প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট-
এই রাজ্যে যারা চান তৃণমূল সরকারের বিদায় হোক, যারা চান যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হয়ে যাক এবং তৃণমূল বলে এই রাজ্যে যেন কিছু না থাকে, তারা প্রতিমুহূর্তে শুভেন্দু অধিকারীর প্রত্যেকটি কর্মসূচিদের দিকে ফলোআপ রাখেন। বোঝার চেষ্টা করেন যে, শুভেন্দু অধিকারী নিজে যে সমস্ত রাজনৈতিক কর্মসূচি করছেন, তাতে তিনি কতটা খুশি? কারণ এই শুভেন্দুবাবু পশ্চিমবঙ্গের বুকে এমন একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, যিনি তৃণমূল সম্পর্কে প্রতিমুহূর্তে সব খবর রাখেন। তৃণমূলের চোখে চোখ রেখে লড়াই করার পাশাপাশি নিজের প্রাক্তন দল কোথায় কোন ঘুটি সাজাচ্ছে, তার সব খবর তার কাছে পৌঁছে যায়। অন্তত তার মুখ থেকেই বিভিন্ন সময় যে সমস্ত কথা শোনা গিয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে তেমনটাই বলেন বিশেষজ্ঞরা। তাই যারা তৃণমূলকে এই রাজ্য থেকে উৎখাতের পক্ষে, তারা শুধু দেখতে চান যে, শুভেন্দু অধিকারী কতটা কনফিডেন্ট এই রাজ্যের শাসক দলকে সরানোর জন্য‌। বর্তমানে বিধানসভা নির্বাচনের সময় যত এগিয়ে আসছে, ততই তৃণমূলের বিরুদ্ধে যেন আরও বেশি সুর চড়াতে দেখা যাচ্ছে রাজ্যের বিরোধী দলনেতাকে। আর গতকাল দিল্লিতে তিনি অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠকের পর আজ রাজ্যে এসে সাংবাদিকদের যে কথা বলে দিলেন, তাতে যারা তৃণমূলকে সরাতে রীতিমত মুখিয়ে আছেন, তাদের কাছে সবথেকে বড় এটাই হয়ত সুখবর। ‌

আপনারা সকলেই দেখেছেন যে, গতকাল শুভেন্দু অধিকারী দিল্লিতে গিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি ইতিমধ্যেই পোস্ট করে দিয়েছেন যে, প্রায় ৪৫ মিনিট তাদের মধ্যে কথা হয়েছে। সকলেই কৌতুহলী যে, কি কথা হলো দুজনের মধ্যে? সামনেই যখন বিধানসভা নির্বাচন, তখন কি গোপন আলোচনা হলো বঙ্গ বিজেপি এবং কেন্দ্রীয় বিজেপির দুই নেতার মধ্যে? বাংলায় তৃণমূলকে সরাতে অমিত শাহ কি নতুন কোনো পরামর্শ দিলেন? তবে রাজনীতিতে অনেক কিছু গোপন রাখতে হয়। তাই শুভেন্দু অধিকারী কি আলোচনা হয়েছে অমিত শাহের সঙ্গে, তা প্রকাশ করেননি। তবে তার চোখে মুখে যে কনফিডেন্ট মনোভাব দেখতে পাওয়া গিয়েছে, তাতে বলাই যায় যে, এবার হয়ত সেই গ্রীন সিগন্যালটা পেয়ে গিয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। কারণ লড়াই করতে গেলে ওপর তলার একটা সমর্থন থাকা প্রয়োজন। নিজের ঘর যদি সাপোর্ট দেয়, তাহলে প্রতিপক্ষের সঙ্গে লড়াই করতে কোনো অসুবিধা হয় না। হয়ত গতকালের বৈঠকের পর শুভেন্দু অধিকারী শীর্ষ স্তরের নেতৃত্বের কাছ থেকে এমন কোনো ইঙ্গিত পেয়ে গিয়েছেন, যার পরিপ্রেক্ষিতে এবার আর পিছন ফিরে থাকার মত সময় নেই। এবার তৃণমূলকে সরাতে এবং ক্ষমতাচ্যুত করতে শেষ লড়াইটা লড়তে হবে। তবে শুধু লড়াই করেই থেমে থাকবে না বিজেপি। এই লড়াইয়ে যে তাদের জয় নিশ্চিত, আজ দিল্লি থেকে ফেরার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সেই কথা বলতে গিয়েও ব্যাপক ওভার কনফিডেন্ট দেখালো রাজ্যের বিরোধী দলনেতাকে।

কি বললেন শুভেন্দু অধিকারী? অমিত শাহের সঙ্গে আলোচনা নিয়ে সাংবাদিকরা তাকে প্রশ্ন করেন। তবে তিনি সেই ব্যাপারে তেমন কিছু বলতে চাননি। উল্টে তৃণমূলকে সরানোর ব্যাপারে দ্বিগুণ আত্মপ্রত্যয়ী মনোভাব প্রকাশ করে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা বলেন, “মমতা ব্যানার্জিকে যেতে হবে ২৬ এর নির্বাচনে, এটা আমি আপনাকে বলে দিলাম। কোনো শক্তি নেই ওনাকে এই নির্বাচনে রক্ষা করে। জনতা জনার্দনই শেষ কথা। এই রাজ্যে মানুষ পরিবর্তন চায়। বিজেপির হাত ধরেই যায়। কারণ বিজেপিই একমাত্র বিকল্প।” আর এখানেই বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, এই কথাটাই তো বিজেপির নেতাকর্মী থেকে শুরু করে যারা তৃণমূলকে সরাতে চান, তারা শুনতে চাইছিলেন। লড়াই হচ্ছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। লড়ছে নেতা কর্মীরা। কিন্তু সেই কনফিডেন্ট কোথায়? দিনের শেষে কি আদৌ জিতবে দল? এরকম একটা সংশয় মাঝেমধ্যেই বিজেপির নেতাকর্মীদের মধ্যেও ঘোরাফেরা করছে। তবে সেই সংশয়কে সরিয়ে দিয়ে এবার তৃণমূলকে ক্ষমতায় থেকে সরানোর জন্য যে আরও বেশি করে লড়াইটা করতে হবে, সেই সুর দিল্লি থেকে ফিরেই বেঁধে দিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। স্পষ্ট ভাষায় বুঝিয়ে দিলেন যে, রাজ্যে পরিবর্তন হচ্ছেই। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ক্ষমতায় রাখবে, এরকম কোনো শক্তি এবার নেই। ২০২১ এর পুনরাবৃত্তি যে ২০২৬ এ হবে না এবং তৃণমূল যে ক্ষমতায় থাকবে না, তা শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য থেকে শুরু করে বডি ল্যাঙ্গুয়েজের মধ্যে দিয়ে একপ্রকার স্পষ্ট হয়ে গেল। দিনের শেষে তেমনটাই বলছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।