Site icon প্রিয় বন্ধু মিডিয়া

কি অবস্থা, গুলশান কলোনিতে গুন্ডারাজ! তৃণমূলের বিরুদ্ধেই মিছিল তৃণমূলের?

প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট-
কলকাতা শহরে আতঙ্কের আর এক নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে এখন গুলশান কলোনি। যেভাবে সেখানে সমাজবিরোধীদের আখড়া তৈরি হয়েছে, যেভাবে কিছু মানুষ এসে সেখানে ঘাঁটি গেড়েছে এবং প্রতিনিয়ত সেই এলাকা অশান্ত হচ্ছে, তাতে শুধু সাধারণ মানুষ নয়, তৃণমূলের মধ্যেও অনেকে আছেন, যারা রীতিমত আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। সম্প্রতি সেই এলাকা আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। যেখানে প্রথমে গুলি চালানোর পর আবার বোমাবাজি হয়েছে মাঝরাতে। আর তারপর থেকেই প্রশ্ন উঠছে যে, কারা এই ঘটনা ঘটাচ্ছে? এই ঘটনার পেছনে যিনি মূল জড়িত, সেই মিনি ফিরোজ বিভিন্ন রিল বানালেও, এখনও পর্যন্ত পুলিশ নাকি তাকে ধরতে পারছে না। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন যে, পুলিশ ধরতে পারছে না, নাকি ইচ্ছাকৃতভাবেই তাকে ধরছে না! কারন তার মাথায় বড় কোনো ব্যক্তির হাত রয়েছে! বিরোধীদের বক্তব্য, টাকার ভাগ নিয়ে এবং এলাকা দখল নিয়েই মূলত তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সমস্যা। যার ফলে সাধারণ মানুষকে স্যাক্রিফাইস করতে হচ্ছে।

এদিকে বিরোধীরা যখন এই সমস্ত কথা বলছে, তখন এক আশ্চর্য চিত্র দেখা গেল সেই গুলশান কলোনিতেই। যেখানে ১০৮ নম্বর ওয়ার্ড তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বেশ কিছু মানুষ তৃণমূলের পতাকা হাতে মাঠে নামলেন। তাদের বক্তব্য যে, অবিলম্বে গুলশান কলোনীকে শান্ত করতে হবে। এক্ষেত্রে যারা মাঝেমধ্যেই সমাজ বিরোধী হয়ে এই গুলশান কলোনিতে অশান্তি লাগাচ্ছে, তাদের গ্রেপ্তার করতে হবে পুলিশ প্রশাসনকে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যারা মাঠে নামছে তারাও তৃণমূল। আর যাদের বিরুদ্ধে তারা অভিযোগ তুলছে, তারাও তো তৃণমূল! কেননা যারা মিছিল করছে, তাদের হাতে তৃণমূলের পতাকা পর্যন্ত দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। এমনকি তাদের বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে একটা বিষয় স্পষ্ট যে, তারা তৃণমূলের কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষের অনুগামী। আবার একটু অন্য মহলে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে যে, এখানে একদিকে সুশান্ত ঘোষ রয়েছেন, আর অন্যদিকে তৃণমূল বিধায়ক জাভেদ খানের গোষ্ঠী রয়েছে। আর এই দুই গোষ্ঠীর গন্ডগোলের ফলেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে গুলশান কলোনী এলাকা। স্বাভাবিকভাবেই সুশান্ত ঘোষের অনুগামীরাই এদিন গুলশান কলোনীকে শান্ত করার দাবি জানিয়ে তৃণমূলের পতাকা হাতে নিয়ে তাহলে কি তৃণমূলের বিধায়ক জাভেদ খান এবং তার অনুগামীদের বিরুদ্ধেই পথে নামলেন? লড়াইটা কি তাহলে তৃণমূলের সঙ্গে তৃণমূলের হয়ে গেল?

বিরোধীদের দাবি, যারা পথে নামছে তারাও তৃণমূল, আর যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে তারাও তৃণমূল। আসলে কলকাতা শহর এখন আতঙ্ক নগরীর আরও এক নাম হয়ে গিয়েছে। প্রথম প্রশ্ন, এই গুলশান কলোনি কারা তৈরি করলো? এখানে যারা অবৈধভাবে বসবাস করছে, তাদের বাড়িতে বিদ্যুৎ, জলের ব্যবস্থা পৌঁছে দিল কারা? কারা কলকাতাকে সমাজবিরোধীদের আতুড়ঘর বানানোর চেষ্টা করছে? যারা রাজ্যের ক্ষমতায় রয়েছে, তাদের হাতে রয়েছেই কলকাতা পৌরসভা। তারাই এই গুলশান কলোনিকে আতংকের আরও এক চেহারা দিয়ে দিয়েছে। যার ফলে এখন এলাকা দখল, টাকার ভাগ নিয়ে তৃণমূলের মধ্যেই সমস্যা তৈরি হয়েছে। আর তৃণমূলেরই একটা গোষ্ঠী আরও একটা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে পথে নামছে। তাই সবার আগে তৃণমূল নামক দলটাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে হবে। তাদেরকে না সরালে টাকার বখরা এবং এলাকা দখলের সমস্যা নিয়ে গুলশান কলোনির এই হিংসা আরও বৃদ্ধি পাবে বলেই দাবি করছে বিরোধীরা।

আর এখানেই বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, সাধারন মানুষ তো শান্তি চান। যারা এদিন তৃণমূলের এক পক্ষের মিছিলে উপস্থিত ছিলেন, তারাও শান্তির পক্ষেই রাস্তায় নেমেছিলেন। তারা কোনো দল দেখেন না, তারা কোনো মত দেখেন না। যারা এখানকার বৈধ ভোটার, তারা চান শান্তিপূর্ণভাবে তারা এলাকায় থাকবেন। সেখানে কলকাতার মত শহরকে যারা প্রতিনিয়ত উত্তপ্ত করে তুলছে নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য, কেন তাদেরকে গ্রেফতার করছে না পুলিশ প্রশাসন? যখন সমস্ত কিছু হাতের বাইরে বেরিয়ে যাবে, যখন এই সমস্ত সমাজ বিরোধীরা আরও বেশি প্রশ্রয় পেয়ে যাবে এবং পুলিশকেই চ্যালেঞ্জ জানাবে, তখন তাকে সামাল দেওয়ার মত ক্ষমতা এই রাজ্যের প্রশাসনের থাকবে তো? তাই নিজেদের ক্ষমতাকে আঁকড়ে রাখতে গিয়ে নিজেদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব যেভাবে ফুলেঁফেপে বেড়ে উঠছে, তাতে আখেরে কিন্তু ক্ষতি হচ্ছে সাধারণ মানুষের। যা ভবিষ্যতে তৃণমূলের ভোটব্যাংকে বড়সড় ফাটল ধরাতে পারে। ফলে সময় থাকতে থাকতেই কলকাতায় যে আতঙ্ক নগরী হিসেবে পরিণত হয়েছে গুলশান কলোনি, তাকে শান্ত করার জন্য কোনো রং না দেখে, মূল অভিযুক্তদের ঘাড় ধরে জেলের ভেতরে ঢোকানো উচিত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসনের। আর তাহলেই প্রমাণ হবে যে, তিনি রাজধর্ম পালন করছেন। অন্তত তেমনটাই দাবি বিশেষজ্ঞদের।

Exit mobile version