প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট-
এতদিন বিজেপির পক্ষ থেকে তৃণমূল কংগ্রেসকে তোলাবাজ এবং দুর্নীতিবাজ বলে আখ্যা দেওয়া হত। কিন্তু এবার আর বিরোধীদের পক্ষ থেকে সেই কথা বলা হচ্ছে না। বরঞ্চ তৃণমূলের মধ্যে থেকেই তৃণমূলের যারা জনপ্রতিনিধি, যারা ক্ষমতা ভোগ করছেন, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। তৃণমূলের একটা অংশ, যারা বঞ্চিত, তারাই এখন প্রকাশ্যেই সোচ্চার হচ্ছেন দলের একটা অংশের বিরুদ্ধে। আর শাসক দলের এই কোন্দল দেখে রীতিমত মজা নিতে শুরু করেছে বিরোধীরা। তাদের বক্তব্য, খেলা তো সব শুরু হয়েছে। নির্বাচনের আগে তৃণমূল বনাম তৃণমূলের লড়াইয়েই এই দলটা শেষ হয়ে যাবে। আর তৃণমূলের এই অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবার যেভাবে প্রকাশ্য চলে এলো এবং যেভাবে তৃণমূলের একটা অংশের পক্ষ থেকে বিধায়কের বিরুদ্ধেই তোলাবাজি করার মত ভয়ংকর অভিযোগ করা হলো, তাতে যথেষ্ট চাপে পড়ে গিয়েছে তৃণমূল নেতৃত্ব।
কি ঘটনা ঘটেছে? এতদিন বিরোধীদের পক্ষ থেকে তৃণমূলের বিভিন্ন নেতা, মন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ করা হত। বিরোধীরা দাবি করতেন যে, তৃণমূলের সবাই চুরি, দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। কিন্তু এবার তৃণমূলের সাধারণ কর্মী বৃন্দের পক্ষ থেকে একটি পোস্টার বাজারে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। যেখানে লেখা রয়েছে, “দেগঙ্গা ২ নম্বর ব্লকের ভেরির থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা তোলা আদায় করা ও ইটভাটা থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা তোলা আদায় করা, পঞ্চায়েত থেকে কাটমানি আদায় করে হাড়োয়া বিধানসভার নতুন বিধায়ক রবিউল ইসলাম।” আর তার নীচেই লেখা রয়েছে, “সাধারণ কর্মীবৃন্দ বহিষ্কার চাই।” আর এই পোস্টার সামনে আসার পরেই রীতিমত চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এখন তৃণমূলের পক্ষ থেকে বলা হতেই পারে যে, ভোটের আগে বিজেপি পরিকল্পনামাফিক এই সমস্ত বদনাম করার চেষ্টা করছে। কিন্তু যদি বিজেপি এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকে, তাহলে তৃণমূল তদন্ত করুক। পুলিশের কাছে অভিযোগ করুক। যদি বিজেপির কোনো নেতা এই ধরনের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকে এবং সেটা যদি তদন্তে প্রমাণিত হয়, তাহলে নিশ্চিত করেই তার শাস্তি হবে। কিন্তু এটা তো শুধু হাড়োয়ার সমস্যা নয়। গোটা রাজ্যেই তো বিভিন্ন সময় দেখা যাচ্ছে, তৃণমূলের সঙ্গে তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ সমস্যা প্রকাশ্যে চলে আসছে। খাস কলকাতা থেকে শুরু করে জেলায় জেলায় কে ক্ষমতা দখল করবে, কার ভাগে কত টাকা যাবে, তা নিয়ে তৃণমূলের নেতা-নেত্রীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব কার্যত সর্বজনবিদিত। তাই হাড়োয়ায় যে পোস্টার বিধায়কের বিরুদ্ধে দেওয়া হয়েছে, তা যে তৃণমূলের যারা বঞ্চিত, যারা চোখের সামনে বিধায়কের দুর্নীতি দেখছেন, তারাই প্রতিবাদস্বরূপ এই ধরনের পোস্টার বাজারে ছেড়ে দিয়েছেন বলেই দাবি করছে বিরোধীরা।
ইতিমধ্যেই গোটা ঘটনায় খোঁচা দিতে ছাড়ছে না বিরোধীরা। বিজেপির ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, এটা তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ সমস্যা। সামনেই বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে কে টিকিট নেবে, তা নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় তৃণমূলের লড়াই শুরু হয়ে গিয়েছে। যার ফলস্বরূপ বর্তমান বিধায়কের বিরুদ্ধে তৃণমূলের একটা অংশ সোচ্চার হচ্ছেন। আসলে দুর্নীতি নিয়েই এখন তৃণমূলের জেলায় জেলায় গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে। মানুষ তৃণমূলের বিরুদ্ধে রায় দেওয়ার জন্য তৈরি। তবে 26 এর নির্বাচনে রাজ্যের যে বিধানসভায় তৃণমূলের যে প্রার্থী হবেন, অপর একটি গোষ্ঠী প্রস্তুত হয়ে রয়েছে, তাদেরকে হারিয়ে দেওয়ার জন্য। তাই বিরোধীদের সঙ্গে লড়তে গিয়ে তৃণমূল নিজের দলের সঙ্গে লড়াইয়ে প্রথম ধাপেই পরাজিত হয়ে যাবে বলেই খোঁচা দিচ্ছে গেরুয়া শিবিরের ঘনিষ্ঠ মহল।