প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট-
হাতে আর কয়েকদিন বাকি। তারপরেই বাংলা ও বাঙালির প্রিয় দুর্গাপুজো। আর ২৬ এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে এবার যেহেতু শেষ শারদ উৎসব, তাই উৎসবের দিনে মানুষ কাকে সবথেকে বেশি পান, তা অবশ্যই তারা লক্ষ্য রাখবেন‌‌। তৃণমূল কংগ্রেস ইতিমধ্যেই বাংলা ও বাঙালি অস্মিতাতে সামাল দিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করছে যে, তারাই সবথেকে বড় বাংলা দরদী দল। বিজেপি যাতে কোনো মতেই বাংলা ও বাঙালির ভোট না পায়, তার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি নিতে দেখা যাচ্ছে রাজ্যের শাসক দলকে। তবে গতকালই দিল্লিতে গিয়ে আসন্ন শারদ উৎসবে বাংলায় আসার জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ইতিমধ্যেই সোশ্যাল সাইটে তিনি নিজেই সেই কথা উল্লেখ করেছেন। আর এবার দিল্লি থেকে ফিরে আজ সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শুভেন্দু অধিকারী যে কথা জানিয়ে দিলেন, তাতে একটা বিষয় স্পষ্ট যে, ক্লাবগুলোকে টাকা দিয়ে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের ব্যানার লাগিয়ে, সরকারের ব্যানার লাগিয়ে যতই প্রচার করান না কেন, দিনের শেষে এবার বাঙালির শারদ উৎসবে তৃণমূল এবং তাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দ্বিগুণ হারে টেক্কা দেবে বিজেপি।

গতকালই দিল্লি থেকে অমিত শাহর সঙ্গে বৈঠক করে রাজ্যে ফিরেছেন বিরোধী দল নেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি যখন সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন যে, তিনি অমিত শাহকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন দুর্গাপুজোয় আসার জন্য, স্বাভাবিকভাবেই সকলের মধ্যেই একটা কৌতূহল তৈরি হয়েছে্ বিশেষ করে বিজেপি কর্মীরা রীতিমত মুখিয়ে আছেন যে, এবার হয়ত প্রধানমন্ত্রী না আসতে পারলেও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দুর্গাপুজোতে রাজ্যে আসবেন এবং বেশ কিছু পুজো তিনি উদ্বোধন করবেন। কেননা এর আগেও বিভিন্ন সময় শারদ উৎসবে বাংলায় বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সামিল হতে দেখা গিয়েছে। আর তার মধ্যে জল্পনা বাড়িয়ে যেভাবে শুভেন্দু অধিকারী অমিত শাহকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বাংলায় আসার জন্য, তাতে সামনে যখন বিধানসভা নির্বাচন, তার আগে কি বাংলা ও বাঙালির মন পেতে বিজেপির হাইপ্রোফাইল নেতারা এবার দুর্গা পুজোতে সামিল হবেন? ইতিমধ্যেই যে খবর পাওয়া যাচ্ছে যে, বিভিন্ন ক্লাব সংগঠনগুলির পক্ষ থেকে বিজেপির কাছে আমন্ত্রণপত্র এসে পৌঁছেছে‌। রাজ্যের নেতাদের কাছে তো বটেই, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও, সেক্ষেত্রে বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, এমনকি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও প্রচুর ক্লাব কমিটি তাদের পুজোতে চাইছেন বলেই খবর। নিজের মুখেই এদিন সেই কথা জানিয়ে দিলেন শুভেন্দু অধিকারী।

সাংবাদিকরা শুভেন্দুবাবুকে প্রশ্ন করেন যে, আপনি তো কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তাহলে বাংলায় কতগুলো পূজোর উদ্বোধন করবেন তিনি? কবে আসবেন! আর সাংবাদিকদের সেই প্রশ্নের উত্তরে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা বলেন, “এটা তো পার্টি ঠিক করবে‌। ইতিমধ্যেই জেপি নাড্ডা, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে অনেকে চাইছেন। এমনকি প্রধানমন্ত্রীকেও অনেকে চাইছেন। আমাদের কাছে তো অনেক আমন্ত্রণপত্র এসেছে। আমরাও অনেক পুজো উদ্বোধন করব। প্রচুর আমন্ত্রণপত্র এসেছে।” আর বিরোধী দলনেতার এই বক্তব্য থেকেই একটা ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে, এবার ২৬ এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে বাংলা ও বাঙালির মন পেতে তৃণমূলকে টেক্কা দিয়ে বিজেপির অনেক সর্বভারতীয় স্তরের হেভিয়েট নেতারা বাংলার দুর্গাপুজোয় সামিল হতে পারেন‌‌। এক্ষেত্রে ক্লাবগুলোর মন জয় করতে যে সমস্ত ক্লাবের তরফে আমন্ত্রণপত্র এসে পৌঁছেছে, তাদের পুজোতে সামিল হওয়ার চেষ্টা আরও বেশি বেশি করে থাকবে বিজেপির রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় স্তরের নেতাদের।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হয়ত প্রশাসনের চাপে, হয়তো অর্থনৈতিক চাপের কারণে সরকারের কাছে অনেক ক্ষেত্রেই বিভিন্ন ক্লাবগুলোকে টাকা নিতে হয়। কারণ এই অর্থনৈতিক সাহায্যটা তাদের পুজো করতে অনেকটাই সহযোগিতা করে। তবে অনেক ক্লাব সরকারের পক্ষ থেকে টাকা নিলেও, তারা মন থেকে চায়, বিজেপির হাইপ্রোফাইল নেতাদের সেই পুজোয় ডাকতে। কিন্তু এই রাজ্যে তো সেরকম নিয়ম নেই। সরকারের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছেন, মানেই বিজেপি নেতাদের ডাকা যাবে না। আর সেই পুজোয় যদি সরকারের পক্ষ থেকে টাকা নিয়েও কোনো বিজেপি নেতা বা বিরোধী দলের নেতাকে ডাকা হয়, তাহলে সেই ক্লাবের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে দিয়ে যে মিথ্যে মামলা করিয়ে তার পুজো পর্যন্ত বন্ধ করে দেওয়া হবে, তাতে দ্বিমত নেই সমালোচকদের মধ্যে। তাই মন থেকে অনেকে চাইলেও, প্রশাসনিক চাপের কাছে অনেক ক্লাব কমিটি মাথা নত করতে বাধ্য হয়। তবে যেভাবে এই রাজ্যজুড়ে সনাতনীদের জন্য আওয়াজ তুলছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, যেভাবে তিনি হিন্দুদের একত্রিত করার কাজ করে যাচ্ছেন, তাতে অনেক ক্লাবই সাহস করে বিজেপি নেতাদের তাদের পুজোয় আমন্ত্রণ জানানোর জন্য চিঠি পাঠাতে শুরু করেছেন। এখন বিজেপির রাজ্য নেতারা তো বুঝছেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতাদেরও যে সমস্ত ক্লাব তাদের আমন্ত্রণ পাঠিয়েছে, তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে সেই সমস্ত পুজোয় শামিল হওয়া উচিত। কেননা যদি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পক্ষ থেকে হাইপ্রোফাইল কোনো নেতা সেই পুজোতে সামিল হন এবং পূজোর উদ্বোধন করেন, তাহলে নিশ্চিত করেই সেই ক্লাব কমিটিগুলো যেমন উন্মাদনা পাবে, ঠিক তেমনই ২৬ এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে দুর্গা পুজোয় জনসংযোগের দিক থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তার দলকে অনেকটাই টেক্কা দিতে সক্ষম হবে বিজেপি। দিনের শেষে তেমনটাই বলছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।