প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট-
প্রায় সাড়ে তিন বছর জেল খেটে অবশেষে বাড়িতে ফিরেছেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। দিনভর তাকে নিয়ে সংবাদমাধ্যমের একটা অংশ যে মাতামাতি শুরু করেছে, তা দেখতে দেখতে বিরক্ত হয়ে গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ। তবে এক সংবাদমাধ্যমের দেওয়া সাক্ষাৎকারে পার্থবাবুকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, তিনি কি সামনেই তো শীতকালীন অধিবেশন রয়েছে, ফলে সেই অধিবেশনে কি অংশ নেবেন? তিনি তো তৃণমূল থেকে সাসপেন্ড হয়েছেন। কিন্তু তিনি তো এখনও বিধায়ক রয়েছেন। ফলে সেই অধিবেশনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে তিনি কি ভাবছেন? যদিও বা পার্থবাবু সেখানেই জানিয়ে দিয়েছেন যে, সাড়ে তিন বছরই যখন তিনি যেতে পারলেন না, তখন সামনেই তো বিধানসভা নির্বাচন। ফলে তার আগে এই কয়েক মাসের জন্য তিনি বিধানসভায় গিয়ে আর কি করবেন? কিন্তু এই অল্প কয়েক মাসের জন্য বিধানসভায় গিয়ে কি করবেন, এই কথা বললেও মনে মনে যে বিধানসভায় যাওয়ার ইচ্ছে নেই পার্থবাবুর, এমনটা কিন্তু নয়। কেননা এতদিন পর জেল খেটে ফিরেছেন। আবার বিধানসভায় যাবেন, মেজাজ নিয়ে থাকবেন, এই ইচ্ছে তার মনের মধ্যেও হয়ত আছে। অন্তত বিশেষজ্ঞদের একটা অংশ তাই বলছেন। কিন্তু তিনি খুব ভালো করে জানেন, এই রাজ্যের বিরোধী দলনেতার নাম শুভেন্দু অধিকারী। পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে রাজ্য বিধানসভায় দেখলে শুভেন্দু অধিকারী তার বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে খোঁচা দিতে ছাড়বেন না। যার ফলে প্রেস্টিজ প্রামচার হয়ে যেতে পারে রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী। তাই হয়ত আর বিধানসভায় যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও শেষ পর্যন্ত সেখানে যাবেন না তিনি।
সামনে ২০২৬ এর বিধানসভা নির্বাচন। পার্থ চট্টোপাধ্যায় আদৌ তৃণমূলের হয়ে লড়বেন কিনা, সেটা অনেক পরের প্রশ্ন। এখনও পর্যন্ত তিনি তৃণমূল থেকে সাসপেন্ড। গতকাল সংবাদমাধ্যমকে একাধিক সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সেখানে অনেক বড় বড় কথা বলেছেন। নিজেকে আবারও সৎ বলে দাবি করেছেন। পাশাপাশি এক সাংবাদিক তাকে বিধানসভায় যাওয়ার ব্যাপারে প্রশ্ন করলে এই কয়েকদিনের জন্য তিনি আর বিধানসভায় গিয়ে কি করবেন, এই মন্তব্য করেছেন। উল্টে তার নিজের বিধানসভা কেন্দ্রের প্রত্যেকটি মানুষের কাছে তিনি পৌঁছে যাবেন বলে দাবি করেছেন পার্থবাবু। তবে গতকাল বাংলার সংবাদমাধ্যমের একটা অংশ যেভাবে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে আদিখ্যেতা করেছে, নির্বাচন কমিশনের দপ্তরে থেকে বেরিয়ে সেই ব্যাপারে কড়া ভাষায় কথা শুনিয়ে দিয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এমনিতেই তো রাজ্য বিধানসভায় শুভেন্দু অধিকারী এই রাজ্যের শাসক দলকে নাকানিচোবানি খাওয়াতে দুই মিনিট সময় নেন না। সেই দিক থেকে যদি পার্থ চট্টোপাধ্যায় এই শীতকালীন অধিবেশনে অংশ নেন, তাহলে দীর্ঘদিন পর জেল খেটে আসার আজকের এই প্রাক্তন মন্ত্রীকে দেখে শুভেন্দু অধিকারী যে তৃণমূল দলকেও ব্যাপক চাপের মুখে ফেলে দেবেন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই এমনিতেই তো এখন তিনি দলের কাছে চক্ষুশূল হয়ে রয়েছেন, দল তার সাসপেন্ড তোলেনি। সেক্ষেত্রে তিনি যদি বিধানসভায় যান, আর শুভেন্দু অধিকারী যদি তাকে নিয়ে তৃণমূলকে কটাক্ষ করেন, তাহলে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জন্য আবার তৃণমূল দল বিড়ম্বনার মুখে পড়তে পারে। হয়ত এই সমস্ত কিছু ভেবেই এবার বিধানসভায় যাওয়ার রাস্তা আপাতত দেখতে চাইছেন না রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী বলেই মনে করছেন একাংশ।
বিরোধীদের দাবি, পার্থ চট্টোপাধ্যায় এখন রাজ্য রাজনীতিতে কার্যত অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গিয়েছেন। তৃণমূলও চাইছে, তার সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখতে। আর বিরোধীরা কার্যত গোটা বিষয়ের দিকে কড়া নজর রাখছে। পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে তো আক্রমণ করতে ছাড়ছেন না রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ফলে শীতকালীন অধিবেশনে সেই পার্থবাবু যদি রাজ্য বিধানসভায় উপস্থিত হন, তাহলে তুলকালাম বাধিয়ে দিতে পারেন নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক। এমনিতেই তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পর্যন্ত যিনি ছেড়ে কথা বলেন না, তার কাছে এই পার্থ চট্টোপাধ্যায় যে নেহাত শিশু, তা নতুন করে বলতে হবে না তাই হয়তো শুভেন্দু অধিকারীর জুজুর কাছে মাথা নত করেই শেষ পর্যন্ত আর জেল থেকে ছাড়া পেলেও, এই কয়েক মাসের জন্য বিধানসভার পথ মাড়াবেন না রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।