প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট- নিজেদের অনেক কষ্ট করে পাওয়া চাকরি এই রাজ্য সরকারের দুর্নীতির কারণে, এসএসসি দুর্নীতির কারণে চলে যায়। যার ফলে আবার নতুন করে পরীক্ষায় বসার কারণে এমনিতেই প্রবল মানসিক অবসাদ তৈরি হয়েছে রাজ্যের যোগ্য চাকরিহারা ব্যক্তিদের মধ্যে। ইতিমধ্যেই নবম দশম শ্রেণীর পরীক্ষার পর একাদশ, দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষা সমাপ্ত হয়েছে। তবে নবম, দশম শ্রেণীর পরীক্ষা দিতে পারলেও একাদশ, দ্বাদশ শ্রেণীর এসএসসি পরীক্ষার আগের দিনেই মানসিক অবসাদে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর মৃত্যু হয়েছে পাঁশকুড়ার যোগ্য চাকরিহারা শিক্ষক সন্তোষ মন্ডলের। তবে এটা প্রথম নয়, এর আগেও আরও এক যোগ্য চাকরিহারা শিক্ষক সুবল সোরেনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে এই রাজ্যে। তৃণমূলের পক্ষ থেকে বলা হতেই পারে যে, স্বাস্থ্যের সমস্যার জন্য কি করে রাজ্য বা এসএসসিকে দায়ী করা হচ্ছে? কিন্তু যাদের অনেক কষ্ট করে পাওয়া চাকরি চলে যায়, আবার নতুন করে তাদের চাকরি পরীক্ষায় বসতে হয়, তারা জানেন, তাদের ভেতরে কি যন্ত্রনা হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরেই নিজেদের চাকরি টিকিয়ে রাখার যে চ্যালেঞ্জ, তা তাদের মধ্যে রয়েছে। আর সেই ঘটনাতেই ভেতরে ভেতরে তৈরি হওয়া টেনশনের বহিঃপ্রকাশেই যে একের পর এক যোগ্য চাকরিহারা শিক্ষকের মৃত্যু হচ্ছে এই রাজ্যে, তাতে দ্বিমত নেই বিরোধীদের মধ্যে। গতকালই এক যোগ্য চাকরিহারা শিক্ষক সন্তোষ মন্ডলের মৃত্যুর খবর সামনে এসেছিল। আর আজ সেই ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে সরাসরি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে দায়ী করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।

গতকালই আপনাদের প্রিয়বন্ধু মিডিয়ার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল যে, পাঁশকুড়ার শিক্ষক সন্তোষ মন্ডলের মৃত্যু হয়েছে। তার পরিবার দাবি করছে যে, মানসিক অবসাদে এবং চাকরি টিকিয়ে রাখার বিষয়টি নিয়ে তিনি দীর্ঘদিন ধরেই চিন্তায় ছিলেন। বৃহস্পতিবার তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তবে অপারেশনের প্রয়োজন হয়ে পড়ায় তিনি চিকিৎসকদের বলেছিলেন যে, রবিবার তার পরীক্ষা আছে, পরীক্ষার জন্য সমস্ত প্রস্তুতি পর্যন্ত তিনি নিয়েছিলেন। কিন্তু এতটাই ভয় এবং টেনশন তাকে গ্রাস করে যে, শেষ পর্যন্ত পরীক্ষার দিতে পারলেন না এই যোগ্য চাকরি হারা শিক্ষক। এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেলেন তিনি। আর পরিবারের এই সমস্ত দাবির মধ্যে থেকেই একটা বিষয় স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠে যে, রাজ্যের যে দুর্নীতি, এসএসসির যে দুর্নীতি, তারপরে যে চাকরি চলে গিয়েছে, তা মেনে নিতে পারেননি এই যোগ্য চাকরিহারা শিক্ষক। তাই ভেতরে ভেতরে মানসিক অবসাদের কারণেই শেষ পর্যন্ত তার মৃত্যু হয়েছে। আর সেই ঘটনা নিয়েই প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে গোটা বিষয়কে দুঃখজনক বলার পাশাপাশি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীই দায়ী বলে মন্তব্য করলেন শুভেন্দু অধিকারী।

শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। এর আগে সুবল সোরেনের মৃত্যু হয়েছিল। আবারও সন্তোষ মন্ডলের মৃত্যু হলো। এর জন্য মমতা ব্যানার্জি দায়ী।” বিরোধীদের বক্তব্য, একদম সঠিক কথা বলেছেন শুভেন্দু অধিকারী। এই রাজ্য সরকার এবং এসএসসি দুর্নীতি করেছে জন্যই তো আজকে নতুন করে যোগ্যদের পরীক্ষায় ভর্তি হচ্ছে। অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশ হয়ে যাওয়ার পর রাজ্য যদি যোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করে দিত এবং জানিয়ে দিত যে, আর নতুন করে পরীক্ষা দিতে হবে না, যারা যোগ্য, তাদের চাকরিতে পুনর্বহাল করা হবে। তাহলে এতটা টেনশন যোগ্যদের মধ্যে তৈরি হত না। আর এইভাবে একের পর এক প্রাণ চলে যেত না। নিজের চাকরি বাঁচানোর যে কষ্ট বর্তমান সমাজের মধ্যে রয়েছে, তা যাদের চাকরি চলে গিয়েছে, তারাই জানেন। কিছু ব্যক্তির জন্য, অর্থের বিনিময়ে চাকরি দেওয়ার জন্য আজকে একের পর এক প্রাণ পর্যন্ত চলে যাচ্ছে। আর এর জন্য যে সিস্টেম দায়ী, এর জন্য যে রাজ্যের প্রশাসন দায়ী, তা তো সকলেই জানেন।‌ তাই শারীরিক অসুস্থতার জন্য মৃত্যু হতে পারে। কিন্তু যে মানসিক অবসাদ সেই যোগ্য চাকরিহারা শিক্ষকের মধ্যে তৈরি হয়েছিল, সেই মানসিক অবসাদের কারণ তো একমাত্র নিজেদের যোগ্য চাকরি চলে যাওয়া। ফলে সেই যোগ্য চাকরি কার জন্য গেল? এই প্রশ্নের উত্তরে কিন্তু রাজ্যের দুর্নীতিকেই দায়ী করছে বিরোধীরা। আর সেই কথাই শোনা গেল রাজ্যের বিরোধী দলনেতার মুখেও।