এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > উত্তরবঙ্গ > স্থানীয়দের প্রার্থী করে ‘মাস্টারস্ট্রোক’ দিলো কি তৃণমূল? রাজনৈতিক মহলে তীব্র জল্পনা

স্থানীয়দের প্রার্থী করে ‘মাস্টারস্ট্রোক’ দিলো কি তৃণমূল? রাজনৈতিক মহলে তীব্র জল্পনা

রাজ্যে ইতিমধ্যে ঘোষণা হয়েছে তিনটি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের দিন‌। নির্বাচন কমিশন উপনির্বাচনের দিন ঘোষণা করেছে আগামী 25 শে নভেম্বর। এইদিন খড়গপুর, কালিয়াগঞ্জ ও করিমপুর বিধানসভায় ভোটগ্রহণ হবে এবং ফল প্রকাশ হবে আগামী 28 শে নভেম্বর। ইতিমধ্যেই এই উপনির্বাচনকে ঘিরে সাজো সাজো রব রাজ্যের প্রধান চার রাজনৈতিক শিবিরের অন্দরেই। রাজ্য-রাজনীতিতে তৃণমূল ও বিজেপির চাপে কোনঠাসা হয়ে পড়া বাম ও কংগ্রেস শিবির হাতে হাত মিলিয়ে এই নির্বাচনে লড়তে চলেছে।

অন্যদিকে, লোকসভার ভরাডুবি কাটিয়ে ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচি কতটা সফল হল? বা, কেন্দ্রের ভোট আর রাজ্যের ভোট যে আলাদা – সেই সব প্রমান করার অগ্নিপরীক্ষা তৃণমূল শিবিরের জন্য। এর পাশাপাশিই – লোকসভায় গেরুয়া ঝড় যে আদতে ফ্লুক ছিল না তা প্রমানে মরিয়া গেরুয়া শিবির। অনেক ঝাড়াই বাছাইয়ের পর অবশেষে সব দলের প্রার্থী তালিকা সামনে এসেছে। এখানে যে বিষয়টি সবথেকে বড় বলে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, তা হল – তৃণমূল কংগ্রেস এবার লোকসভা ভোটের বিপর্যয় থেকে শিক্ষা নিয়ে, পুরনো ও স্থানীয়দের নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে নিযুক্ত করল।

প্রসঙ্গত, তৃণমূলের তরফে খড়্গপুর-সদর কেন্দ্রে প্রার্থী হয়েছেন ঐ পুরসভার চেয়ারম্যান প্রদীপ সরকার। করিমপুর ও কালিয়াগঞ্জে তৃণমূল প্রার্থী হলেন যথাক্রমে বিমলেন্দু সিংহ রায় ও তপন দেব সিংহ। আর এই প্রার্থী চয়ন দেখে দীর্ঘদিন ধরে দল করা তৃণমূলের কর্মী সমর্থকরা প্রচন্ড খুশি বলে প্রাথমিকভাবে জানা যাচ্ছে। নাম প্রকাশে বহু কর্মীর কথায়, এতদিন উপনির্বাচনে হয় সেলিব্রিটি অথবা বহিরাগত হেভিওয়েট নেতা-নেত্রীদের টিকিট দেয় হত। কিন্তু দলের দুর্দিনে যাঁরা মাটি কামড়ে থেকে লড়াই করেছেন কোথাও গিয়ে যেন তাঁরা বঞ্চিত হতেন!

শাসকদলের ওই অংশের কথায়, কিন্তু এবারে দল সেইসব কিছু না করে, যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে দলের অনুগত সৈনিক হিসাবে কাজ করছেন, তাঁদেরই টিকিট দিয়েছে। ফলে, নতুন উদ্যমে মাঠে নেমে নির্বাচনে জেতার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়তে চাইছে দলকে ভালোবেসে দীর্ঘদিন ধরে ঘাম-রক্ত ঝরানো সৈনিকরা। তাঁদের মতে, লোকসভায় বিজেপি কিছুটা ভালো ফল করেছে, তার পিছনে কাজ করেছিল – পুরোনো কর্মীদের দলের প্রতি তীব্র অভিমান। কিন্তু, সেই ‘অভিমানকে’ দল যেভাবে সম্মান জানালো, তাতে করে এককথায় এটা ‘মাস্টারস্ট্রোক’ হতে চলেছে।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

প্রসঙ্গত, গত লোকসভা ভোটে খড়্গপুর কেন্দ্র থেকে জিতে সেখানকার বিধায়ক দিলীপ ঘোষ সাংসদ হয়ে যান। ফলে খড়্গপুর কেন্দ্রে উপনির্বাচন হতে চলেছে। রাজনৈতিক মহলের দাবি, এই কেন্দ্র একদা কংগ্রেসের জ্ঞান সিংহ সোহনপালের গড় হলেও, বর্তমানে এই কেন্দ্রে মূলত তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির প্রেস্টিজ ফাইট হতে চলেছে। বর্তমানে খড়্গপুরে দিলীপ ঘোষ ‘ফ্যাক্টরের’ জন্য গেরুয়া শিবিরের যা জোর, সেখানে বিজেপিকে হারাতে পারলেই, তৃণমূল কংগ্রেসের রাজনৈতিক জোর অনেকটাই বেড়ে যাবে।

আর তাই খড়গপুর কেন্দ্রের জন্য তৃণমূলের পক্ষ থেকে খড়্গপুর পুরসভার চেয়ারম্যান প্রদীপ সরকারকে প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করানো হয়েছে। স্থানীয় নেতৃত্ব এবং কাউন্সিলরদের একটা বৃহদাংশ তাঁকেই চেয়েছিলেন প্রার্থী হিসেবে। দলনেত্রী স্বয়ং কালীপুজোর ব্যস্ততার মধ্যেও, সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে এই কেন্দ্র নিয়ে সিদ্ধান্ত নেন। অন্যদিকে, করিমপুরের তৃণমূল প্রার্থী হলেন শিক্ষক তথা দলের বহু পুরনো কর্মী বিমলেন্দু সিংহ রায়। ইনি প্রায় তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকেই তৃণমূল করছেন।

এর পাশাপাশি কালিয়াগঞ্জ থেকে তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে দাঁড়াচ্ছেন তপন দেব সিংহ। বর্তমানে পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি তিনি। আগে তিনি ওই এলাকায় তৃণমূলের ব্লক সভাপতি ছিলেন। অর্থাৎ, তিন আসনেই স্থানীয় প্রার্থী তো বটেই, একই সঙ্গে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট প্রার্থী সঙ্গে দলের কতদিনের সম্পর্ক তা নিয়ে। প্রসঙ্গত, 2019 সালের লোকসভা ভোটে বিপর্যয়ের পর থেকেই দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ দিয়েছিলেন দলের পুরনো কর্মীদের ফিরিয়ে আনতে হবে। মনে করা হচ্ছে, সেই নির্দেশকে মাথায় রেখেই এবার উপনির্বাচনে প্রার্থী ঘোষণা হয়েছে।

আপাতত এই তিনটি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনকে ঘিরে রাজ্যের রাজনৈতিক দলগুলির ব্যস্ততা তুঙ্গে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের দাবি, এই তিনটে বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন এযাবৎকালের মধ্যে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। এই নির্বাচনে মনে করা হচ্ছে, 2021 এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে জয়ী রাজনৈতিক দলের জোর অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে প্রার্থী ঘোষণার পর, তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্ব খুশি। এখন দেখার, সেই খুশির রেশ ভোটবাক্স পর্যন্ত টেনে নিয়ে গিয়ে শাসকদল শেষপর্যন্ত বাজিমাত করতে পারে কিনা। নাকি, এরপরেই রাজ্যে গেরুয়া ঝড় দেখা যাবে? নাকি ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দেবে বাম-কং জোট? সেদিকেই আপাতত নজর সবার।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!