প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট-
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ২০১৬ সালের পুরো প্যানেল বাতিল হয়ে গিয়েছে। পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশেই অযোগ্যদের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে এসএসসি। যার ফলে প্রমাণ হয়ে গিয়েছে যে, শিক্ষণ নিয়োগে এই রাজ্যে দুর্নীতি হয়েছে। এমনকি এই দুর্নীতির সঙ্গে তৃণমূলের অনেক বড় বড় মাথারা জড়িত বলেও দাবি করছে বিরোধীরা। ইতিমধ্যেই সেই দুর্নীতির কারণে আবার নতুন করে যে সমস্ত যোগ্য ব্যক্তিদের পরীক্ষা দিতে হচ্ছে, তারা রীতিমতো ক্ষিপ্ত। তাদের বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে একটা বিষয় উঠে আসছে যে, এবার যদি তারা পরীক্ষা দিয়েও উত্তীর্ণ না হতে পারেন, তাহলে এতদিন তারা যে চাকরি করেছেন, সেই চাকরি যদি তারা হারিয়ে ফেলেন, তাহলে তাদের সংসার চালানোর দায়িত্ব কি রাজ্য সরকার নেবে? অর্থাৎ এক কথায় এসএসসির দুর্নীতির কারণে কিছু অযোগ্যদের চাকরি দেওয়ার কারণে যে সমস্ত যোগ্যরা চাকরি হারিয়েছেন, আবার নতুন করে তাদের পরীক্ষায় বসতে হচ্ছে, তাতে কিন্তু সরকার এবং তৃণমূলের নেতাদের বিরুদ্ধে একটা জনরোষ তৈরি হচ্ছে, তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। আর সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে এবার কি দলকে বিপদে ফেলে সততার বুলি আওড়াতে শুরু করলেন তৃণমূলেরই বিধায়ক হুমায়ুন কবীর?
ইতিমধ্যেই তৃণমূলের এক কাউন্সিলরকে দেখতে পাওয়া গিয়েছে যে, দলেরই একাংশের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন। বিরোধীরা বলেছিলেন যে, এই কাউন্সিলর সবথেকে বেশি হয়ত খোঁজ নিলে দেখা যাবে, দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। তিনি নিজে এখন বিপদ থেকে বাঁচার জন্য বা জনতার বিক্ষোভের আঁচ যাতে তার কাছ পর্যন্ত না পৌঁছয়, তার জন্য তিনি নিজেকে সততার প্রতীক প্রমাণ করার মরিয়া চেষ্টা করছেন। কেননা ইতিমধ্যেই যারা অযোগ্য, তাদের আবার টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ পর্যন্ত দিয়েছে আদালত। ফলে সেই টাকা যদি তাদের ফেরত দিতে হয়, তাহলে যাদের কাছ থেকে তারা চাকরি পেয়েছেন, আর সেই চাকরি পাওয়ার সময় যদি তারা টাকার বিনিময়েই চাকরি পান, তাহলে কিন্তু যাদেরকে সেই টাকা দিয়েছিলেন, তাদেরকে সাধারণ মানুষ ছেড়ে কথা বলবেন না। আর সেই ভয়েই কি এখন তৃণমূল নেতারা যে যার মতো করে পারছেন, নিজে সৎ, এটা প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন? তৃণমূলের বিধায়ক হুমায়ুন কবীর এখন বলছেন যে, “এসএসসির এই যে পরীক্ষা, এই যে এই নিয়োগ দুর্নীতি, এর সঙ্গে যে সমস্ত অফিসার এই অবৈধ কাজ করেছেন, যে সমস্ত নেতার সাহায্যে, তাদের খুঁজে বের করা দরকার।” এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এতদিন পর হঠাৎ কেন বোধোদয় হচ্ছে এই তৃণমূল নেতার?
বিজেপির ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, হুমায়ুন কবীরের কথার কোনো অস্তিত্ব নেই। এরা মেরুদন্ড নিয়ে তৃণমূল দলে চলার মত লোক নয়। এরা গাছেরও খাবে, আবার তলারও কুড়োবে। মাথা উঁচু করে কেন এটা বলতে পারছেন না যে, দুর্নীতি হয়েছে, তাই এই দলের সঙ্গে আমরা থাকব না। কিন্তু দলেও থাকবে, আবার মানুষের যে বিক্ষোভ দুর্নীতির বিরুদ্ধে, তা যাতে তাকে বিপদে না ফেলতে পারে, তার জন্যই কিছুটা দল, কিছুটা সরকারকে বিপদে ফেলে মাঝেমধ্যে এই সমস্ত চটকদারি মন্তব্য করে নিজে সেফ থাকার চেষ্টা করছেন হুমায়ুন কবীরের মত নেতারা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তৃণমূলের অন্দরমহল পর্যন্ত এই খবর নিশ্চিত করেই পৌঁছে গিয়েছে যে, এবার যাদের অবৈধভাবে নিয়োগ হয়েছে, যারা অযোগ্য, তাদের টাকা ফেরত দিতে হবে। ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্ট এসএসসিকে জিজ্ঞেস করেছে যে, সেই টাকা ফেরতের প্রক্রিয়া কি শুরু হয়েছে? স্বাভাবিক ভাবেই সেই টাকা ফেরতের প্রক্রিয়া শুরু হলেই শুরু হয়ে যাবে আসল খেলা। কারন যাদের অবৈধভাবে নিয়োগ হয়েছে, তারা যদি টাকা ফেরত দিতে শুরু করেন, তাহলে তারাও যাদেরকে টাকা দিয়ে চাকরি পেয়েছিলেন, তাদেরকে মোটেই ছেড়ে কথা বলবেন না। আর বিরোধীরা দাবি করছে, এই রাজ্যে যে অবৈধ নিয়োগ হয়েছে, যে সমস্ত ব্যক্তিরা অযোগ্য, তারা সবাই টাকা দিয়ে চাকরি পেয়েছেন। আর সেই টাকা পৌঁছে গিয়েছে তৃণমূলের নেতা থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধিদের কাছে। আর সেই কারণেই কি এখন যারা সব থেকে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত, তারা এখন সাধু সাজার জন্য, মানুষের বিক্ষোভের হাত থেকে বাঁচার জন্যই আগেভাগেই সততার বুলি আওড়াতে শুরু করলেন? প্রশ্ন তুলছে বিরোধীরা।