প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট-
এক বছরের বেশি সময় হয়েছে, এখনও আরজিকরের ঘটনা টাটকা রয়েছে এই রাজ্যের বুকে। সরকারি হাসপাতালের মধ্যে একজন কর্তব্যরত চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনা নাড়া দিয়ে দিয়েছিল গোটা রাজ্যকে। বিচারের দাবিতে এখনও অনেকেই পথে নামছেন। আর তার মধ্যেই এই রাজ্যের বুকে ঘটে গেল আরও এক ভয়ঙ্কর ঘটনা। আরজিকরের ঘটনার এক বছরের কিছু বেশি সময় পেরোনোর মধ্যেই এবার সরকারি হাসপাতালে একজন চুক্তিভিত্তিক স্বাস্থ্য কর্মীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠলো এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। স্বাভাবিক ভাবেই সরকারি হাসপাতালকে কেন মহিলাদের ওপর নির্যাতনের ক্ষেত্রে এত নিরাপদ বলে মনে করছেন কিছু অসামাজিক জীব, তা নিয়ে বিভিন্ন মহলেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, সরকারি হাসপাতালের ভেতরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে। প্রশ্ন উঠছে, এই রাজ্যের প্রশাসন এবং সরকারের ভূমিকা নিয়েও। যেখানে অভয়ার মৃত্যুর পরে লাগাতার আন্দোলন হয়েছে, মানুষের এত প্রতিবাদ হয়েছে, যেখানে সরকার পর্যন্ত চাপে পড়ে বিধানসভায় নারী নির্যাতনের ঘটনা বন্ধ করতে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করার আশ্বাস দিয়েছে। তারপরেও কিছু মানুষ কেন এত সাহস পেয়ে যাচ্ছেন, তাও আবার সরকারি হাসপাতালের মধ্যে?
আগে জেনে নেওয়া যাক, কি ঘটনা ঘটেছে? যে ঘটনা ঘটেছে, তা রাজ্যের বুকে সকলের মাথা হেঁট করে দিয়েছে। আরজিকরের ঘটনার পর আর এরকম কোনো ঘটনা ঘটবে না, এমনটাই সকলে আশা করেছিলেন। যে কায়দায় প্রতিবাদ হয়েছে, তাতে নারী নির্যাতন রাজ্যে বন্ধ হয়ে যাবে। অন্তত সরকারি কর্মক্ষেত্রের জায়গায় মহিলারা নিরাপদে থাকতে পারবেন, এমনটাই আশা করা গিয়েছিল। কিন্তু কিসের কি? রাজ্যটার নাম হয়ত পশ্চিমবঙ্গ। আর সেই কারণেই এই রাজ্যের বুকে যখন আইন শৃঙ্খলা নেই, যখন তৃণমূলের দাদাদের দ্বারাই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ হয়, তখন যা খুশি তাই হতে পারে। আর তারই আরও একটা নজির এই সরকারি হাসপাতালে এক চুক্তিভিত্তিক মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীকে নির্যাতনের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠলো বলেই দাবি করছে বিরোধীরা। কি ঘটনা ঘটেছে?
জানা গিয়েছে, পাঁশকুড়ার সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের ঘটনা। গতকাল সেখানে ঠিকাদার সংস্থার ফেসিলিটি ম্যানেজার এক চুক্তিভিত্তিক মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীকে ডাকেন। ওষুধ দেওয়ার নাম করে তাকে ঘরে ডাকেন বলে অভিযোগ। আর সেখানেই সেই চুক্তিভিত্তিক মহিলা স্বাস্থ্য কর্মীকে হেনস্থা করার অভিযোগ উঠেছে সেই ফেসিলিটি ম্যানেজারের বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যেই সেই ব্যক্তিকে কোলাঘাট থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে প্রশ্ন উঠছে, নির্যাতিতার মান সম্ভ্রম তো সবকিছু নষ্ট হয়ে গেল! তা কে ফিরিয়ে দেবে? তিনি তো সরকারি কর্মক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করতে এসেছিলেন। হাসপাতালটা তো রাজ্য সরকারের হাসপাতাল। সরকারি হাসপাতালে কি করে এই জঘন্য ঘটনা ঘটছে? তাও আবার আরজিকরের ঘটনার পরেও! কেন নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরালো করা যাচ্ছে না? কেন কর্মক্ষেত্রে গিয়ে, সরকারি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এইভাবে প্রতিনিয়ত মহিলাদের সম্ভ্রম নষ্ট হবে এই রাজ্যের বুকে? এর আগে আরজিকরের ঘটনায় গোটা রাজ্যের মানুষ প্রতিবাদে পথে নেমেছিলেন। তারপরেও যে এই সরকারের লজ্জা বলতে কিছু হয়নি, তারা যে সরকারি কর্মক্ষেত্রের মত জায়গায় নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে পারে না সাধারণ মানুষের, তা তো আবার পাঁশকুড়ায় সরকারি হাসপাতালে এই চুক্তিভিত্তিক মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীকে নির্যাতনের ঘটনার মধ্য দিয়ে আরও একবার প্রমাণ হয়ে গেল!
বিজেপির দাবি, যে ব্যক্তি এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তিনি শাসক ঘনিষ্ঠ। এই রাজ্যকে সবদিক থেকে শেষ করে দিচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস। আরজিকরের ঘটনার পরেও তাদের লজ্জা হয়নি। আবার সরকারি হাসপাতালে এক চুক্তিভিত্তিক স্বাস্থ্যকর্মীর সঙ্গে এই অসভ্যতা করা হলো। অবিলম্বে গোটা রাজ্যের মানুষকে এই ঘটনার প্রতিবাদে পথে নামতে হবে। তৃণমূল যতদিন না ক্ষমতা থেকে সরবে, ততদিন এভাবে মা-বোনেদের ইজ্জত নিয়ে খেলা চলবে এই রাজ্যের বুকে। তাই মাতৃ শক্তির অপমানের বিরুদ্ধে এই ফ্যাসিস্ট শাসকের উৎখাত অবিলম্বে প্রয়োজন। সরকারি হাসপাতালের মধ্যে যেভাবে একজন মহিলা কর্মীকে হেনস্থা করা হলো, তা অত্যন্ত লজ্জাজনক। কেন কর্মক্ষেত্রে, তাও আবার সরকারি হাসপাতালের মধ্যে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা হবে না? যে মহিলার সঙ্গে এই ঘটনা ঘটলো, অবিলম্বে যিনি এই ঘটনা ঘটিয়েছেন, তাকে কড়া এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে এবং সরকারকে জবাব দিতে হবে যে, কেন তারা সরকারি হাসপাতালের মধ্যে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে পারছে না? প্রশ্ন তুলে তেমনটাই বলছে বিরোধীরা।