প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট-
যে রাজ্যে চাকরি নেই যেখানে চাকরি পাওয়া যায় না, সেখানে বহু কষ্ট করে পড়াশোনা করে তারা চাকরি পেয়েছিলেন শিক্ষকের। কিন্তু রাজ্যের দুর্নীতির কারণে, অস্বচ্ছতার কারণে কিছু অযোগ্যের জন্য সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে আজকে তাদের চাকরি চলে গিয়েছিল। প্রচন্ড টেনশন নিয়ে জীবন কাটাচ্ছিলেন। গত রবিবার নবম দশমের পরীক্ষা হওয়ার পর আজ এসএসসির একাদশ, দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষার সমাপ্ত হয়েছে। যারা যোগ্য, তাদের কেন আবার নতুন করে পরীক্ষায় বসতে হবে, এটা একটা প্রশ্ন ছিল যোগ্য চাকরিহারা শিক্ষক শিক্ষিকাদের মধ্যে। তবুও তারা চেষ্টা করছেন, পরীক্ষা দেওয়ার। কারণ তাদের জীবন যাপন করতে হবে, সমাজের কাছে মাথা তুলে দাঁড়াতে হবে। তারা যে যোগ্যতা সহকারে পরীক্ষা দিয়ে চাকরি পেয়েছেন, এটা তাদের প্রমাণ করার একটা পরীক্ষা আবার এসেছে। স্বাভাবিকভাবেই তারা পরীক্ষা দিয়েছিলেন। কিন্তু এর আগেও এই রাজ্যের বুকে নতুন করে যোগ্যতা প্রমাণ করে পরীক্ষা দেওয়ার টেনশনে অসুস্থ হয়ে সুবল সোরেন নামে এক যোগ্য চাকরিহারা শিক্ষকের মৃত্যুর ঘটনা সামনে এসেছিল। আর এবার নবম, দশম শ্রেণীর পরীক্ষা দিলেও একাদশ, দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষার আগের দিনেই মৃত্যু হলেও আরও এক চাকরিহারা শিক্ষক সন্তোষ কুমার মন্ডলের। যার ফলে শেষ পর্যন্ত আর পরীক্ষায় বসা হলো না তার।
জানা যায়, সন্তোষ কুমার মন্ডল নামে এক ব্যক্তি পাঁশকুড়ার একটি স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তার চাকরি চলে যায়। তবে তিনি যোগ্যদের তালিকায় ছিলেন বলেই খবর। যার ফলে গত রবিবারও তিনি নবম দশম শ্রেণীর পরীক্ষাতে বসেছিলেন। কিন্তু চাকরি চলে যাওয়ার পর থেকেই তার ভেতরে ভেতরে একটি মানসিক অবসাদ কাজ করছিল। দীর্ঘদিন ধরেআ তিনি নাওয়া খাওয়া ছেড়ে আবার পরীক্ষায় কি করে বসে পাশ করা যায়, তার চেষ্টা শুরু করেছিলেন। আজ তার এসএসসির একাদশ, দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই গত বৃহস্পতিবার তিনি অসুস্থ হয়ে যাওয়ার পর তাকে হাওড়ার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রয়োজন হয়ে পড়ে তার অপারেশনের। কিন্তু ডাক্তারদের তিনি বলেন, এখনই অপারেশন করবেন না। কারণ রবিবার দিন আমার একটি পরীক্ষা রয়েছে। আমাকে পরীক্ষা দিতে হবে। কিন্তু কি নিদারুণ দৃশ্য, যে পরীক্ষার জন্য নাওয়া খাওয়া ভুলে এই যোগ্য চাকরিহারা শিক্ষক দিনরাত এক করে পড়াশোনা করেছেন, মানসিক টেনশনের জেরে শেষ পর্যন্ত পরীক্ষার আগের রাতেই প্রাণ হারালেন তিনি। পরিবারের অভিযোগ, চাকরি চলে যাওয়ার পর থেকেই প্রচন্ড টেনশনে ভুগছিলেন তিনি। যার ফলস্বরূপ গত রবিবার পরীক্ষা দেওয়ার পর থেকেই তিনি আরও অসুস্থ হতে শুরু করেন এবং বৃহস্পতিবার হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর গতকাল তার মৃত্যু হয়।
এখন অনেকে বলতেই পারেন যে, স্বাস্থ্যের সমস্যার জন্য তো অন্য কিছু দায়ী হতে পারে না। কিন্তু যে কোনো সরল মানুষ এটা বুঝবে যে, যার চাকরি চলে যায়, সে বোঝে কি যন্ত্রণা হচ্ছে! তার মধ্যে তারা যোগ্য হওয়ার পরেও তাদের চাকরি চলে গিয়েছে শুধুমাত্র কিছু দুর্নীতি এবং কিছু অযোগ্য ব্যক্তিদের কারণে। ফলে আবার তাদের নতুন করে পরীক্ষায় বসতে হবে, আর পরীক্ষায় বসলেও যে তারা চাকরি পাবেন, সেই গ্যারান্টি তো তাদের কাছে নেই! ফলে যারা যোগ্য, তারা সকলেই এখন টেনশনের মধ্যে রয়েছে। আর সেই মানসিক অবসাদের ফলেই সুবল সোরেনের পর সন্তোষ কুমার মন্ডল নামে আরও এক যোগ্য চাকরিহারা শিক্ষক প্রাণ হারালেন। আর এর জন্য যদি কেউ দায়ী হয়ে থাকে, যেভাবে মানসিক অবসাদে ভুগছেন যোগ্য চাকরিহারা শিক্ষক শিক্ষিকারা এবং যেভাবে একের পর এক মৃত্যু হচ্ছে, তাতে রাজ্যের এই অস্বচ্ছতা এবং চূড়ান্ত দুর্নীতির বিরুদ্ধেই আওয়াজ তুলছেন সাধারণ জনতা।