প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট-
দীর্ঘ জল্পনার পর এবং দীর্ঘ টালবাহানা, নাটকীয় পরিস্থিতি শেষে অবশেষে আজ হুমায়ুন কবীরকে দল থেকে সাসপেন্ড করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। একসময় এই হুমায়ুন কবীরকে কাজে লাগিয়ে তৃণমূল নিজেদের ঘরে অনেক সুফল তুলেছে। যেদিন হুমায়ুন কবীর আমরা ৭০ শতাংশ, ওরা ৩০ শতাংশ বলে ভাগীরথীর জলে ভাসিয়ে দেওয়ার কথা বলেছিলেন, সেদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলীয় এই বিধায়কের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার মতোষ ক্ষমতা দেখাননি। কিন্তু এখন যখন সেই হুমায়ুন কবীর বেসুরো হচ্ছেন, যখন তিনি ক্রমাগত দলের একাংশের বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছেন, তখন আজ তাকে ছেঁটে ফেললো রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস বলেই কটাক্ষ করছে বিরোধীরা। আর এসবের মধ্যে এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইউজ এন্ড থ্রো নীতিকে সামনে এনে হুমায়ুন কবীরকে সাসপেন্ড প্রসঙ্গে তৃণমূলকে চাপে ফেলে দিলেন অধীর চৌধুরী।
বেশ কিছুদিন ধরেই দলের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সোচ্চার হয়েছিলেন হুমায়ুন কবীর। এমনকি বাবরি মসজিদ শিলান্যাসের কথাও জানিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। আর এতেই তৃণমূলের অস্বস্তি আরও বেড়ে গিয়েছিল। কারণ তৃণমূল এমনিতেই জানে যে, হিন্দুরা একত্রিত হচ্ছে। তার মধ্যে হুমায়ুন কবীর যেভাবে বাবরি মসজিদ শিলান্যাসের কথা বলছেন, তাতে তার বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে জন্যেই আজ রাজ্যের শাসক দলের পক্ষ থেকে তিনি বিজেপির কথা মত কাজ করছেন বলে অভিযোগ করে ভরতপুরের বিধায়ককে দল থেকে সাসপেন্ড করার কথা জানিয়ে দিয়েছেন ববি হাকিম। যদিও বা সেই সমস্ত কিছুর তোয়াক্কা না করে তিনি যে বাবরি মসজিদ শিলান্যাসের সিদ্ধান্তে অনড় থাকবেন, তা জানিয়ে দিয়েছেন হুমায়ুন কবীর। আর এই পরিস্থিতিতে এক সময় এই হুমায়ুন কবীরকে দিয়ে যেভাবে তাকে হারানো হয়েছিল, সেই বিষয়টি সামনে এনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কাজ ফুরোলেই মানুষকে ছুড়ে ফেলে দেন বলে দাবি করলেন প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী।
এদিন হুমায়ুন কবীরকে সাসপেন্ড প্রসঙ্গে অধীর চৌধুরীকে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা। আর সেই ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি বলেন, “এই হুমায়ুন কবীরকে মমতা ব্যানার্জি নির্বাচনের সময় ব্যবহার করেছিল, আমাকে হারানোর জন্য। নির্বাচনের আগে রামনবমীর দিন পুলিশ আর হুমায়ুন কবীর মিলে দাঙ্গা করেছিল। সেই দাঙ্গা করার পর হুমায়ুন কবীর সদর্পে বলেছিলো, মুর্শিদাবাদে ৭০ ভাগ মুসলমান, ৩০ ভাগ হিন্দু, মনে করলে মুসলমানরা হিন্দুদের কেটে গঙ্গায় ভাসিয়ে দিতে পারে। আইপ্যাকের লোকেরা সেটাকে কালেক্ট করে হিন্দু গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে দিলো, আরও বেশি করে প্রচারের জন্য। আমার বিরুদ্ধে যিনি প্রার্থী ছিলেন, ক্রিকেটার, তিনি মুসলমান ছিলেন। কাজেই মুসলমান ভোট তো পাওয়া যাবেই। হিন্দু ভোটে আঘাত আনো, যাতে অধীর চৌধুরী হারে। আমি হেরে গেলাম, দিদির কার্যসিদ্ধি হয়ে গেল। অথচ সেদিন এত বড় কথা বলার পরেও হুমায়ুন কবীরের এই মন্তব্যের কোনো নিন্দা মমতা ব্যানার্জি করেননি। অর্থাৎ দিদির এটাই হচ্ছে চরিত্র। ইউজ অ্যান্ড থ্রো। কাজের সময় কাজি, কাজ ফুরোলেই পাজি। যে হুমায়ুন একসময় দিদির সম্পদ ছিলো, সেই হুমায়ুন আজকে দিদির বোঝা হয়ে গিয়েছে। আর বোঝা হয়ে গেলে দিদি সঙ্গে সঙ্গে ঘাড় থেকে নামিয়ে ফেলে।”