প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট- গতকাল বিহারের রেকর্ড জয়ে রীতিমত উজ্জীবিত বিজেপি। এখন তাদের নেতাদের গলায় একটাই কথা শোনা যাচ্ছে যে, অঙ্গ এবং কলিঙ্গ দখল হয়ে গেছে। এবার তাদের টার্গেট বঙ্গ। অর্থাৎ বাংলায় যেভাবেই হোক, এবার তারা ক্ষমতা দখল করার ব্যাপারে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাপাবে। কিন্তু বিহারের এই রেকর্ড জয়ের পরেই বিজেপি নেতারা যখন বাংলা দখল করার কথা বলছেন, তখন তাকে গুরুত্বই দিতে রাজি নয় পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। তারা দাবি করছে, বাংলা এবং বিহার এক নয়। এখানে আবারও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জয়লাভ করবেন। তবে যতই তৃণমূলের নেতারা এত বড় বড় কথা বলুন না কেন, গণনার এক ঘন্টা আগে পর্যন্ত তেজস্বী যাদবের মুখেও শোনা গিয়েছিল, তারা নাকি সরকার গঠন করবেন। ফলে তৃণমূল যে এখন মানুষের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে এই রকম অনেক বড় বড় কথা বলবেন, তা রাজনীতির স্বাভাবিক অংক। তবে তাতে প্রভাবিত না হয়ে বিহারের যে ফলাফল হয়েছে, তার প্রভাব যে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে পড়বে এবং কেন তৃণমূল কংগ্রেস এবারের ২০২৬ এর নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিদায় নেবে, তার বড় ফ্যাক্টর সামনে আনলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
গতকাল গোটা দেশের নজর ছিল বিহারের নির্বাচনী ফলাফলের দিকে। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গবাসী হিসেবে যারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে এখানে চিৎকার করছেন, তাদের নজর ছিল যে, বিহারের নির্বাচনী ফলাফল যদি বিজেপির পক্ষে যায়, তাহলে বিজেপি এবার বাংলা নিয়ে আরও সিরিয়াস হবে এবং বাংলায় সরকার গঠন করতে তারা সমস্ত কৌশল তৈরি করবেন। কিন্তু বিহারে তো বিজেপি রেকর্ড মার্জিনে জয়লাভ করেছে। এনডিএ ক্ষমতা দখল করছে, এটা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে। তবে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূলের নেতারা দাবি করছেন, বিহারের সঙ্গে বাংলার কোনো সম্পর্ক নেই, এখানে আবারও বিজেপির পরাজয় নিশ্চিত। কিন্তু এই ব্যাপারে কি ভাবছেন বঙ্গ বিজেপির নেতারা? বিহারের নির্বাচনের ফলাফলের প্রভাব কি কোনোভাবেই বাংলায় পড়বে না! নাকি কিভাবে কি করতে হবে, তার সমস্ত স্ট্রাটেজি তারা তৈরি করে রেখেছেন? শুভেন্দু অধিকারী কিন্তু নিশ্চিত যে, পশ্চিমবঙ্গে ২০২৬ এ একটা বড় পরিবর্তন হতে চলেছে। আর সেই পরিবর্তনের অন্যতম কারণ হিসেবে এসআইআরকেই সামনে এনেছেন তিনি। বিহারে প্রথম গোটা দেশের মধ্যে এই নির্বাচনের আগে এসআইআর হয়েছে এবং তার মধ্যে দিয়ে বহু অবৈধ ভোটারের নাম বাদ দিয়েছে। যার ফলে ভোটের শতাংশ অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রেও যেভাবে এসআইআর শুরু হয়েছে, তাতে বিহারে যত মানুষের নাম বাদ গেছে এবং অবৈধ ভোটারদের নাম বাদ গেছে, ঠিক একইভাবে পশ্চিমবঙ্গেও তার বেশি অবৈধ ভোটারদের নাম বাদ যাবে। আর সেই প্রক্রিয়া সমাপ্ত হলে বিজেপির পক্ষে বাংলা দখল করা কোনো সমস্যাই হবে না বলে মনে করছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা।
এদিন বিহারের রেকর্ড জয়ে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে তার কি প্রভাব পড়বে, সেই বিষয় নিয়ে শুভেন্দু অধিকারীর কাছে জানতে চান সাংবাদিকরা। আর সেই ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা বলেন, “বিহারের নির্বাচনে এই রেকর্ড জয়ের প্রভাব তো সরাসরি পশ্চিমবঙ্গে পড়বে, এটা নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই। আর সব থেকে বড় কথা, এসআইআরের পরে প্রথম নির্বাচন। এসআইআর থেকে বিহারে কমবেশি ৫০ লক্ষ বা তার আশেপাশে ভোটার বাদ গেছে। মৃত ভোটার, ভুয়ো ভোটার, ডবল, ট্রিপল এন্ট্রি, অনেকে বাদ গিয়েছে, পরিস্কার হয়েছে। সব মিলিয়ে এসআইআরের পরে নির্বাচনে ভোট শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনকি জনাদেশের বিপুল সমর্থন নরেন্দ্র মোদিজীর ওপর ভরসা রেখেছেন এবং নীতীশ কুমারের সুশাসনের ওপর আস্থা রেখেছেন।” অর্থাৎ একদিকে রাষ্ট্রবাদ, একদিকে দেশের উন্নয়নকে হাতিয়ার করে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসার একটা প্রতিশ্রুতি বিজেপি ২৬ এর নির্বাচনে সামনে আনবে। পাশাপাশি এতদিন যে সমস্ত অবৈধ ভোটারের ভোট পশ্চিমবঙ্গে পড়ে যেত, এসআইআর হলে সেই প্রবণতা বন্ধ হবে এবং তার ফলে যে যার ভোট দিতে পারবে, এবং সেটা যদি হয়, তাহলে তৃণমূলের ক্ষমতায় আসার রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে বলেই আশাবাদী শুভেন্দু অধিকারী।
