এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > বাংলায় কি এবার রাজ্য সরকারি কর্মচারী আন্দোলের ঝড় উঠতে চলেছে গেরুয়া শিবিরের হাত ধরে?

বাংলায় কি এবার রাজ্য সরকারি কর্মচারী আন্দোলের ঝড় উঠতে চলেছে গেরুয়া শিবিরের হাত ধরে?


এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্যতম মাথাব্যথার কারণ রাজ্য সরকারি কর্মচারী ও রাজ্যের শিক্ষকমহল। বকেয়া ডিএ এবং কেন্দ্রীয়হারে বেতন না পেয়ে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের একাংশ ইতিমধ্যেই আদালতের দ্বারস্থ। কলকাতা হাইকোর্টে সেই মামলায় সব পক্ষের শুনানি আপাতত শেষ, মামলাটি রায়দানের জন্য অপেক্ষায় আছে।

অন্যদিকে, রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষকদের একটা বড় অংশ আন্দোলনে নেমেছেন, এই দাবিতে যে, রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে কেন্দ্রের সব নিয়ম মেনে সেই অনুযায়ী শিক্ষাগত যোগ্যতা ও ট্রেনিং চাওয়া হচ্ছে, অথচ বেতনের ক্ষেত্রে তা অনেক কম। তাই এক দেশ, এক বেতন দাবিতে তাঁদের ক্ষোভের পারদও ক্রমশ উর্ধমুখী।

এছাড়াও, রাজ্যের সরকারি কর্মচারী বা শিক্ষক মানেই নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ত্ব। কিন্তু সেক্ষেত্রেও রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা মনে করছেন, রাজ্যের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই তাঁদের। তাই পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের হয়ে এই বিষয়ে দফায় দফায় আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন সরকারি কর্মচারী পরিষদের আহ্বায়ক দেবাশিস শীল।

আদালতে দাঁড়িয়ে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত জানিয়েছিলেন, রাজ্য সরকার পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে। আর তাঁর সেই সওয়ালের ভিত্তিতে আদালত পঞ্চায়েত নির্বাচন করতে আর বাধা দেয় না। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যায় নির্বাচন করতে গিয়ে প্রাণ যায় রায়গঞ্জের প্রিসাইডিং অফিসার রাজকুমার রায়ের। মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং এই ঘটনাকে দুর্ঘটনা বললেও, মানতে রাজি নয় সরকারি কর্মচারীদের একটা বৃহদংশ।

অর্থাৎ সবমিলিয়ে, রাজ্য সরকারের একের পর এক পদক্ষেপে নিজেদের ‘বঞ্চিত’ মনে করছেন রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা ও রাজ্যের শিক্ষককুল বলে এতদিন দাবি ও আন্দোলন করে এসেছেন দেবাশিসবাবুরা। এমনকি তিনি দাবি করেছিলেন, রাজ্য সরকারের এই বঞ্চনার বিরুদ্ধে মুখ খুললেই বিরোধী মনোভাবাপন্ন সরকারি কর্মীদের প্রত্যন্ত জায়গায় বদলি করে ‘সন্ত্রাস’ চালানো হচ্ছে।

আরো খবর পেতে চোখ রাখুন প্রিয়বন্ধু মিডিয়া-তে

এবার থেকে প্রিয় বন্ধুর খবর পড়া আরো সহজ, আমাদের সব খবর সারাদিন হাতের মুঠোয় পেতে যোগ দিন আমাদের হোয়াটস্যাপ গ্রূপে – ক্লিক করুন এই লিঙ্কে

এই প্রসঙ্গে দেবাশিসবাবু তুলে ধরেন তৃণমূল ছেড়ে সরকারি কর্মচারী পরিষদে যোগ দেওয়া লতিকা মন্ডল, ফরোয়ার্ড ব্লক প্রভাবিত সরকারি কর্মচারী সংগঠন স্টিয়ারিং কমিটির রাজ্য আহ্বায়ক সংকেত চক্রবর্তী, বা পিএসসি দুর্নীতি নিয়ে মুখ খোলা বিপুল রায়ের বদলির প্রসঙ্গ টেনে আনেন।

দেবাশিসবাবুর মতে সরকারি কর্মচারীদের ক্ষোভ যে কি জিনিস তা ত্রিপুরাতে টের পেয়েছিল বাম সরকার। পোস্টাল ব্যালট খুলতেই দেখা যায়, সেখানে কিভাবে বিজেপি এগিয়ে গিয়েছিল। আর দিনের পর দিন যা বাংলায় হচ্ছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে আগামী নির্বাচনগুলোতে ত্রিপুরার ‘রিপিট টেলিকাস্ট’ দেখতে পাওয়াটা শুধু সময়ের অপেক্ষা। দিনের পর দিন প্রতিটি পদে বঞ্চনা আর বদলি সন্ত্রাস দিয়ে মুখ বন্ধের চেষ্টার – অন্তিম পরিনাম বর্তমান সরকার শীঘ্রই দেখতে পাবে।

আর তাই রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে একের পর এক আন্দোলনে নেতৃত্ত্ব দিয়ে গেছেন সরকারি কর্মচারী পরিষদের আহ্বায়ক দেবাশিস শীল। কখনো মুখ্যমন্ত্রীর কথার পরিপ্রেক্ষিতে ‘ঘেউ ঘেউ’ ধরনা, তো কখনো সরকারি কর্মচারীদের নির্বাচনের সময় সুরক্ষার প্রশ্নে আদালতে মামলা, তো কখনো থালা হাতে রাজ্য সরকারের কাছে বকেয়া ডিএ ভিক্ষা, তো কখনো কলকাতা প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে বেতন কমিশনের চেয়ারম্যান অভিরূপ সরকারের পদত্যাগ দাবি।

আর তাঁর এই একের পর এক আন্দোলন যে রাজ্যের কোনায় কোনায় ক্রমশ সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে সাড়া ফেলছিল তা বোঝা যাচ্ছিল, যখন কলকাতার গন্ডি পেরিয়ে সুদূর উত্তরবঙ্গেও তিনি তাঁর সংগঠন সরকারি কর্মচারী পরিষদের শাখা খুলতে সমর্থ হন। কলকাতার মতোই উত্তরবঙ্গেও অন্যান্য দল থেকে তাঁর হাত ধরে সরকারি কর্মচারী পরিষদে যোগদেন একঝাঁক নেতা-কর্মী। এমনকি সম্প্রতি মন্মথ বিশ্বাসকে সঙ্গে নিয়ে তিনি বাংলার বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতেও সংগঠন বাড়ানোর কাজে মন দিয়েছেন।

আর দেবাশিসবাবুর এই ভাবনা-চিন্তা কি এবার কোথাও গিয়ে প্রবলভাবে সমর্থন করতে শুরু করে দিল গেরুয়া শিবির? প্রশ্নটা উঠছে, কেননা আগামী ১১ ই আগস্ট কলকাতায় অমিত শাহের সভা নিয়ে চূড়ান্ত ব্যস্ত বঙ্গ-বিজেপির নেতারা। কিন্তু তার আগেই জল্পনা বাড়িয়ে দেবাশিসবাবুদের সঙ্গে বৈঠকে বসলেন রাজ্যের বিজেপি পর্যবেক্ষক কৈলাশ বিজয়বর্গীয়। দীর্ঘ বৈঠকে এতদিনের আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি ও তার অগ্রগতি মন দিয়ে শুনেছেন তিনি বলে সূত্রের খবর।

সবথেকে বড়কথা সরকারি কর্মচারীদের পাশাপাশি গেরুয়া শিবিরের প্রতি এবার আস্থা আরো জোরদার করতে চলছেন প্রাক্তন আমলারা। কৈলাশ বিজয়বর্গীয়ের সঙ্গে দেবাশিস শীল সহ সরকারি কর্মচারী পরিষদের অন্যান্য শীর্ষনেতৃত্ত্বের এই বৈঠক মূল সংযোগ প্রাক্তন ডিজি সতীশ ভাণ্ডারীর মস্তিষ্কপ্রসূত। কলকাতার এক নামী হোটেলে এই বৈঠকের সেতুবন্ধনের মূল কাজটি করলেন প্রাক্তন এই আমলাই।

এমনিতেই আগামী লোকসভা নির্বাচনে বাংলাকে পাখির চোখ করে এগোতে চাইছে বিজেপি। অমিত শাহ ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন বাংলা থেকে অন্তত ২২ টি আসন তাঁর চায়। আর সেই ‘কাঙ্খিত’ ফলাফল পেতে হলে গেরুয়া শিবিরের বড় ভরসা হতে চলেছে রাজ্যের সরকারি কর্মচারী ও শিক্ষক মহলের ক্ষোভ। ফলে সবমিলিয়ে, রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের ধারণা, কৈলাশ বিজয়বর্গীয়র সাথে দেবাশিস শীলের এই বৈঠক বিশেষ অর্থবহ। আগামীদিনে, দেবাশিসবাবুদের হাত ধরে রাজ্য সরকারি কর্মীদের আন্দোলনের ঝড় ওঠা শুধু সময়ের অপেক্ষা।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!