প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট-
এই রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থাকে তৃণমূল সরকার ঠিক কোথায় নিয়ে গিয়েছে, তা একের পর এক ঘটনার মধ্যে দিয়ে প্রমাণ হয়ে যাচ্ছে। শিক্ষায় শাসন নামক শব্দ এককালে ছিল। কিন্তু বর্তমান সরকারের আমলে ছাত্রছাত্রীদের শাসন করা তো দূরের কথা, যদি কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো অধ্যাপক, অধ্যাপিকা তৃণমূলের ছাত্র পরিষদের কোনো নীতির বিরুদ্ধে কথা বলে, তাহলে উল্টে সেই ছাত্র নেতাদের রোষের মুখে পড়তে হয় তাদের। সেই রকমই একটি ঘটনা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়েছিল। কিন্তু সেখানকার উপাচার্য শান্তা দত্ত মেরুদন্ড সোজা রেখে ২৮ আগস্ট তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের দিনেও সমস্ত বাঁধাকে উপেক্ষা করে পরীক্ষা সংগঠিত করে দেখিয়ে দিয়েছেন যে, শাসকের গা জোয়ারির কাছে তিনি মাথা নত করবেন না। যার পরিপ্রেক্ষিতে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য স্তরের এক নেতা সেই উপাচার্য সম্পর্কে কটুক্তি করেছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। পরবর্তীতে সেই ছাত্রনেতার বিরুদ্ধে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট কড়া সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়। যেখানে আগামী ৫ বছরের জন্য সেই অভিরূপ চক্রবর্তী নামে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতাকে সেন্সর করা হয়। আর তারপরেই উপাচার্যকে কটুক্তি করার জন্য এমন শাস্তি পেয়েছেন ছাত্রনেতা। সেই বিষয়ে উপাচার্যকে স্বাগত না জানিয়ে উল্টে ছাত্রনেতার পক্ষ নিয়ে সেই উপাচার্যকেই আক্রমণ করে বসেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী। যা অন্তত তার কাছ থেকে একজন অধ্যাপক এবং একজন শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে শোভা পায় না বলেই বিশেষজ্ঞরা নিজেদের মত জানিয়েছিলেন। আর এবার সমস্ত কিছুকে অতিক্রম করে দোষ করার জন্য, একজন ছাত্রকে শাস্তি দেওয়ার কারণে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে কার্যত বেনজির আক্রমণ করে বসলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী।
এদিন আরও একবার সংবাদমাধ্যমের পক্ষ থেকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের পক্ষ থেকে তৃণমূলের ছাত্র নেতার যে কটুক্তি মন্তব্য, তার পরিপ্রেক্ষিতে যে শাস্তি মূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয়েছিল। আর সেই প্রশ্নের উত্তরে তিনি যে মন্তব্য করেন, তাতে অনেকেই চমকে উঠছেন। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, “এমনিতেই বিশ্ববিদ্যালয়টা প্রায় ধ্বংস করে দিয়েছেন। তার মধ্যে ছাত্রদের ধরে ধরে এইভাবে টার্গেট করা, ব্যক্তি ধরে ধরে প্রতিহিংসা মেটানো, এটা ছাত্র সমাজের ক্ষেত্রে অত্যন্ত দুশ্চিন্তা এবং কলঙ্কের। কোনো উপাচার্য যে এত নীচে নামতে পারেন, এটা আমার কাছে স্বপ্নের বাইরে। ময়ূরপুচ্ছ যতই জড়াক, কাক কাকই থাকে। কিন্তু ছাত্ররা এই কাকের ঠোক্কর খাচ্ছে, এইটুকুই বলতে পারি।”
আর এখানেই বিরোধীরা পাল্টা বলছেন যে, উপাচার্য কি এমন দোষ করলেন, যার জন্য শিক্ষা মন্ত্রী তাকে এইভাবে আক্রমণ করলেন? শিক্ষামন্ত্রীর তো উচিত ছিল, তার দলের যে ছাত্রনেতা উপাচার্যকে এমন মন্তব্য করেছেন, তার বিরুদ্ধে শাস্তি মূলক পদক্ষেপ নেওয়ার। তিনি নেননি। বরঞ্চ সেই কাজ উপাচার্য করে দেখিয়েছেন। তারপর উপাচার্যকে যে সমস্ত আক্রমণ শিক্ষামন্ত্রী করলেন, সেটা কি তার করা সাজে? তিনি কি নিজে খুব গঠনমূলক ভূমিকার পরিচয় দিলেন? প্রশ্ন উঠছে রাজ্যের শিক্ষা মহলে।