প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট-
বিজেপি এই দেশের একাধিক রাজ্যে ক্ষমতায় আছে। এমনকি তারা কেন্দ্রের ক্ষমতাতেও আছে। তাই বেশিরভাগ রাজ্যই যখন তাদের ক্ষমতায় আছে, তখন তাদের তো আফসোস হওয়ার কোনো কারণ নেই। এতদিন পশ্চিমবঙ্গে যে রাজনীতি তৃণমূল কংগ্রেস করেছে, যেভাবে বিজেপি কর্মীদের ওপর অত্যাচার হয়েছে, যেভাবে মিথ্যে মামলা দেওয়া হয়েছে, তাতে একটা প্রশ্নই বারবার বিজেপি কর্মীদের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে যে, আদৌ কি দিল্লি চাইছে বাংলায় পরিবর্তন করতে? বাংলার কর্মীরা এভাবে লড়াই করবে, কিন্তু দিল্লির নেতৃত্ব কি বাংলা নিয়ে আদৌ সিরিয়াস? তবে গতকাল দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক করেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সেই বৈঠক ঘিরে গুঞ্জন চরমে উঠেছিল। বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির সর্বভারতীয় চাণক্যের সঙ্গে রাজ্যে যিনি তৃণমূলের চোখে চোখ রেখে লড়াই করছেন, তার এই বৈঠক থেকে কি আলোচনা হলো, তা জানার জন্য অপেক্ষায় ছিলেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। অবশেষে আজ শুভেন্দু অধিকারী সেই বৈঠক নিয়ে একটা বড় ইঙ্গিত দিলেন। যার ফলে বিজেপির যে সমস্ত কর্মীরা এতদিন ভাবছিলেন যে, বাংলা নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সিরিয়াস নয়, তাদের মুখে কিছুটা হলেও হাসি ফুটবে।
আপনারা সকলেই জানেন যে, গতকাল রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী দিল্লিতে গিয়েছিলেন। আর সন্ধ্যেবেলায় একটি ছবি তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় দিয়ে সেখানে উল্লেখ করেন যে, ৪৫ মিনিট কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তার কথা হয়েছে। এখন কি কথা হয়েছে, সেটা অনেকেই জানার অপেক্ষায় ছিলেন। সামনেই যখন বিধানসভা নির্বাচন, তৃণমূলকে সরানোর যখন একটা লড়াই বিজেপি কর্মীরা করছে, তখন কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পক্ষ থেকে কি কোনো বার্তা পেলেন শুভেন্দুবাবু? কোনো স্ট্রাটেজি তৈরি হলো? তৃণমূলকে সরানোর জন্য অমিত শাহ কি নতুন কোনো ফর্মুলা বলে দিলেন? কি সেই ফর্মুলা? রাজনীতিতে নেতারা যে সব কিছু প্রকাশ করে দেবেন, আর শুভেন্দু অধিকারীর মত পরিপক্ক নেতা যে একেবারে বেমালুম সংবাদ মাধ্যমের সামনেই গোপন বৈঠক নিয়ে সবকিছু বলে দেবেন, এমনটা ভাবা বৃথা। তাই স্বাভাবিকভাবেই কি আলোচনা হয়েছে, সেটা তিনি বলেননি। তবে একটা ইঙ্গিত তিনি আজ দিয়ে রেখেছেন। আর সেটা সামনে আসার সঙ্গে সঙ্গেই রীতিমত উজ্জীবিত গেরুয়া শিবিরের সমস্ত স্তরের নেতা কর্মীরা। যার ফলে স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে যে, আর জিরে ঢালা মনোভাব নিয়ে কাজ করলে চলবে না। বিজেপি অনেক রাজ্যের ক্ষমতায় থাকতে পারে, কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পর্যবেক্ষণ, বাংলায় তাদের ক্ষমতায় আসতেই হবে। কারণ এই বাংলা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের বাংলা। আর সেই বাংলায় যদি তারা ক্ষমতায় না আসতে পারে, তাহলে তাদের বৃত্ত অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।
এদিন সাংবাদিকরা গতকালের বৈঠক নিয়ে শুভেন্দুবাবুকে প্রশ্ন করেন। আর সেই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “যেটুকু বলার, সেটা সোশ্যাল মিডিয়ায় বলেছি। বাকিটা আপনাদের জন্য নয়। নিশ্চিতভাবেই ছয় মাস পরে পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন রয়েছে। উনি দেশের বড় নেতা এবং উনি মনেপ্রাণে চান, শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী এই দল প্রতিষ্ঠা করার পেছনে ছিলেন, সেই মাটিতে যতক্ষণ না পদ্ম ফুটছে, যত রাজ্যেই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, বৃত্ত সম্পূর্ণ হয় না। তাই রাষ্ট্রীয় নেতারা প্রত্যেকেই আগ্রহী। ৩ থেকে যদি ৭৭ হয়, তাহলে ৭৭ থেকে কেন ১৭৭ হবে না? ১০ শতাংশ ভোট থেকে যদি ৪০ শতাংশ ভোট হয়, তাহলে কেন সেটা ৪৫ শতাংশ হবে না? সবাই পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে আগ্রহী। তাই এটা বাইরে বলার জন্য নয়।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যারা রাজনীতিতে অভিজ্ঞ, তারা শুভেন্দু অধিকারীর এই কথার মধ্যে দিয়েই অনেক কিছু বুঝে যাবেন। পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে বিজেপি কতটা সিরিয়াস, তা গতকাল শুভেন্দু অধিকারী পোস্ট করা ছবির মধ্যে দিয়েই অনেকটা আভাস পাওয়া গিয়েছিল। আর আজ তিনি যে মন্তব্য করলেন, তাতে বোঝাই যাচ্ছে যে, এবার বিজেপি বাংলা নিয়ে একেবারে পুরো দস্তুর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। এবার তাদের একটাই টার্গেট, পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতা দখল করা। আর সেই কাজ করতে রাজ্য নেতৃত্বকে যে ফুল সাপোর্ট দেবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব, তা শুভেন্দু অধিকারীর আজকের সাংবাদিক বৈঠকের মধ্যে দিয়ে জোরালো ভাবে ফুটে উঠলো। তাই বিজেপির যে সমস্ত কর্মীরা এতদিন ভাবছিলেন যে, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বা দিল্লির নেতৃত্ব বাংলা নিয়ে সিরিয়াস কিনা! তাদের সেই প্রশ্নের উত্তর আপাতত তারা শুভেন্দু অধিকারীর এই বক্তব্যের মধ্যে দিয়েই পরিষ্কারভাবে পেয়ে গেলেন।