২০১৯ এ কি নতুন রাজ্য সভাপতির নেতৃত্ত্বে লোকসভা নির্বাচনে যাবে বঙ্গ বিজেপি? বিশেষ খবর রাজ্য May 11, 2018 কিছুদিন আগে যখন শারীরিকভাবে গুরুতর অসুস্থ হয়ে নার্সিংহোমে ভর্তি হন বিজেপি রাজ্য সভাপতি তখন প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল, রাজ্য-রাজনীতির বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই অসুস্থ শরীর নিয়ে কতখানি দায়িত্ত্ব সামলাতে পারবেন তিনি? তাহলে কি বিজেপির রাজ্য সভাপতি পদে বদল আসন্ন? কিন্তু সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে, দিলীপবাবু জানিয়ে দেন তিনিই রাজ্য সভাপতি থাকছেন। এমনকি, বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ত্ব জনাইয়ে দেয় আগামী ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনও দিলীপ ঘোষের নেতৃত্ত্বে লড়বে বঙ্গ-বিজেপি। তখনকার মত ধামাচাপা পরে যায় ঘটনাটি। কিন্তু, বর্তমানে বিজেপির অন্দরমহলে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে অন্য সমীকরণের গল্প। আর তারফলেই প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে – ২০১৯ এ কি নতুন রাজ্য সভাপতির নেতৃত্ত্বে লোকসভা নির্বাচনে যাবে বঙ্গ বিজেপি? কিন্তু কি কারণে এই জল্পনা? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিজেপি নেতার কোথায় – কারণ এক নয় একাধিক – ১. দলীয় কর্মীরা বলছেন দিলীপবাবু ভালো করেছেন, কিন্তু ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসকে রুখে দিয়ে যদি বাংলা থেকে ২০-২২ টি আসন জয়ের স্বপ্ন দেখে শীর্ষ নেতৃত্ত্ব, তাহলে শুধু সভাপতি পদই নয়, তরুণ রক্তের প্রয়োজন পুরো সংগঠনেই। আর তাই পুরো সাংগঠনিক সংস্কারের আশু প্রয়োজন। ২. দিলীপবাবুর নেতৃত্ত্বে যতটা করা যেত, বর্তমানে সরকার বিরোধী হাওয়ায় তার থেকে বেশি হয়েছে। বিজেপি একেবারে কংগ্রেস-বামফ্রন্টকে টপকে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসে পড়েছে। কিন্তু প্রধান বিরোধী থেকে রাজ্যের শাসক হয়ে উঠতে গেলে, একজন ‘মুখের’ দরকার – মমতা ব্যানার্জির বিপরীতে দিলীপবাবু সেই মুখ হয়ে উঠছেন না। ৩. দিলীপবাবুর মুখ – হ্যাঁ বিভিন্ন সভা বা সাংবাদিক বৈঠকে দিলীপবাবু যে কথা বলছেন তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ‘উস্কানিমূলক’ হয়ে উঠছে। যার ফলে মধ্যবিত্ত ও শিক্ষিত সমাজের একটা বড় অংশের কাছে দলের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে না। ফলে, শীঘ্রই এমন একজনকে দরকার, যিনি মার্জিত কথা বলতে পারবেন – যার ফলে গেরুয়া শিবিরের সার্বিক গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে ৪. বর্তমানে বিজেপির যা ভোটব্যাঙ্ক, সেখান থেকে শাসকের আসনে বসতে গেলে, শাসকদলে একটা বড়সড় ভাঙন ধরানো অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু দিলীপবাবুর সেই সাংগঠনিক ক্ষমতা বা অন্যান্য বিরোধীদলের নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা নেই – যে তার ভরসাতে তাঁরা গেরুয়া শিবিরে আসবেন। ৫. শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন – প্রাক্তন বিজেপি নেতা অশোক সরকারের সঙ্গে করা মামলায় বেশ বেকায়দায় তিনি নিজে, মুখ পুড়ছে দলের। অধিকাংশ জায়গাতেই তৃণমূল কংগ্রেস সহ অন্যান্য দলের নেতারা বিজেপি কর্মীদের চেপে ধরছেন এই ইস্যুতে। দিলীপবাবু এখনো এমন কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমান আনতে পারেননি, যাতে করে তিনি এই বিষয়ে ক্লিনচিট পেতে পারেন। ৬. মুকুল রায় – মুখে তিনি বা মুকুল রায় নিজে বলুন, দুজনের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। কিন্তু দলীয় সমর্থকদের একাংশের বিশ্বাস মুকুল রায়ের সঙ্গে তাঁর তীব্র দ্বন্দ্ব রয়েছে, ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মুকুল রায় যেভাবে সংগঠন বাড়াতে চাইছেন, তা বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। শাসকদলকে ভাঙতে – মুকুল রায়কে ‘ফ্রি প্লেয়ার’ হিসাবে খেলতে দিতে হবে, যে কোনো কারণেই হোক তা বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে ৭. মাঝে মাঝেই তিনি নিজের দায় ঝেড়ে ফেলতে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাশ বৈজয়বর্গীয়র দিকে আঙ্গুল তুলেছেন প্রকাশ্যে, যা কেন্দ্রীয় নেতৃত্ত্ব ভালোভাবে নেননি, নজিরবিহীন ভাবে এইজন্য তাঁকে শোকজও করা হয় ৮. তিনি বরাবরের বিজেপি নেতা নন, এসেছেন গেরুয়া শিবিরের শাখা সংগঠন থেকে। সেখানে দলে নব্য ও সনাতনী বিজেপি শিবিরের বিভাজন হচ্ছে। যা মেটাতে তিনি ব্যর্থ, বরং তাতে মদত দেওয়ার জন্য তাঁর গোষ্ঠীর দিকে আঙ্গুল উঠছে। ৯. দল তাঁকেই লোকসভা প্রার্থী করার কথা ভাবছে মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে এবং গেরুয়া শিবিরের আভ্যন্তরীন হিসাবে এই আসনটি যথেষ্ট ‘সম্ভাবনাময়’, ফলে তাঁকে পুরোপুরি এই আসনের জন্য মনোনিবেশ করতে দেওয়া উচিত ১০. বিপ্লব দেব – হ্যাঁ ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী ‘ফ্যাক্টর’ হতে চলেছেন বঙ্গ-রাজনীতিতে। একদম আনকোরা মুখকে সামনে রেখে ত্রিপুরায় বাজিমাত হলেও, একের পর এক ‘বিপ্লব-বচনে’ দল অস্বস্তিতে। এই একই প্রবণতা বাংলাতেও দিলীপবাবুর ‘সৌজন্যে’ দেখা দিতে পারে, তৃণমূলের এই প্রচার জনসাধারণের কাছে বেশ গ্রহণযোগ্য হচ্ছে, ফলে ধাক্কা লাগছে গেরুয়া-শিবিরে। আপনার মতামত জানান -