প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট- কিছুদিন আগেই তৃণমূল কংগ্রেসের একটি প্রতিনিধি ত্রিপুরায় গিয়েছিল। যেখানে ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী বীরবাহা হাসদাও। তাদের বক্তব্য ছিল যে, ত্রিপুরায় তাদের পার্টি অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে। তাই তারা সেখানে প্রতিবাদ জানাতে গিয়েছেন, তারা রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করবেন। তবে বিমানবন্দরে নামার পর তারা যেভাবে পুলিশকে গাড়ি দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন, তা শুনে অনেকেই হাসতে শুরু করেছিলেন। পরবর্তীতে তারা রাজ্যপালকে না পেলেও, রাজভবনে গিয়ে স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন। তবে ত্রিপুরায় গণতন্ত্র নেই, ত্রিপুরায় প্রশাসন অসহযোগিতা করছে, এই সমস্ত অভিযোগ তৃণমূলের সেই প্রতিনিধি দল করেছে। কিন্তু পাল্টা তাদের উদ্দেশ্যেই অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন যে, বাংলায় তৃনমূল কি সেই সহযোগিতা করে? এখানে তো তাদের সরকার রয়েছে। কিন্তু এখানে বিজেপির কোনো নেতা এলে তাদের ওপর যেভাবে হামলা হয়, যেভাবে প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে বাংলায় বিজেপি নেতাদের কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হয়, তাতে ত্রিপুরায় তো তারা অন্তত গণতান্ত্রিক ভাবে নিজেদের আওয়াজটুকু পৌঁছে দিতে পেরেছে। কিন্তু বাংলায় বিজেপিকে যেভাবে তৃণমূলের এই অপশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হচ্ছে এবং প্রতি পদে পদে পুলিশ দিয়ে তাদের বাধাদান করা হচ্ছে, মিথ্যে মামলা দেওয়া হচ্ছে, তাতে তৃণমূলের সেই প্রতিনিধি দলের ত্রিপুরার প্রশাসন নিয়ে কথা বলার মত অধিকার নেই বলেই দাবি করছে বিজেপি। তবে ত্রিপুরার সেই সুষ্ঠু গণতন্ত্র দেখে ফিরে আসার পরেও লজ্জা হয়নি তৃণমূলের সেই প্রতিনিধি দলের নেতা-নেত্রীদের। এবার রাজ্যে এসে একটি বিজয়া সম্মিলনীর মঞ্চ থেকে কার্যত রাজ্যে বিরোধীশূন্য করার ডাক দিলেন মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা।

সামনেই ২০২৬ এর বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে তৃণমূল বিজয়া সম্মেলনীকে কাজে লাগিয়ে মানুষের কাছে নিজেদের বক্তব্য পৌঁছে দিতে চাইছে। কিছুদিন আগেই ত্রিপুরা থেকে ফিরে এসেছেন এই রাজ্যের মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা। আর এবার বিজয়া সম্মেলনীর মঞ্চ থেকে তিনি যে মন্তব্য করলেন, তাতে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে যে, এভাবেই কি তৃণমূল তাহলে বিরোধী শূন্য করার চেষ্টা করছে গোটা রাজ্যকে? সব জায়গায় তারাই শুধুমাত্র ক্ষমতা দখল করে থাকবে, এটাই কি এই রাজ্যের শাসক দলের প্রধান টার্গেট? মন্ত্রীর মুখ থেকেই যখন এমন মন্তব্য শোনা যায়, তখন তো বোঝাই যাচ্ছে যে, তৃণমূলের এজেন্ডা ঠিক কি!

এদিন একটি বিজয়া সম্মেলনীর মঞ্চে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিজেপি যাতে আগামী দিনে ঝান্ডা বাধার খুঁটিটুকুও না পায়, তার আহ্বান জানান রাজ্যের মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা। তিনি বলেন, “বিজেপি যদি আজকে এই রাজ্যে ক্ষমতায় আসে, তাহলে ত্রিপুরার মত আমরা কিন্তু এখানে গাড়ি ভাড়া পাব না। অথবা আমার মত মেয়েরা গ্রাম্য ছেলে মেয়েরা যদি কেক কেটে খায়, তাহলে সেটাতেও তারা বাধাদান করবে। তাই আসুন আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ হই যে, আগামী দিনে একটা ঝান্ডা বাধার মত খুঁটিও যেন বিজেপি না পায়। আমরা সেই ভাবে সকলে লড়াই করব।” আর রাজ্যের এক মন্ত্রী যখন প্রকাশ্যে এই ধরনের মন্তব্যের মধ্যে দিয়ে একেবারে রাজ্যকে বিরোধীশূন্য করার ডাক দিচ্ছেন, তখন তা গণতন্ত্রের পক্ষে অত্যন্ত অশুভ লক্ষণ বলেই দাবি করছে বিরোধীরা। ত্রিপুরায় গণতন্ত্র রয়েছে, এটা প্রমাণিত। আর সেই কারণেই ত্রিপুরায় গিয়ে সুষ্ঠুভাবে সেখান থেকে ফিরে এসেছেন তৃণমূলের প্রতিনিধি দল। কিন্তু বাংলায় তারা যে ক্ষমতা, যে ভাবনা প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছেন, যেভাবে বিরোধীদের একটি পতাকাও যাতে তারা না লাগাতে পারেন, তার জন্য প্রকাশ্য মঞ্চ থেকে নিদান দিচ্ছেন একজন মন্ত্রী, তা গণতন্ত্রের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকারক দিক বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।