প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট- এই রাজ্যের মানুষ এমনটাই আশা করেছিলেন মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে। কেননা এর আগে এই রাজ্যের বুকে যে সমস্ত নারী নির্যাতন বা ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, তারপর তার বিভিন্ন মন্তব্য সামনে এসেছে। আর পরবর্তীতে তা নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। তিনি এক এক সময় এক এক মন্তব্য করেছেন। যার ফলে যারা নির্যাতিতা হয়েছেন তারা বা তাদের পরিবার রীতিমত অসম্মানের মুখে পড়ে গিয়েছিলেন। ফলে এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যত মুখ বন্ধ করে থাকবেন, ততই সকলের পক্ষে মঙ্গল। অন্তত তেমনটাই দাবি করে বিরোধীরা। গতকাল থেকেই গোটা রাজ্যে শোরগোল পড়ে গিয়েছে, দুর্গাপুরে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের এক তরুণী চিকিৎসককে গণধর্ষণের ঘটনা নিয়ে। যে তরুণী চিকিৎসক ওড়িশার বাসিন্দা। রাতে খাবার আনতে তিনি তার সহপাঠীকে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে ছিলেন। আর তারপর ফেরার পথে বেশ কিছু যুবক তার পথ আটকায়। পরবর্তীতে তাকে নির্জন জায়গায় নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। আর তারপর থেকেই বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছিল যে, মেডিকেল কলেজের বাইরে যখন এই ঘটনা ঘটেছে, তখন তো প্রশাসনের গাফিলতি। ফলে এরপরেও কি এই রাজ্যের প্রশাসন সমস্ত দায় নিয়ে গোটা ঘটনায় লজ্জিত হবে না? তবে এসবের মধ্যেই আজ উত্তরবঙ্গের যাওয়ার আগে সেই ঘটনা নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যে মন্তব্য করলেন, তা নিয়ে আবার তৈরি হয়ে গেল বিতর্ক।
গতকাল দুর্গাপুরের ঘটনা সামনে আসার পরেই লজ্জায় মান সম্মান খোয়া যায় গোটা বাংলার। আরজিকরের পরেও আবার এই ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে, এটা কেউ কল্পনা করতে পারেনি। স্বাভাবিকভাবেই প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে পথে নামছে বিরোধীরাও। তবে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা দাবি করেছিলেন যে, এই ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী কবে মুখ খুলবেন? অবশেষে আজ উত্তরবঙ্গে যাওয়ার আগে মুখ্যমন্ত্রী মুখ খুললেন ঠিকই। কিন্তু তিনি যে মন্তব্য করলেন, তারপর রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে তার এই মন্তব্য কতটা যুক্তিযুক্ত, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বারবার নিজের রাজ্যে ঘটে যাওয়া ঘটনাকে নিন্দাজনক না বলে, নিজের প্রশাসনের ব্যর্থতাকে স্বীকার করে না নিয়ে কেন কোনো বিচ্যুতি হলেই অন্য রাজ্যের ঘটনাকে সামনে তুলে ধরেন এই রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান?
এদিন উত্তরবঙ্গের উদ্দেশ্যে রওনা দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে তার আগে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলে দুর্গাপুরের ঘটনা নিয়ে তাকে প্রশ্ন করা হয়। আর সেই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “পুলিশকে জিজ্ঞেস করুন, আমাকে নয়। একটি বেসরকারি কলেজ। কেউই সমর্থন করছে না। তিন সপ্তাহ আগে উড়িষ্যায় তিনটি মেয়েকে সমুদ্র সৈকতে ধর্ষণ করা হয়। ওড়িশা সরকার কি করেছে? বাংলায় মহিলাদের সঙ্গে কিছু হলে আমরা হালকা ভাবে নিই না। গুরুতর ঘটনা।” আরেকজন প্রশাসনিক প্রধানের এইরকম দায়িত্ব জ্ঞানহীন মন্তব্য নিয়েই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে বিরোধীরা। তাদের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী এই ধরনের কথা বলছেন কি করে? একজন মহিলা মুখ্যমন্ত্রী হয়ে তিনি অন্য রাজ্যের তুলনা টানবেন কেন? নিজের রাজ্যে কি হচ্ছে, সেটা নিয়ে তিনি কেন সদর্থক ভূমিকা পালন করবেন না? বারবার করে যখনই এই রাজ্যের বুকে কোনো ভয়াবহ ঘটনা ঘটে, তখনই অন্য রাজ্যের তুলনা টেনে নিজের রাজ্যের ঘটনাকে লঘু করে দেখানোর চেষ্টা করেন এই রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান? স্বাভাবিকভাবেই তার কাছ থেকে কি করে বাংলার মা, বোনেরা সুবিচার পাবে? মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের পর তা নিয়েই রীতিমতো সোচ্চার গেরুয়া শিবিরের ঘনিষ্ঠ মহল।