এখন পড়ছেন
হোম > জাতীয় > এবার কি জাতপাত মুছে ফেলে অভিন্ন হিন্দুকে এক ছাতার তলায় আনার প্রক্রিয়া শুরু হবে?

এবার কি জাতপাত মুছে ফেলে অভিন্ন হিন্দুকে এক ছাতার তলায় আনার প্রক্রিয়া শুরু হবে?


বরাবরই দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল জাতীয় কংগ্রেস এবং ভারতীয় জনতা পার্টি দুজনের মাথার উপরই ‘পরিবারের’ নিয়ন্ত্রণ লক্ষ্য করা যায়। কংগ্রেসের উপরে গান্ধী পরিবার আর ভারতীয় জনতা পার্টির উপরে সঙ্ঘ পরিবার। যেমন গান্ধী পরিবারের ইচ্ছা ভিন্ন কিছু সম্ভব নয় জাতীয় কংগ্রেসে, ঠিক তেমনই সঙ্ঘ পরিবার না চাইলে ভারতীয় জনতা পার্টিও কিছু করতে পারে না বলে মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের।

তাই এক্ষেত্রে বারবারই সঙ্ঘের তরফে কোনো ‘সংবেদনশীল’ বিবৃতি এলেই অস্বস্তিতে পড়তে হয় ভারতীয় জনতা পার্টিকে। আরএসএসের ভারত থেকে উগ্র হিন্দুত্ববাদের মন্তব্য নতুন কিছু নয়। সঙ্ঘের জন্মের সময় থেকেই হিন্দু জাতীয়তাবাদ তাদের কর্মসূচির প্রধান লক্ষ্য। তাই বলে উগ্রবাদী সংগঠন বলে আখ্যা দিতে চায় না কেউই। দেশপ্রেমের কাজকর্মের জন্য অতীতে অনেক ভুতপূর্ব প্রধানমন্ত্রী বা শীর্ষস্তরের রাষ্ট্রনেতা সঙ্ঘের প্রশংসাও করেছে। এর মধ্যে লালবাহাদুর শাস্ত্রী বা সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের নাম উল্লেখযোগ্য।

কিন্তু ২০১৪ সালের পর থেকে নরেন্দ্র মোদি সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরই সঙ্ঘের আচরণ, কথোপকথন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেছে দেশের রাজনীতির ক্ষেত্রে। তাই সঙ্ঘের প্রধান মোহন ভাগবতের মন্তব্যকে যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে চায় রাজনৈতিক মহল। গতবার বিহারের ভোটের আগে শিক্ষা, চাকরি তপশিলি জাতি, উপজাতি, অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির সংরক্ষণ নীতি পর্যালোচনার কথা বলে বিজেপিকে অস্বস্তিতে ফেলেছিলেন সরসঙ্ঘের চালক মোহন ভাগবত।

আবার গতকালের একটি সভায় সেরকমই এক অস্বস্তিকর মন্তব্য করে বিজেপি দলের নেতা-নেত্রীদেরকে কিছুটা বেকায়দায় ফেলে দিলেন সঙ্ঘপ্রধান। গতকাল দিল্লিতে সংঘের আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মোহন ভাগবত বলেন, বিজেপি, ভারত সরকার ও সঙ্ঘ আলাদা। মোহন ভাগবতের মতে, এর সাথে বিজেপির মত আলাদা হতেই পারে। তাদের পাপ-পুণ্যের দায়িত্ব তাদের, সঙ্ঘ বাঁচাতে আসবে না। মোহন ভাগবতের এহেন মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে যখন সভায় উপস্থিত সকলের ঘোর কাটেনি, তখন আরও চাঁচাছোলা আক্রমন শানান তিনি।

এরপরই সংরক্ষণের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, “একবার এই প্রসঙ্গে বলেছিলাম, হইচই হয়েছে, কি এসে গিয়েছে তাতে! আমরা জনপ্রিয়তা চাই না। সংরক্ষণ নিয়ে কেউ জানতে চেয়েছেন বলে বলেছি। সংরক্ষণের পক্ষে এবং বিপক্ষে লোকেরা সম্প্রীতির পরিবেশে আলোচনা করলে এক মিনিটে সুরাহা হবে।” প্রসঙ্গত, ভারতবর্ষের রাজনীতিতে বরাবরই স্পর্শকাতর জায়গায় রয়েছে অনুগ্রসর শ্রেণীর জাতির সংরক্ষণ ব্যবস্থা। এর আগে বিশ্বনাথ প্রতাপ সিংহের সরকারের সময় মন্ডল কমিশন নিয়ে গোটা দেশে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

তাই বরাবরই রাজনৈতিক দলগুলি এই ব্যাপারটিকে যথেষ্ট সংবেদনশীলভাবে দেখেন‌। এদিন এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে বহুজন সমাজবাদী পার্টির মায়াবতী বলেন, “সংরক্ষণ মানবতাবাদি সাংবিধানিক ব্যবস্থা। এটিকে লঙ্ঘন করা অন্যায়। সঙ্ঘ সংরক্ষন বিরোধী মানসিকতা ত্যাগ করুক।” আবার এই বিষয়ে নিজের মন্তব্য দিতে গিয়ে কংগ্রেসের রণবীর সিং সুরজেওয়ালা বলেন, “সংবিধানে দেওয়া অধিকার কেড়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। বিজেপি-আরএসএস গায়ের জোরে সংবিধান পরিবর্তন করছে।”

অন্যদিকে, সকলের থেকে একধাপ এগিয়ে আরজেডি প্রবক্তা মনোজ ঝা বলেন, “আগুন নিয়ে খেলার চেষ্টা করছে সঙ্ঘ।” বস্তুত, বরাবরই বিরোধী দলগুলি অভিযোগ করে এসেছে, সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে বহুত্ববাদের রাজনীতিকে ধ্বংস করতে চাইছে ভারতীয় জনতা পার্টি। তাদের অভিযোগ, দলিত আদিবাসী গরিব সকলের ক্ষমতা খর্ব করে উচ্চবর্ণের দাপট প্রতিষ্ঠা করতে চায় বিজেপি। বিরোধীদের আরও বক্তব্য, ২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে হিন্দুদের জনসংখ্যা প্রায় ৮০% – যার মধ্যে তথাকথিত উচ্চবর্ণ ২৬%, দলিত ২২%, আদিবাসী ৯% এবং ওবিসি ৪৩%।

এই তথ্য তুলে ধরেই বিরোধীদের প্রশ্ন, সংরক্ষণ নীতি পর্যালোচনার কথা বলে আরএসএস কাদের সুবিধা করতে চাইছে? যদিও মোহন ভাগবতের ‘সংরক্ষন নীতি’ নিয়ে করা মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে কোনো মন্তব্য করতে চাননি কোনো শীর্ষ বিজেপি নেতা-নেত্রী। তবে ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বরাবরই বলে এসেছেন, ভারতবর্ষে সংরক্ষণের জন্য একটি জাত থাকা উচিত। সেটা হল গরীব জাতপাতের বিভেদ মিটিয়ে সকলকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করা। তাঁর বক্তব্যের মধ্যে বারবার উঠে এসেছে সঙ্ঘের সংরক্ষন নীতি নিয়ে তোলা আওয়াজের প্রতিধ্বনি বলেই মনে করা হচ্ছে।

অর্থাৎ, সঙ্ঘ ও প্রধানমন্ত্রীর লক্ষ্য সেই একই – সমস্ত জাতপাতের ঊর্ধ্বে উঠে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদেরকে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসা, বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, আর্থিকভাবে সমৃদ্ধ সম্ভ্রান্ত অথচ এসসি, এসটি বা ওবিসি তালিকায় নাম থাকার জন্য যদি কেউ সুযোগ সুবিধা পায়, তাতে দেশের কি লাভ! যদিও, পরবর্তীতে সন্ধ্যাবেলায় আরএসএস বিবৃতি দিয়ে বলে, সম্প্রীতির পরিবেশ নিয়ে আলোচনার গুরুত্ব বোঝাতেই সংরক্ষণের মতো সংবেদনশীল বিষয়ে কথা বলা হয়েছিল।

একই সঙ্গে জানানো হয়েছে, তপশিলি জাতি, জনজাতি, ওবিসি ও আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা শ্রেণীর সংরক্ষণকে পূর্ণ সমর্থন করে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ। কিন্তু সঙ্ঘের এই বিবৃতিকে হাতিয়ার করে রাত্রিবেলা টুইট করে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী লেখেন, “আলোচনা করে যদি সমস্যার সমাধান সম্ভব হত, তাহলে কাশ্মীর নিয়ে কেন আলোচনা করা হলো না! নাকি কাশ্মীর কোনো সমস্যাই নয়!” সবকিছু মিলিয়ে সঙ্ঘের মন্তব্য ও পাল্টা বিরোধীদের আক্রমণ এটাই বোঝাচ্ছে যে, সংরক্ষন নীতি নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হল বলে।

বিশেষ করে একের পর এক সাহসী পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে প্রধানমন্ত্রী তথা কেন্দ্র সরকারের যে ইমেজ তৈরি হয়েছে, তাতে করে সরাসরি রাজনৈতিকভাবে তাদের সঙ্গে লড়াই করার অবস্থায় নেই বিরোধীরা। এদিকে প্রধানমন্ত্রী স্পষ্টভাবেই জানিয়ে দিয়েছেন – গোটা দেশ থেকে গরিবী হঠানোই তাঁর পাখির চোখ। আর তাই সেই কাজে তিনি যে সঙ্ঘের সমর্থন পাবেন সেকথা মেনে নিচ্ছেন সকলেই। ফলে জল্পনা শুরু হয়েছে – তাহলে এবার কি জাতপাত মুছে ফেলে অভিন্ন হিন্দুকে এক ছাতার তলায় আনার প্রক্রিয়া শুরু হবে?

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!