এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > তিন উপনির্বাচনে হারের ফলে কি এবার পরিবর্তন আসছে রাজ্য বিজেপিতে? জানুন বিস্তারিত

তিন উপনির্বাচনে হারের ফলে কি এবার পরিবর্তন আসছে রাজ্য বিজেপিতে? জানুন বিস্তারিত


একদিন আগে পর্যন্ত খড়্গপুর এবং কালিয়াগঞ্জ বিধানসভা উপনির্বাচন নিজেদের জয়ের ব্যাপারে কার্যত 100% আত্মপ্রত্যয়ী ছিল ভারতীয় জনতা পার্টি। কিন্তু বৃহস্পতিবার দিন সকাল বেলায় ইভিএম খুলতেই সেই আত্মপ্রত্যয় কর্পূরের মত উবে যায় বিজেপির। যে তিনটি কেন্দ্রে বিধানসভা উপনির্বাচন হয়েছিল, সেই তিন কেন্দ্রের মধ্যে করিমপুর বিধানসভা কেন্দ্রে সেইভাবে আশা না করলেও বাকি দুই কেন্দ্রের প্রতি – ভারতীয় জনতা পার্টির টার্গেট ষোলআনা ছিল।

আবার মঙ্গলবার দিন দলের অন্যতম হেভিওয়েট নেতা মুকুল রায় দিল্লিতে গিয়ে তিনটি আসনেই জয়ের ব্যাপারে বিশ্বাসেরই কণ্ঠস্বর শুনিয়েছিলেন সর্বভারতীয় বিজেপি সভাপতি অমিত শাহকে। কিন্তু বৃহস্পতিবার গণনা শেষ হতেই দেখা যায়, জয়ের ব্যাপারে ভারতীয় জনতা পার্টির সব স্বপ্ন দিবাস্বপ্নে পরিণত হয়ে গেছে। কেউ কেউ মনে করছে, এনআরসি ইস্যুকে কাজে না লাগাতে অন্য নানান কারণে ভারতীয় জনতা পার্টিকে এই 3-0 গোলে হারতে হয়েছে।

কিন্তু বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে যেমন নেতৃত্ব স্থানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মত নেতৃত্ব ছাড়া রয়েছে, অপরদিকে ভারতীয় জনতা পার্টির কাছে বঙ্গ স্তরে সেইরকম কোনো নেতৃত্ব নেই। যার কারণে লোকসভা নির্বাচনে এগিয়ে থাকা সত্ত্বেও বিধানসভা উপনির্বাচনে পরাজয়ের মুখ দেখতে হল ভারতীয় জনতা পার্টিকে। লোকসভা নির্বাচনে দলের প্রকৃত মুখ ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহ। কিন্তু রাজ্য বিধানসভার ক্ষেত্রে কোনভাবেই সর্বভারতীয় নেতৃত্ব মুখ হতে পারে না।

সেক্ষেত্রে এই উপনির্বাচনের পরাজয় বিজেপি রাজ্য নেতৃত্বের যোগ্য সংগঠন পরিচালনার পরাজয় বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কেননা – বিজেপি রাজ্য নেতৃত্ত্বই মেনে নিচ্ছেন, এনআরসি নিয়ে তৃণমূলের ‘ভুল’ প্রচারই তাঁদের হারিয়ে দিয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, ভুল হোক বা ঠিক – তৃণমূল বিজেপির বিরোধিতা করবে, এটাই স্বাভাবিক। তৃণমূল তো আর ‘লুডো’ খেলতে বসে নি – করছে রাজনীতি। তাহলে যদি ‘ভুল’ প্রচার করেই তারা, বিজেপির পায়ের তলার মাটি কেড়ে নেয়, তাহলে বিজেপি নেতৃত্ত্ব কি করছিল?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বিজেপির একেবারে তৃণমূল স্তরের নেতার বক্তব্য – লোকসভা নির্বাচনের পরে আমাদের দলের অনেক নেতাই ভেবে নিয়েছিলেন, আমরা জিতেই গেছি। তাই বেশিরভাগ নেতাদেরই আর মাটিতে পা পড়ছিল না! আর বাকিরা নাকে তেল দিয়ে ঘুমোচ্ছিল! ফল যা হওয়ার তাই হয়েছে! আমরা যারা মুখে রক্ত তুলে খেতে লোকসভা নির্বাচনে দলকে সাফল্য এনে দিয়েছি, তারাই এখন ব্রাত্য হয়ে পড়েছি! কিন্তু, সেই অভিমানের দাম দল দেয় নি – ফলে, তৃণমূল এল, দেখল আর জয় করে নিল!

আর এখানেই রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন – রাজ্য সভাপতি হিসেবে দিলীপ ঘোষ উপনির্বাচনে তিনটি কেন্দ্রেই প্রচার করেছেন। কিন্তু এনআরসি ইস্যুকে যেভাবে তৃণমূল কংগ্রেস জনমানসের মধ্যে প্রচার করতে সক্ষম হয়েছে, দিলীপবাবুর নেতৃত্বে ভারতীয় জনতা পার্টি কিন্তু সেইভাবে এনআরসিকে নিজেদের পক্ষে আনতে সক্ষম হয়নি। এমনকি, তৃণমূল যে ক্রমশ এনআরসি আর দিদিকে বলো দিয়ে ঘর গুছিয়ে নিচ্ছে, তা টেরও পান নি তাঁরা! শুধু কবে তৃণমূলের পতন হবে আর কত ভোটে জিতবেন – সেইসব গল্পই দলকে শুনিয়ে গেছেন!

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

অন্যদিকে লক্ষ্য করার বিষয়, লোকসভা নির্বাচনে দলের নির্বাচনী কমিটির অধ্যক্ষ হিসেবে কাজ করেছিলেন বঙ্গ বিজেপির চাণক্য হিসেবে পরিচিত মুকুল রায়। তৃণমূল কংগ্রেসের ঘর ভাঙ্গিয়ে অন্য নেতাদেরকে ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগদান করানো প্রচারশৈলীতে কোথায় তৃণমূল কংগ্রেসকে কিভাবে আক্রমণ করতে হবে, সেই রণনীতি সাজানো সহ একাধিক বিষয়ে সরাসরি দেখাশোনা করেছিলেন মুকুলবাবু। কিন্তু এবারের বিধানসভা উপনির্বাচনে মুকুলবাবু প্রচারে থাকলেও ঠিক সেইভাবে ওতপ্রতভাবে নির্বাচন পরিচালনা করেনি।

দলের একাংশের মতে, তাঁকে নাকি সেইভাবে নির্বাচনের কাজে ঢুকতেই দেওয়া হয় নি! মনিরুল ইসলামকে বিজেপিতে আনার পরে, দলে বেনোজল ঢোকাচ্ছেন বলে তীব্র শোরগোল বাঁধিয়ে দেন দিলীপবাবু ও তাঁর অনুগামীরা! ফলে, মুকুল রায়ের হাত ধরে বিজেপির বৃদ্ধি তো বন্ধই, উল্টে যাঁদের এনেছিলেন তাঁরাও দিলীপবাবুদের কাছে ‘সম্মান’ না পেয়ে হয় সুরসুর করে ফিরে গেছেন তৃণমূলে! অথবা, ঘরে বসে গেছেন! আর তার ফলও বিজেপি হারে হারে টের পেল – ৫০ হাজারের আশেপাশে ছমাস আগে লিড থাকা দুই আসন তৃণমূলের হাতে তুলে দিয়ে!

সবথেকে বড় কথা, কেউ বলতে পারবেন না, তৃণমূল এই ভোট ‘অন্য কোনো উপায়ে’ জিতেছে! কেননা ভোট হয়েছে প্রায় সব বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে! এমনকি নির্বাচনের দিন বা পরের দিন ভোট লুঠের তেমন কোনো অভিযোগ পাওয়া যায় নি বিজেপির কাছে! তাহলে জনতার পাল্সটাই তো ধরতে পারেননি দিলীপবাবুরা! এমনকি জেতার ব্যাপারে আত্মপ্রত্যয়ী মুকুল রায় ভারতীয় জনতা পার্টির সভাপতিকে 3 এ 3 হবে জানিয়ে আসেন! দিলীপবাবুও ভোটের পরেই জানিয়ে দেন – কত মার্জিন হবে সেই নিয়েই নাকি বেশি চিন্তিত তিনি!

যদিও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নির্বাচনকে ঠিক প্রথম সারিতে দাঁড়িয়ে পরিচালনার সুযোগ পাননি মুকুলবাবু। তাঁকে কালিয়াগঞ্জ বা খড়্গপুর-সদরে সেইভাবে ঘেঁসতেও দেওয়া হয় নি! ঠেলে দেওয়া হয়েছিল করিমপুরের মত কঠিন আসনে – যদিও সেখানে বিজেপির ভোট কিছুটা মুখরক্ষা করেছেন তিনিই! আর এখানেই উঠে যাচ্ছে বঙ্গ-বিজেপির নেতৃত্বের মুন্সিয়ানা নিয়ে প্রশ্ন! লোকসভায় নরেন্দ্র মোদী যে ‘মুখ’ হয়ে উঠেছিলেন, বিধানসভার ক্ষেত্রে সেই সুবিধা পুরোপুরি তৃণমূলের ঘরে – মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৌজন্যে।

ফলে, লোকসভায় নরেন্দ্র মোদিকে দেখে মানুষ ভোট দিলেও, বিধানসভায় তৃণমূল নেত্রীর পাল্টা কোনো ‘মুখ’ না থাকতেই কুপোকাৎ! বিজেপির নেতৃত্ব যে ধরনের ‘আওয়াজ’ দিচ্ছেন, ‘হুঙ্কার’ ছাড়ছেন – তা শিক্ষিত বাঙালি সমাজ যে মেনে নিচ্ছে না, তা দিনের আলোর মত পরিষ্কার! আর তাই, লোকসভা ভোটে বিপুল মার্জিনে এগিয়ে থাকা সত্ত্বেও কালিয়াগঞ্জ এবং খড়্গপুর হাতছাড়া হয়ে গেল ভারতীয় জনতা পার্টির। করিমপুরেও লোকসভার থেকে লিড বাড়িয়ে নিয়েছে তৃণমূল। আর এইসব বসে বসে দেখেছেন ভারতীয় জনতা পার্টির রাজ্য নেতৃত্ব।

ফলে এখন থেকেই দলীয় কর্মী-সমর্থকদের মনে প্রশ্ন উঠে গেছে যে, যদি এখনই দলীয় নেতৃত্বের শৈলীতে কোনো রকম পরিবর্তন করতে সক্ষম না হয় গেরুয়া শিবির, সেক্ষেত্রে 2021 সালের বিধানসভা নির্বাচনে উপনির্বাচনের ফলের পুনরাবৃত্তি হতে চলেছে। আর গেরুয়া শিবিরের কর্মী-সমর্থকদের এই মতের সঙ্গে কার্যত একমত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। বিজেপি যদি নবান্নের কোন তলায় কে বসবেন আর কোন দপ্তর চালাবেন – এই স্বপ্ন থেকে বেরিয়ে বাস্তবের মাটিতে পা টা না রাখে, তাহলে এই স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে!

তবে যেভাবে ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্বের তরফ থেকে দলের বিজয়ী সাংসদদেরকে পরাজিত আসনগুলোতে সময় দিতে বলা হয়েছে এবং দিল্লি থেকে নেতৃত্বদেরকেও বাংলার বিভিন্ন অংশে প্রেরণ করার কথা বলা হয়েছে, তাতে করে মনে হচ্ছে, উপ-নির্বাচনের ফলের পরে রাজনীতির ক্ষেত্রেও ব্যাপক পরিবর্তন আনতে পারে ভারতীয় জনতা পার্টি। কেননা, দল যদি দলের তৃণমূল স্তরের পাল্স বুঝতে না পারে – তাহলে ভরাডুবি ছাড়া তো আর কিছুই জুটবে না কপালে! ফলে, আগামী দিনে ভারতীয় জনতা পার্টি তাদের নেতৃত্ব স্তরে কি পরিবর্তন আনে – সেদিকেই লক্ষ্য থাকবে সকলের।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!