কোন নেতা বা কোন নেত্রীকে দেখা যাবে, তা নিয়ে তৃণমূলের অন্দরেই তৈরি হয়েছে জল্পনা।

এক্ষেত্রে বেশ কিছু নাম সামনের সারিতে উঠে আসতে দেখা যাচ্ছে। এতদিন তৃণমূলের প্রথম এবং শেষ কথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থাকলেও, এবার পরিস্থিতির যে কিছুটা বদল হচ্ছে, সেই ব্যাপারে আঁচ করতে পারছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। সূত্রের খবর, 2021 এর বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের ভোট বৈতরণী পার করতে নেতাকর্মীদের ইচ্ছার তালিকায় রয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, শুভেন্দু অধিকারী, মহুয়া মৈত্র, প্রশান্ত কিশোরের মত ব্যক্তিত্বরা।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

বস্তুত, তৃণমূলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বনাম শুভেন্দু অধিকারীর অঘোষিত দ্বন্দ্ব নিয়ে গুঞ্জন দলের অন্দরেই বিরাজমান। যদিও প্রকাশ্যে শাসকদল সে কথা কোনোদিনই স্বীকার করে না। কিন্তু, কে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরের জায়গা দখল করবেন, তা নিয়ে নানা সময় নানা তরজার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে দুই শিবিরের সমর্থকদের মধ্যে। একাংশ বলছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বরাবরই চান তার ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর অবর্তমানে দায়িত্ব সামলান।

সেদিক থেকে এখন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দলের ব্যাটন নিজের হাতে তুলে নিতে শুরু করেছেন। অন্যদিকে শুভেন্দু অধিকারী দক্ষ সংগঠক হওয়ার সুবাদে এবং বিগত দিনে যেভাবে তিনি তৃণমূল কংগ্রেসকে সাফল্য পাইয়ে দিয়েছেন এবং যেভাবে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা তাকে ভালোবেসে ফেলেছেন, তাতে তাঁর সমর্থকরাও হাল ছাড়তে নারাজ বলে অভিমত রাজনৈতিক মহলের। যদিও একাংশ বলছেন, এখন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতেই দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া উচিত।

কেননা যত দিন যাচ্ছে, তত তার জনপ্রিয়তা বাড়ছে। তবে অন্য অংশের মতে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকে শুভেন্দু অধিকারীর অভিজ্ঞতা অনেক বেশি। তিনি দেখেছেন লড়াই-সংগ্রাম। কঠিন পথ অতিক্রম করেছেন শুভেন্দু অধিকারী। শুধু তাই নয়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিগত পঞ্চায়েত বা লোকসভা নির্বাচনে যেসকল জায়গাতে দল দায়িত্ব দিয়েছিল, সেখানেই কার্যত ভরাডুবি হয়েছে। অন্যদিকে, যে জায়গাগুলোতে তৃণমূলের বিপর্যয় হয়েছে, সেখানে শুভেন্দু অধিকারী দায়িত্ব নিয়ে ঘাসফুল ফুটিয়েছেন।

তাই 2021-এ তাকেই তৃণমূলের প্রধান সেনাপতি করা উচিত বলে দাবি করছেন শুভেন্দু অধিকারীর অনুগামীরা। তবে দলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বনাম শুভেন্দু অধিকারীর এই তুল্যমূল্য লড়াইয়ে অনেকে আবার নতুন মুখ হিসাবে কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ তথা সুবক্তা হিসেবে পরিচিত মহুয়া মৈত্রকেই অগ্রণী ভূমিকায় দেখতে চাইছেন। কেননা দেখা গেছে মহুয়া মৈত্র অন্য স্টাইলে নির্বাচন করেন‌। সেক্ষেত্রে বিজেপি কৃষ্ণনগরে ঘাসফুল ফোটানোর চেষ্টা করলেও নিজের মত করে স্ট্র্যাটেজি সাজিয়ে বিজেপিকে কুপোকাত করেছেন।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

শুধু তাই নয়, যেখানে তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, সেই জায়গায় অত্যন্ত দায়িত্বের সঙ্গে নিজের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি, যা পরবর্তীকালে উপনির্বাচনেও প্রমাণিত। সেদিক থেকে তার মত দক্ষ সাংগঠনিক নেত্রীকে 2021 এর বিধানসভা নির্বাচনে দায়িত্ব দিলে তিনি ভালোমতই দলকে সাফল্য পাইয়ে দেবেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে মহুয়া মৈত্রের অনুগামীরা তাঁর মধ্যে অতীত দিনের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরই ছায়া দেখতে পাচ্ছেন। সেই একই আগুনে ব্যক্তিত্ব, সেই একইরকম অগ্নিকন্যার তেজ।

তবে অনেকের আবার মত, বর্তমানে তৃণমূলের রণনীতিকারের দায়িত্বে রয়েছেন প্রশান্ত কিশোর। তার পরিকল্পনামাফিক পথ চলে লোকসভা নির্বাচনের পর তৃণমূল বিভিন্ন জায়গায় সাফল্য পেতে শুরু করেছে। তাই তাকে যদি 2021 এর বিধানসভা নির্বাচনে জেতার জন্য প্রধান সেনাপতি করা হয়, তাহলে দল অনেকটাই ভালো ফল করবে। তবে এক্ষেত্রে অনেকে আবার বিরোধিতাও করছেন। বিপক্ষের যুক্তি, প্রশান্ত কিশোরকে দলের রণনীতিকার করা হয়েছে‌। তাকে দলের দায়িত্ব দেওয়া হলে পরবর্তীতে সমস্যা হতে পারে। সেক্ষেত্রে তার কাছ থেকে পরামর্শ নিয়েই থেমে যাওয়া উচিত।

তৃণমূলের অনেকে কখনও শুভেন্দু অধিকারী, আবার কখনও বা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, কখনও প্রশান্ত কিশোর, আবার কখনও বা মহুয়া মৈত্রকে মুখ করে এগোনোর কথা বললেও – একশ্রেণীর তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীরা চাইছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই থাকুন। কেননা বিগত দিনে যে সমস্ত নির্বাচন হয়েছে প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে মানুষ তৃণমূলকে ভোট দিয়েছে শুধুমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ দেখে। অগ্নিকন্যা বা জননেত্রী হিসাবে মমতা বান্দ্যোপাধ্যায়ের এখনও বাংলার মানুষের কাছে যা গ্রহণযোগ্যতা, তার ধারেকাছেও পৌঁছানো সম্ভব নয় বঙ্গ রাজনীতির কারোর।

শুধু তৃণমূল কেন অন্য দল খুঁজেও তাঁর মাপের রাজনীতিবিদ এই মুহূর্তে বঙ্গ রাজনীতিতে নেই। তাঁর গুরুত্ব এতটাই যে, কেন্দ্রের শাসকদলের প্রথমশ্রেণীর নেতাদের সরাসরি তাঁকে আক্রমন করতে হয়। যা একটি আঞ্চলিক দলের প্রধানের কাছে কম গরিমার নয়! আর তাই তাঁকেই প্রধান সেনাপতি করে এগোলে – সব থেকে বেশি ডিভিডেন্ট পাবে তৃণমূল কংগ্রেস বলে মত দলের বেশিরভাগ কর্মীর। ফলে, অভিষেক-শুভেন্দু-মহুয়া-পিকে থাকুন সহযোগী হিসাবে, নির্বাচনটা করুন খোদ দলনেত্রীই।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

কিন্তু, অন্য একটি হিসাব বলছে – বয়স বাড়ছে দলনেত্রীর। একদিকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, অন্যদিকে তৃণমূলের সর্বাধিনায়িকা – চাপের পাহাড়টা নিতান্ত ছোট নয়। তার উপরে, গত ১০ বছর রাজ্যপাট সামলানোর পরে খুব স্বাভাবিক নিয়মেই তাঁর বিরুদ্ধে একটা প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার হাওয়া কাজ করবে। বিজেপি তাঁকেই আক্রমণের চূড়ান্ত নিশানা বানাবেন, তা কাটিয়ে উঠে তাঁকেই প্রচারের প্রধান মুখ হয়ে উঠতে হবে। এর উপরে যদি নির্বাচনের অঙ্কও তাঁকেই কষতে হয় – তা কি সত্যিই বাস্তবসম্মত হবে? এইসবই চিন্তা বাড়াচ্ছে ঘাসফুল শিবিরের নেতা-কর্মীদের।

আর 2021 এর বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের ভেতরে কাকে মুখ করা হবে, তা নিয়ে যখন নানা জল্পনা চলছে, তখন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতেই বিজেপি বেশী সুবিধে করে নেবে। শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘দ্বন্দ্ব’ যদি সাধারণ মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্যভাবে তুলে ধরা যায় – তা নিঃসন্দেহে এগিয়ে রাখবে বিজেপিকে। লোকসভা নির্বাচনেই, এইরকম বহু ‘দ্বন্দ্বের’ হাওয়া ঘাসফুলের পালের হাওয়া কেড়ে নিয়েছিল। উত্তরবঙ্গ থেকে তো কার্যত সাফ হয়ে গিয়েছিল রাজ্যের শাসকদল।

সুতরাং, বিধানসভা নির্বাচনে সেই তাস আরও সুনিপুনভাবে খেলা হবে – সে ব্যাপারে কার্যত নিশ্চিত নির্বাচনী বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে গেরুয়া শিবিরে এখন রয়েছেন মুকুল রায় – একদা তৃণমূলের ভোট ম্যানেজার, ঘাসফুল শিবিরের ভিতরের সব সমীকরণটা জানেন, চেনেন নিজের হাতের তালুর মত। তাই তৃণমূলকে যদি আগামী 2021 এর বিধানসভা নির্বাচনে সাফল্য পেতে হয়, তাহলে দরকার অনেক রাজনৈতিক জটিল অঙ্ক। আর তাই সেই কঠিন অঙ্কের সমাধান করার দায়িত্ব কাকে দেওয়া হয় – কে হন তৃণমূলের প্রধান সেনাপতি, কোন রণনীতি সামনে আসে – তার দিকেই নজর থাকবে রাজনৈতিক মহলের।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!