শাসকদল পরোয়া করে না, তবুও মুকুল রায়ের গ্রেপ্তার হওয়াটা কি শুধুই সময়ের অপেক্ষা? বিশেষ খবর রাজ্য May 7, 2018 তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর মুকুল রায়কে নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটা শব্দও খরচ করেননি। অসমর্থিত সূত্রে দলীয় স্তরে বক্তব্য ছিল মুকুল রায় এমন কিছু নেতা নন যাঁর জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মুখ খুলতে হবে। প্রকাশ্যে মুকুলবাবুকে আক্রমন করতেন মূলত দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়, তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নাম নিয়ে নয়। কখনো ‘কাঁচরাপাড়ার কাঁচরা মাল’, কখনো ‘ক্যাচরা বাবু’ তো কখনো ‘চাটনি দাদু’, বাকি শীর্ষনেতারা মোটামুটি মুখে কুলুপই এঁটেছিলেন। কিন্তু ‘বিশ্ববাংলা’ ইস্যুতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে একাধিক অভিযোগ প্রকাশ্যে নিয়ে আসতেই তিনিও পার্থবাবুর দলে নাম লিখিয়ে ‘চাটনি দাদু’ বা ‘ভাগাড়ের মাল’ বলে আক্রমনে নেমে পড়েন মুকুল রায়কে। আর বহুদিন বাদে অবশেষে স্বয়ং দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক বেসরকারি বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিতে এসে নাম না করে মুকুল রায়কে ‘গদ্দার’ বললেন এবং মুকুল রায়ের নাম মুখে নিতেও ঘৃণা বোধ করেন জানিয়ে দিলেন। তা এহেন মুকুল রায়কে শাসকদলের শীর্ষনেতা তো বটেই, সামান্য সমর্থকও প্রকাশ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় আক্রমন করেন এই বলে যে তাঁর যাবতীয় রাজনৈতিক উত্থান সম্ভব হয়েছিল সামনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এক মহীরুহ ছিল বলে। কিন্তু বিজেপিতে গিয়ে তাঁর আর করার কিছু নেই, কিছুদিন বাদেই সেখান থেকেও ঘাড়ধাক্কা খেয়ে কাঁচরাপাড়ার বাড়িতে বসে ‘হরিনাম’ করতে হবে। মুকুল রায় মুখে যতই বলুন বাংলায় বিজেপির হাত ধরে তিনি ‘পরিবর্তনের পরিবর্তন’ ঘটাবেন, তৃণমূল নেতা-কর্মী-সমর্থকদের বিশ্বাস মুকুল রায় রাজনৈতিকভাবে শেষ। বঙ্গ রাজনীতিতে তিনি বিশেষ কিছুই করতে পারবেন না। কিন্তু মুকুল রায়ের নিজের ধারণা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে ‘ভয়’ পেতে শুরু করেছেন আর তাই রাজনৈতিকভাবে না পেরে একের পর এক ‘ঘৃণ্য’ পথে তাঁকে সারানোর চেষ্টা করছেন, তাঁর সঙ্গে না পেরে মুখ্যমন্ত্রীর আক্রমন নেমে আসছে তাঁর পরিবারের উপর। কি মুকুল রায়ের যুক্তি এই কথার পিছনে, আসুন একনজরে দেখে নেওয়া যাক – ১. ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে নম্রতা দত্ত নাম্নী এক তরুণী বিস্ফোরক কিছু অভিযোগ আনেন, তা নিয়ে থানা-পুলিশ-সিআইডি অনেক কিছুই হয়, বেশ কিছু ‘ব্যক্তিগত’ মুহূর্তের ছবি-ভিডিও ছড়িয়ে পরে সোশ্যাল মিডিয়ায়। এই সময়েই হঠাৎ করে অর্চনা মজুমদার নামে মুকুল রায় ঘনিষ্ঠ একজনের হুমকির অভিযোগ আনেন নম্রতা দত্ত, যিনি নাকি মুকুল রায়ের নাম করে ‘চাপ দিয়েছিলেন’ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে নিতে ২. সেই অর্চনা মজুমদারের সূত্রে মুকুল রায়কেও জিজ্ঞাসাবাদের পরিস্থিতি তৈরী হয়, কিন্তু মুকুলবাবুকে সেই ইস্যুতে ঠিক জেরার মুখে ফেলা যায় না। উল্টে ঋতব্রতবাবুর মুখে মুখ্যমন্ত্রীর জয়গান, পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম এবং সবশেষে নম্রতা দত্ত ঘটনা নিয়ে সিআইডি তদন্ত চাপা পরে যাওয়া ও ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাংবাদিক বৈঠক করে মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়নকে ভোট দেওয়ার আহ্বান ৩. কিছুদিন আগে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন মুকুল রায়ের রাজনৈতিক গুরু বলে পরিচিত মৃণালকান্তি সিংহরায়ের বোন, আর তারপরেই ৩ বছর আগের মৃণালবাবুর মৃত্যুকে ‘খুন’ অভিযোগ করে এবং তাতে সরাসরি মুকুল রায়ের নাম জড়িয়ে পুলিশে অভিযোগ করেন তিনি। যে মামলায় আপাতত ১৪ মে পর্যন্ত আগাম জামিনে আছেন মুকুল রায় ৪. আর সবশেষে, কিছুদিন আগে গ্রেপ্তার হন মুকুল রায়ের শ্যালক সৃজন রায়। অভিযোগ ২০১২ সালে যখন মুকুল রায় রেলমন্ত্রী ছিলেন তখন মুকুল রায়ের সামনে এবং নির্দেশে রেলে চাকরি দেওয়ার নামে লক্ষ লক্ষ টাকার ঘুষ নেন তিনি। আর এই মামলাতেও আদতে ‘টার্গেট’ সেই মুকুল রায়। এখানেও তিনি আদালতের কাছে আর্জি জানানোয় আদালত জানিয়েছে আগামী ১৬ মে পর্যন্ত মুকুলবাবুর বিরুদ্ধে কোনো কড়া পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না আর এরপরেই রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন, যদি রাজনৈতিক ভাবে মুকুল রায় শেষ হয়ে গিয়েই থাকেন, তিনি যদি বঙ্গ-রাজনীতির কোনো ফ্যাক্টরই না হন, তাহলে ৩ বছর বা ৬ বছরের পুরোনো মামলা খুঁচিয়ে তুলে তাঁকে পুলিশি হেফাজতে নিতে মরিয়া কেন রাজ্য পুলিশ? যে পুলিশ দপ্তরের মন্ত্রীর নাম আবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়! তাহলে সবটাই কি আশ্চর্য সমাপতন? এই ৬ বছর ধরেও তো পুলিশ মন্ত্রী ছিলেন সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই, তাহলে এতদিন কোনো পদক্ষেপ নয় কেন? তাহলে কি শাসকদলের কথামত বঙ্গ-রাজনীতিতে কোনো ‘ফ্যাক্টর’ না হওয়া সত্ত্বেও মুকুল রায়ের জেলে যাওয়াটা শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা? উত্তরের খোঁজে বঙ্গ-রাজনৈতিক মহল। আপনার মতামত জানান -