প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট-
এই রাজ্যে তৃণমূল নেতারা যা বলবেন, সেটাই ঠিক। তাদের কথার বাইরে যদি কেউ চলতে যায় বা কেউ কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করে, তাহলে সেটা সঠিক পদক্ষেপ হলেও, তা মানা যাবে না। কেননা এই রাজ্যে তৃণমূল সরকারের আমলে তারাই আইন, তারাই নিয়ম, তারাই সবকিছু। তাদের কথার বাইরে কোনো কাজ করতে পারবেন না সাধারণ মানুষ। এমনকি যে শিক্ষক সমাজ আমাদের ছোট থেকে বড় করেছে, যে শিক্ষক সমাজের শিক্ষা পেয়ে আমরা বড় হয়েছি, সেই শিক্ষক সমাজও যদি কোনো পদক্ষেপ নেন এবং সেটা সেই তৃণমূল নেতাদের মন মত না হয়, তাহলে তাদেরও হুমকি থেকে শুরু করে মারধরের মুখে পড়তে হবে। হ্যাঁ, এই ঘটনাই ঘটেছে রাজ্যে। ইতিমধ্যেই সিসিটিভি ফুটেছে লক্ষ্য করা গিয়েছে যে, প্রধান শিক্ষককে রীতিমত ঘাড় ধাক্কা দিয়ে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছেন কাকদ্বীপের একটি স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি তথা তৃণমূলেরই পঞ্চায়েত সদস্য। আর এই ঘটনা সামনে আসার পরেই সকলের একটাই প্রশ্ন যে, এবার এই তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে কবে ব্যবস্থা নেবে দল? কবে ব্যবস্থা নেবে শিক্ষা দপ্তর?

গতকাল থেকেই খবরের শিরোনামে উঠে এসেছে কাকদ্বীপের একটি স্কুলের ঘটনা। যেখানে সিসিটিভি ফুটেজের ভিডিওতে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে যে, প্রধান শিক্ষককে টানতে টানতে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে রীতিমত হেনস্থা করছেন এক ব্যক্তি। জানা গিয়েছে, সেই ব্যক্তি সেই কাকদ্বীপের স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি এবং তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য। ‌ যতদূর খবর পাওয়া গিয়েছে, যে শিক্ষামূলক ভ্রমণ নিয়ে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে মতানৈক্য তৈরি হয়েছিল সেই স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি তথা সেই তৃণমূল নেতার। ছাত্র-ছাত্রীদের মতামতকে প্রাধান্য দিয়েই প্রধান শিক্ষক শিক্ষামূলক ভ্রমণের দিন নির্ধারণ করেছিলেন। কিন্তু তার বিরোধিতা করে প্রধান শিক্ষকের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন পরিচালন সমিতির সেই সভাপতি। এমনকি প্রধান শিক্ষক তাকে মান্যতা না দেওয়ায় তিনি রীতিমত তাকে তার চেয়ার থেকে টেনে বাইরে বের করে ঘাড় ধাক্কা দিতে শুরু করেন। স্বাভাবিকভাবেই সিসিটিভি ফুটেছে এই চিত্র সামনে আসায় রীতিমত লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে গোটা শিক্ষা মহলের।

বিরোধীদের একটাই প্রশ্ন, মতানৈক্য তৈরি হতেই পারে। কোনো বিষয় নিয়ে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে পরিচালন সমিতির মতের অমিল থাকতেই পারে। কিন্তু সেটা তো বসে মিটিয়ে নেওয়া যেত বা বন্ধ ঘরে নিজেদের সমস্যার সমাধান করা যেত। একেবারে প্রকাশ্যে প্রধান শিক্ষককে নিজের চেয়ার থেকে টেনে যেভাবে ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে তাকে হেনস্থা করলেন একজন পরিচালন সমিতির সভাপতি, তাতে এই অপমান তো গোটা শিক্ষা সমাজের অপমান। সমাজের সর্বস্তরের শিক্ষকদের অপমান। তাহলে রাজ্যের শিক্ষা মন্ত্রী কি করে এটা সহ্য করবেন? শুধুমাত্র তার দলের নেতা বলেই কি তিনি এই তৃণমূল নেতা তথা পরিচালন সমিতির সভাপতির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেবেন না? যেভাবে প্রধান শিক্ষককে হেনস্থা করা হয়েছে স্কুলের মধ্যে, তাতে তো অবিলম্বে এই তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত রাজ্যের শিক্ষা দপ্তরের। কিন্তু সেটা নেওয়ার মত ক্ষমতা কি এই রাজ্যের প্রশাসন দেখাবে? যদি দেখায়, তাহলে অবশ্যই তা সাধুবাদ যোগ্য। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সেই তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে কোনোরূপ শাস্তি মূলক ব্যবস্থা হয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে না। স্বাভাবিকভাবেই যে ঘটনা কাকদ্বীপের স্কুলে ঘটেছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে লজ্জায় ঘৃণায় গোটা শিক্ষা জগৎ একটাই কথা বলছেন, “ছিঃ”।