এখন পড়ছেন
হোম > অন্যান্য > আসছে রথযাত্রা! কে এই জগন্নাথদেব? কেন তাঁর বিগ্রহ এমন দেখতে? ভক্তদের জন্য তাঁর অজানা কথা!

আসছে রথযাত্রা! কে এই জগন্নাথদেব? কেন তাঁর বিগ্রহ এমন দেখতে? ভক্তদের জন্য তাঁর অজানা কথা!


প্রিয় বন্ধু বাংলা এক্সক্লুসিভ – হিন্দু ধর্মের অন্যতম প্রাণের উৎসব, অন্যতম মহা সমারোহে পালিত দিন রথযাত্রা আসছে। এ বছর আগামী মঙ্গলবার সেই রথযাত্রার দিন স্থির। কিন্তু করোনা আবহে স্বাভাবিকভাবেই সেই মহা ধুমধামে রথযাত্রা এ বছর পালন করা সম্ভব হবে না। জগন্নাথধাম পুরীর তাই এ বছর মন খারাপ। মন খারাপ জগন্নাথদেবের অগণিত ভক্তদেরও। কিন্তু তা বলে কি সেই দিনটি জগন্নাথদেবের স্মরণ নেবেন না তাঁর ভক্তরা?

সেই দিন হৃদয়ের অন্তরস্থল থেকেই মহাপ্রভু জগন্নাথদেব পূজিত হবেন। কিন্তু তার আগে জেনে নিন জগন্নাথদেবের বহু অজানা কথা। আচ্ছা, জানেন কি জগন্নাথদেবের মূর্তি এইরকম দেখতে কেন? কেন হয় রথযাত্রা? কিভাবে শুরু হল তা? এই নিয়ে অনেক মিথ আছে। তার মধ্যে সবথেকে জনপ্রিয় হল পদ্মপুরাণে বর্ণিত ইন্দ্রদ্যুম্ন ও বিদ্যাপতির কাহিনী। প্রথমেই জানিয়ে রাখা যাক জগন্নাথদেব আসলে ভগবান বিষ্ণুরই আরেক অবতার।

পুরানে বর্ণিত মালবরাজ (উড়িষ্যার রাজা) ইন্দ্রদ্যুম্ন ভগবান বিষ্ণুর পরম ভক্ত ছিলেন। তিনি পুরীতে বিষ্ণুর জন্য একটি নতুন মন্দির গঠন করেন, যার নাম দেন শ্রীক্ষেত্র (যা এখন জগন্নাথধাম নামে পরিচিত)। কিন্তু মন্দির তৈরী হয়ে গেলেও সেখানে কোনো বিগ্রহ ছিল না। একদিন হঠাৎ করেই কেউ একজন রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নকে বিষ্ণুর এক অবতার নীলমাধবের কথা বলেন। তিনি বিষ্ণুরই আরেক অবতার, কিন্তু তাঁকে নাকি কেউ কোনোদিন দেখে নি। তাই এই নীলমাধবের অধিষ্ঠান শ্রীক্ষেত্রে হলে, রাজার কীর্তি দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়বে।

কথাটি রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন-এর মনে ধরে। তিনি তাঁর সভাসদদের নীলমাধবের খোঁজে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু, অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাঁরা কেউই নীলমাধবের খোঁজ পেলেন না। ফলে, ব্যর্থ মনোরথ হয়ে সকলেই একে একে ফিরে এলেন। শুধু ফিরলেন না বিদ্যাপতি – ফিরবেন কি করে তিনি তো জঙ্গলের মধ্যে পথ হারিয়েছেন। কিন্তু, পথ হারানো বিদ্যাপতিকে উদ্ধার করলেন শবররাজ বিশ্ববসুর কন্যা ললিতা। খুব অল্পদিনের মধ্যেই দুজনের মধ্যে বন্ধুত্ব হয়ে গেল, যা প্রেম হয়ে পরিণয়ে পরিণত হতে বেশি সময় লাগল না।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

বিদ্যাপতি তখন নীলমাধবের কথা ভুলে ললিতার প্রেমে মগ্ন। কিন্তু, কিছুদিন পরেই তিনি লক্ষ্য করলেন বিশ্ববসু রোজই স্নানের পর গভীর জঙ্গলে কোথাও যান। ললিতাকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলেন, গভীর জঙ্গলে নীল পর্বতে অধিষ্ঠান করেন নীলমাধব, তাঁকেই রোজ পূজা করতে যান তাঁর পিতা। তিনি বুঝতে পারলেন, জঙ্গলে হারিয়ে যাওয়া, ললিতা, বিশ্ববসু – সবই কার্যত বিধির বিধান। ফলে, তিনি বিশ্ববসুর কাছে নীলমাধব দর্শনের অনুনয় নিয়ে গেলেন। প্রথমে তিনি রাজি না হলেও, শেষ পর্যন্ত বিদ্যাপতির অবরোধ তিনি ফেলতে পারলেন না।

নীলমাধবের দর্শন পেয়ে তৎক্ষণাৎ ভক্তি ভরে পূজা করলেন বিদ্যাপতি। আর তখনই আকাশ থেকে দৈববাণী ভেসে এলো, এতদিন আমি দীন-দুঃখীর পূজো নিয়েছি, এবার আমি মহা-উপাচারে রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নের পূজো নিতে চাই। নীলমাধব যখন স্বয়ং রাজা ইন্দ্রদুম্ন্যের পূজো নিতে চান, তখন কি আর দেরি করা যায়? খবর গেল রাজসভায়। আর রাজামশায় ছুটলেন জঙ্গলের মধ্যে নীলমাধবের দর্শনে। কিন্তু, কোথায় নীলমাধব? জঙ্গলে গিয়েও কিছুই পেলেন না রাজা ইন্দ্রদুম্ন্য। হতাশ রাজা যখন বসে পড়েছেন, তখন আবার ভেসে এল দৈববাণী।

জলদগম্ভীর কন্ঠে ইন্দ্রদুম্ন্যের উদ্দেশ্যে কেউ যেন বলে উঠলেন – সমুদ্রের জলে ভেসে আসবে যে কাঠ সেই কাষ্ঠখণ্ড থেকেই তৈরি হবে বিগ্রহ। মহানন্দে রাজা ফিরে গেলেন পুরী আর সবাইকে অবাক করে দিয়ে হঠাৎই একদিন সমুদ্রের জলে কাঠ ভেসে এলো। মহা ধুমধামে শুরু হলো বিগ্রহ তৈরির কাজ। কিন্তু, ভেসে আসা কাঠ এমনই শক্ত যে মূর্তি গড়া তো দূরে থাক, কেউ হাতুড়িই বসাতে পারল না কাঠে। ইন্দ্রদ্যুম্নের সেই অসহায় অবস্থা দেখে বুঝি এবার দুঃখ হলো ভগবানের। শিল্পীর রূপ ধরে স্বয়ং জগন্নাথ এসে দাঁড়ালেন রাজপ্রাসাদের দরজায়।

তিনি রাজাকে জানালেন, তিনি মূর্তি গড়ে দেবেন। কিন্তু তিনি একটি শর্ত রাখলেন। তিনি জানালেন, তাঁর মূর্তি গড়তে ৩ সপ্তাহ সময় লাগবে – আর এই নির্মাণের সময় কেউ সেই মূর্তি দেখতে পারবেন না। কিন্তু, রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নের রানী গুণ্ডিচা আর ধৈর্য্য রাখতে পারলেন না, একদিন ভেতর থেকে কোনো নির্মাণের শব্দ না পেয়ে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে পড়লেন। আর ভেতরে ঢুকেই তাঁর মূর্ছা যাবার অবস্থা! ভেতরে কোথাও কারিগরের দেখা নেই, রয়েছে শুধু তিনটি অর্ধসমাপ্ত মূর্তি। গোল গোল চোখ, গাত্র বর্ণসহ অসমাপ্ত মূর্তির না আছে হাত, না আছে পা!

অনুশোচনায় তখন তিলতিল করে শেষ হয়ে যাচ্ছেন রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন ও রানী গুণ্ডিচা। এ কি পাপ করে ফেললেন তাঁরা? ঈশ্বরের কি অভিশাপ এবার নেমে আসবে? অনুতাপে বুক ফেটে যেতে লাগল তাঁদের। কিন্তু একদিন রাজা-রানীর স্বপ্নে উপস্থিত হয়ে স্বয়ং জগন্নাথদেব জানিয়ে দেন – এমনটা আগে থেকেই ঠিক করা ছিল। তিনি ওই রূপেই পূজিত হতে চান। আর তাই আর কোনো বাধা রইল না। মহা ধুমধামে জগন্নাথদেবের ওই রূপেই পূজা শুরু করলেন মালবরাজ। আর এরপর থেকে এভাবেই ভক্তদের মধ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করেন জগন্নাথদেব।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!