প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট-
এই রাজ্যে সবাই তৃণমূল সরকারের অন্যায় মেনে নিতে পারে না। এখনও কিছু মানুষ আছেন, যারা দলদাস না হয়ে মাথা উঁচু করে তৃণমূল সরকারের ফ্যাসিস্ট নীতির বিরুদ্ধে চোখে চোখ রেখে সরকারি পদে থেকেও সরকারের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠার মত ক্ষমতা রাখেন। আর সেই রকমই একজন ব্যক্তিত্ব হচ্ছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য। সংঘাতটা শুরু হয়েছিল তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসকে কেন্দ্র করে। একটি রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠা দিবস, তার জন্য কেন তাদের পরীক্ষা পিছিয়ে দিতে হবে? তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন তিনি। এমনকি শেষ পর্যন্ত তৃণমূলের বহু চুনোপুটি নেতাদের অনেক কথা সহ্য করেও সেই পরীক্ষা সংগঠিত করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দেখিয়ে দিয়েছিলেন, কোনো সরকারি ক্ষমতা এবং হুমকির কাছে তিনি মাথা নত করবেন না। আর এটাই বুঝি তৃণমূলের অনেকের গাত্রদাহের কারণ হয়ে গিয়েছিল। এমনকি শালীনতাকে অতিক্রম করে শিক্ষক, শিক্ষিকা এবং অধ্যাপিকাদের চূড়ান্ত অসম্মান করে তৃণমূল ছাত্র পরিষদেরই রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক কটুক্তি করেছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের উদ্দেশ্যে। অনেকেই ভেবে নিয়েছিলেন যে, তৃণমূল মানেই তো এরকম অনেক কথা বলতে দেখা যায়। স্বাভাবিকভাবেই তৃণমূলের এই ছাত্রনেতা এরকম কথা বলেছেন, এর কোনো শাস্তি হবে না। উল্টে তৃণমূল তাকে পুরস্কার দেবে। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেস তাকে যেভাবেই আগলে রাখার চেষ্টা করুক না কেন, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এবার সেই ছাত্র নেতার বিরুদ্ধে নেওয়া হলো কড়া পদক্ষেপ।
কি ঘটনা ঘটেছে? বলা বাহুল্য, ইতিমধ্যেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে কটুক্তি করার অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক অভিরূপ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে। অনেকেই বলেছিলেন, তৃণমূলের ছাত্র পরিষদের এত বড় নেতা, ফলে তার বিরুদ্ধে কে ব্যবস্থা নেবে? ফলে তিনি যা খুশি, তাই করতে পারেন। কিন্তু কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের যিনি উপাচার্য রয়েছেন, তিনি মেরুদন্ড সোজা রেখে শাসকের কোনো ভয়ের কাছে মাথা নতুন না করে পথ চলেন। আর এটা তিনি একবার প্রমাণ করে দিয়েছেন। আর এবার সেই ছাত্রনেতা যেভাবে উপাচার্যকে কটুক্তি করেছেন, তার পরিপ্রেক্ষিতে তাকে পাঁচ বছরের জন্য সেন্সর করলো কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। এক্ষেত্রে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বিভাগে আগামী ৫ বছর ভর্তি হতে পারবেন না, গবেষণা করতে পারবেন না, এমনকি চাকরির জন্য আবেদন পর্যন্ত করতে পারবেন না তৃণমূল ছাত্র পরিষদের এই নেতা।
অনেকেই এমন সাহসী সিদ্ধান্তের জন্য, মেরুদন্ড সোজা রাখার জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং তার উপাচার্যকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন। এত বড় সাহসী সিদ্ধান্ত তারা নিলেন কি করে? যেখানে তৃণমূলের কোনো চুনোপুটি নেতার বিরুদ্ধে মানুষ প্রতিবাদ করতে ভয় পাচ্ছে, সেখানে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তৃণমূলের রাজ্যস্তরের ছাত্রনেতার বিরুদ্ধে এমন কড়া পদক্ষেপ? বিভিন্ন মহলে তা নিয়ে গুঞ্জন চলছে। আর এর মধ্যেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, “পার্টি শাস্তি দেয়নি। তাই বিশ্ববিদ্যালয়কেই সাজা দিতে হয়েছে।” যদিও বা এই ছাত্রনেতাকে আগলে রাখতে মরিয়া তৃণমূল। ইতিমধ্যেই রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, নতুন উপাচার্য এলেই শাস্তি প্রত্যাহারের আবেদন করা হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজ্যের বুকে যখন সকলেই তৃণমূলের দলদাস হতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে, তখন বেনজির পদক্ষেপ নিলো কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মেরুদণ্ড সোজা রেখে যে পথ চলছেন, তার একটা প্রমাণ আরও একবার পাওয়া গেল। স্পষ্ট হয়ে গেল যে, এই রাজ্যের সকলে তৃণমূলের তাবেদারি, তৃণমূলের শাসন এবং অন্যায়ের কাছে মাথা নত করতে রাজি নয়। সব জায়গায় তৃণমূল নেতাদের যে দাদাগিরি চলবে না, তাদের সমস্ত অন্যায় যে মেনে নেওয়া হবে না, তা স্পষ্ট করে দিলো কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সিদ্ধান্ত। যার ফলে ভবিষ্যৎ কি হবে, তা ভবিষ্যৎ বলবে। কিন্তু কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সিদ্ধান্তে যথেষ্ট অস্বস্তিতে পড়ে গেল রাজ্যের শাসক দল বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।