প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট- বামেদের সময় বহু অন্যায়, অত্যাচার থাকলেও তারা অন্তত বিধানসভায় বিরোধীদের কথা বলতে দিতো। আর বিধানসভায় স্পিকারের চেয়ারটি থাকতো নিরপেক্ষ। কিন্তু বর্তমান তৃণমূল সরকারের আমলে যিনি স্পিকার হয়েছেন, প্রথম দিন থেকেই তিনি দল দাসত্বের মত কাজ করে যাচ্ছেন বলেই অভিযোগ উঠেছে। অতীতে বাম এবং কংগ্রেস বিরোধী দলের ক্ষমতায় থাকলেও, তারা সেভাবে স্পিকারকে কাবু করতে পারেনি। কিন্তু বিজেপি ২০২১ সালে বিরোধী দলের আসন দখল করার পর এই রাজ্য বিধানসভার স্পিকারকে বুঝিয়ে দিয়েছে যে, দলদাসত্ব করলে সংবিধানের কাছে মাথা নত করতে হয়। অন্তত স্পিকারের চেয়ারে বসে দলদাসের মত রাজনীতি করা যায় না। চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছেন যে, মুকুল রায় বিজেপির টিকিটে জিতে তৃণমূলে যোগদান করেছেন। অথচ তৃণমূলকে সুবিধা করে দেওয়ার জন্য বিধানসভায় সেই স্পিকারের মুখ থেকেই শোনা যাচ্ছে যে, মুকুল রায় নাকি এখনও পর্যন্ত বিজেপিতেই আছেন। স্বাভাবিক ভাবেই স্পিকারের এই তৃণমূলকে সুবিধা করে দেওয়ার যে কৌশল, তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার পাশাপাশি গোটা বিষয় নিয়ে আদালতে গিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী এবং অম্বিকা রায়। অবশেষে গতকাল বিরাট জয় পেয়েছেন তারা। যেখানে দলত্যাগ বিরোধী আইনে খারিজ হয়ে গিয়েছে মুকুল রায়ের বিধায়ক পদ। স্বাভাবিকভাবেই এতদিন রাজ্য বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়, যিনি বড় বড় গলায় বলতেন যে, মুকুল রায় বিজেপিতেই আছেন, কলকাতা হাইকোর্টের এই রায়ের পর তিনিও যথেষ্ট চাপে পড়ে গেলেন বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আর তারপরেই সেই বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশ্যে পাল্টা হুশিয়ারি দিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
গতকাল কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশের ফলেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে, বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় যতই বড় বড় কথা বলুন, শেষ পর্যন্ত শেষ কথা বলে সংবিধান। আর গতকাল হাইকোর্টের এই রায়ের পরে সংবিধানের জয় হয়েছে বলেই আখ্যা দিয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। যারা প্রকাশ্যে দলবদল করে তৃণমূলের পতাকা হাতে নিয়েছেন, শুধুমাত্র বিধানসভায় নিজেদের সুবিধে করার জন্য তাদেরকে বিজেপি বলে চালিয়ে দিয়েছে এই রাজ্যের শাসক দল। এমনকি তাদের সুরে সুর মিলিয়ে দলদাসের মত কাজ করেছেন রাজ্য বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই মুকুল রায়ের পদ খারিজ হয়ে যাওয়ার পর আরও যারা দলবদল করে বাইরে তৃণমূল, ভেতরে বিজেপি বলে চালানোর চেষ্টা করছেন এবং তাদের সঙ্গ দিচ্ছেন এই রাজ্য বিধানসভার অধ্যক্ষ, সেই ব্যাপারে আগাম বার্তা দিলেন শুভেন্দু অধিকারী।
এদিন হাইকোর্টের রায়ের পরেই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন রাজ্যে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সংবিধানের জয় বলে গোটা বিষয়কে স্বাগত জানান তিনি। পাশাপাশি রাজ্য বিধানসভার অধ্যক্ষ, যিনি দল দাসের মত ভূমিকা পালন করেছেনড় তিনি সঠিক ভূমিকা পালন করলে হয়ত আজকে আদালতে গিয়ে এই রায় নিয়ে আসতে হত না শুভেন্দু অধিকারীদের। তাই সেই অধ্যক্ষকে রীতিমত বার্তা দিয়ে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা বলেন, “বিমান ব্যানার্জি আজকে বুঝে নিয়েছে, ভারতবর্ষের সংবিধান শেষ কথা বলে। বিমান ব্যানার্জি, এই দলদাস ব্যবস্থাপনা শেষ কথা বলে না। আজকে প্রমাণ হয়ে গিয়েছে।” বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আদালতের এই রায়ে একটা বড় ঝাটকা খেয়েছেন রাজ্য বিধানসভার অধ্যক্ষ। এতদিন তিনি যেভাবে বিধানসভা পরিচালনা করতেন, আদালতের এদিনের নির্দেশের পর এবং শুভেন্দু অধিকারী যে জয় পেয়ে গেলেন, তারপর যেভাবে প্রকাশ্যে তৃণমূলে যোগদান করা বিধায়কদের বিজেপি বলে বিধানসভার ভেতরে নিজেদের সুবিধার্থে চালানোর চেষ্টা হয়েছিল, সেই কাজ করার মত আর সুযোগ এবং সাহস কোনোটাই রাজ্য বিধানসভার অধ্যক্ষ পাবেন না। শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্যের পর তেমনটাই বলছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।