Site icon প্রিয় বন্ধু মিডিয়া

সর্বনাশ, এবার স্বয়ং মমতাকেই কটুক্তি তৃণমূল নেতার? নেত্রীকে মানছেন না দলীয় পদাধিকারী!

প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট – তৃণমূলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব যে ভয়ংকর পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে, তাতে কারও সম্মান বলতে কিছু নেই। যতই বড় নেতা হোক না কেন, এখন কর্মীরা যে পর্যায়ে পৌঁছে যাচ্ছেন, তাতে একে অপরকে সম্মান পর্যন্ত করছেন না। উল্টে প্রকাশ্যে যেভাবে তারা একে অপরকে গালিগালাজ পর্যন্ত শুরু করে দিয়েছেন, তাতে বোঝাই যাচ্ছে যে, ২০২৬ এর নির্বাচনে বিজেপিকে আটকানো অনেক পরের কথা। তৃণমূল আগে নিজের দল গোছানোর চেষ্টা করুক। এবার প্রকাশ্যেই তৃণমূল নেত্রীকে গালিগালাজ করার অভিযোগ উঠলো দলেরই এক পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে। তবে সেই তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন। তিনি হলেন, রাজ্যসভার তৃণমূল সাংসদ মতুয়া পরিবারের সদস্য মমতাবালা ঠাকুর। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই রীতিমত হুলস্থুল কাণ্ড বেঁধে গিয়েছে তৃণমূলে।

 

জানা গিয়েছে, সোমবার উত্তর ২৪ পরগনার গোবরডাঙ্গায় তৃণমূলের একুশে জুলাই নিয়ে একটি প্রস্তুতি সভা ছিল। যেখানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে সোচ্চার হন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর। ব্যারাকপুরের সাংসদ পার্থ ভৌমিককেও আক্রমণ করেন তিনি। আর সেখানেই মমতাবালা ঠাকুরকে কটুক্তি করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে গোপালনগর চৌবেরিয়া ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের উপপ্রধান সুনীল সরকারের বিরুদ্ধে। মমতাবালা ঠাকুরের অনুগামীদের অভিযোগ, এই উপপ্রধান শুধু তৃণমূল সাংসদ মমতাবালা ঠাকুরকেই আক্রমণ করেননি। তিনি মমতাবালা ঠাকুরকে কদর্য ভাষায় আক্রমণ করে গোটা মতুয়া সমাজকেই অপমান করেছেন। তাই তাকে অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে।

 

যদিও বা তিনি কোনো কদর্য ভাষায় কাউকে আক্রমণ করেননি বলেই দাবি করছেন তৃণমূলের উপপ্রধান সুনীল সরকার। তিনি বলেন, “মমতাবালা ঠাকুর বক্তব্য রাখতে গিয়ে নানা কথার মধ্যে দিয়ে জেলা সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস ও পার্থ ভৌমিককে আক্রমণ করেছিলেন। আমি শুধু প্রতিবাদ করে বলেছি, আপনাদের ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের বৈঠকে এটা আলোচনা করবেন। আমি যদি ওনাকে গালাগাল করে থাকি, সেটা প্রমাণ করুক। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।” অনেকের প্রশ্ন, দল কোথায় যাচ্ছে? তৃণমূল নাকি সঙ্ঘবদ্ধ! তারা নাকি একত্রিত হয়ে মানুষের কাজ করবে! তাহলে সামনে ২৬ এর মত লড়াই, তার আগে প্রকাশ্যে একজন সাংসদকে কেন এইভাবে দলের একজন উপপ্রধান আক্রমণ করবেন, সেটা সামনে এসে যাওয়ার কারণে কি তৃণমূলের অস্বস্তি বাড়ছে না? এই ব্যাপারে বনগাঁ জেলা তৃণমূলের সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস বলেন, “একুশে জুলাইয়ের প্রস্তুতি সভায় চেয়ারম্যান পার্থ ভৌমিক সম্পর্কে কিছু কথা বলায় কর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এটি তেমন গুরুতর কোনো বিষয় নয়।”

 

যদিও বা গোটা বিষয় নিয়ে তৃণমূলের অস্বস্তি বাড়িয়ে দিচ্ছে বিজেপি। মতুয়া পরিবারের সদস্য তথা বিজেপি সাংসদ এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর বলেন, “ওদের নেত্রী হরিচাঁদ গুরুচাঁদ নিয়ে যা বলেছেন, তাতে ছোট নেতা কি বলবেন? মমতাবালা ঠাকুর হাঁড়িকাঠে গলা দিয়েছেন। কি হবে বুঝতে পারছেন না। ওর লজ্জা, ঘৃণা, ভয় কিছুই নেই।” বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দলের জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে যদি কোনো উপপ্রধান এইভাবে কথা বলেন এবং সেটা যদি প্রকাশ্যে চলে আসে, তাহলে তো বোঝাই যাচ্ছে যে, তৃণমূলের কোন্দল কতটা ভয়াবহ জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে! যেভাবে গোবরডাঙ্গায় একুশে জুলাইয়ের প্রস্তুতি সভাকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের এক সাংসদকে কটুক্তি করার অভিযোগ উঠলো এক উপপ্রধানের বিরুদ্ধে এবং সেই ঘটনা এত মারাত্মক জায়গায় পৌঁছে গেল যে, সেই সাংসদের অনুগামীরা এখন বলতে শুরু করেছেন যে, মতুয়া সমাজকে অপমান করা হয়েছে, সেক্ষেত্রে যদি সেই তৃণমূল উপপ্রধানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে নাকি তারা আরও বড় প্রতিবাদ করবেন! তাহলে দল এবার কোথায় যাবে? দল কার পক্ষ নেবে? আর কোনো একজনের পক্ষ নিতে গেলে আর এক পক্ষ যে বীভৎস ভাবে সোচ্চার হবে এবং তার ফলে যে তৃণমূলের সংগঠন এবং আগামীদিনে বিধানসভার মত গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনে ভোটব্যাঙ্কে প্রভাব পড়বে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রীতিমত হুলস্থুল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে শাসক দলের অন্দরে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

Exit mobile version