প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট-
এই রাজ্যে বিজেপি এখন সুন্দর একটি স্ট্র্যাটেজি বেছে নিয়েছে। তারা খুব ভালো মতই জানে যে, তৃণমূল কংগ্রেস যেভাবে সংখ্যালঘুদের একচেটিয়া ভোট পায়, তাতে সেই সমস্ত সংখ্যালঘুদের কাছে রাজ্যের শাসক দল বুঝিয়ে দিয়েছে যে, বিজেপি হচ্ছে সংখ্যালঘু বিরোধী একটা রাজনৈতিক দল। তাই সংখ্যালঘুদের কাছে বিজেপি যদি দিনরাত পড়েও থাকে, তবুও তৃণমূলের এই ভুল বোঝানোর রাজনীতি থেকে তারা বের হতে পারবে না। সেই কারণে ২০২১ সালের পর থেকেই হিন্দুদের একত্রিত করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এমনকি এই রাজ্যের বুকে ঘটে যাওয়া মহেশতলা থেকে শুরু করে কাকদ্বীপের মত ঘটনার কথা তুলে ধরে হিন্দুদের তিনি একটাই কথা বলার চেষ্টা করছেন যে, এই রাজ্যে বর্তমান সরকারের আমলে হিন্দুরা নিরাপদ নয়। বরঞ্চ একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে তোষণ করতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তার প্রশাসন হিন্দুদের দেব, দেবীদের অসম্মান করছে প্রতিদিন, প্রতিমুহূর্তে। আর বিধানসভা নির্বাচনের যখন হাতেগোনা আর কয়েকটি মাস রয়েছে, তখন সেই হিন্দু ঐক্যে আরও বেশি করে শান দেওয়ার চেষ্টা করছেন শুভেন্দু অধিকারী সহ বিজেপি নেতারা। গতকাল কাটোয়ার সভা থেকে মহেশতলায় তুলসী মঞ্চ ভাঙ্গা ঘটনা থেকে শুরু করে কাকদ্বীপে মা কালীকে প্রিজম ভ্যানে তোলার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে, যারা এই কাজ করেছে, তারা যে ক্ষমার অযোগ্য এবং তাদেরকে যে কোনোমতেই ভোট দেওয়া যাবে না, তা উল্লেখ করে হিন্দুদের আরও এককাট্টা হওয়ার বার্তা দেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা।

বর্তমানে শুভেন্দু অধিকারী যখনই যে কর্মসূচিতেই যাচ্ছেন, সেখানেই তিনি হিন্দু ভোটকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। এমনকি হিন্দুদের নিজেদের সুরক্ষা এবং ধর্ম রক্ষা করার জন্য এই সরকারকে পরিবর্তন করা যে জরুরী, সেই বার্তা বারবার শোনা যাচ্ছে তার মুখ থেকে। বারবার রাজ্যের বিরোধী দলনেতা একটাই বিষয় প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছেন যে, হিন্দুদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। অর্থাৎ সমস্ত হিন্দু যাতে পরিবর্তনের লক্ষ্যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ২০২১ এর নির্বাচনে ভোট দেয় এবং তাদের ধর্ম সুরক্ষিত রাখার জন্যই যাতে তারা এই গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করেন, সেই আবেদন করছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। তবে সেই আবেদন করতে গিয়ে তৃণমূল সরকারের আমলে হিন্দুরা ঠিক কতটা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে, তার একের পর এক ঘটনা পরম্পরা সামনে এনে হিন্দুদের সঙ্গে এই রাজ্যের শাসক দল এবং তাদের নেতারা কতটা প্রতারণা করেছে, সেই কথা উল্লেখ করছেন শুভেন্দু অধিকারী। যার ফলে বিরোধী দলনেতার এই কথা শুনেও হিন্দুরা যথেষ্ট অনুপ্রাণিত হচ্ছে এবং তারা স্থির করে নিচ্ছেন যে, এবারের নির্বাচনে তারা তৃণমূলের বিরুদ্ধেই ভোট দেবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

গতকাল বর্ধমানের কাটোয়া সাংগঠনিক জেলার অন্তর্গত মেমারিতে পরিবর্তন সংকল্প সভায় বক্তব্য রাখেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। আর সেখানেই হিন্দু সনাতনীদের বার্তা দেন তিনি। শুভেন্দুবাবু বলেন, “আমি এখানে হিন্দু, মুসলিম না বলে বলব। হিন্দুদের ওপর এই আক্রমণ হচ্ছে কেন? মা কালীকে প্রিজন ভ্যানে তুলেছে। তৃণমূলকে ক্ষমা করবেন? ছাড়বেন না। মহেশতলাতে তুলসী মঞ্চ তুলে ফেলে দিয়েছে বিধর্মীরা পুলিশের সামনে। ছবি দেখেছেন মোবাইলে?” আর শুভেন্দু অধিকারী যখন এই কথা বলছেন তখন সভায় উপস্থিত মানুষের মধ্যে থেকেও ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। তারাও শুভেন্দু অধিকারীর এই বক্তব্যে সাড়া দিয়ে জানিয়ে দিচ্ছেন এবং বুঝিয়ে দিচ্ছেন যে, তারা এই হিন্দু বিরোধী সরকারের বিরুদ্ধেই এবার নিজেদের জনমত প্রতিষ্ঠা করবেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুভেন্দু অধিকারী খুব ভালোমতই জানেন যে, সংখ্যালঘু ভোট তাদের পক্ষে আসবে না। এক্ষেত্রে তাদের সমস্ত হিন্দু ভোটকেই একত্রিত করতে হবে। তবে হিন্দু ভোটের মধ্যে যাতে তৃণমূল ভাগ বসাতে না পারে, তার জন্যই তৃণমূলের শাসন কালে রাজ্যে হিন্দুদের দেব-দেবী থেকে শুরু করে হিন্দু ধর্মের ওপর যে আক্রমণ নেমে এসেছে, তার একের পর এক উদাহরণ প্রত্যেকটি সভায় তুলে ধরছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। আর হিন্দু সনাতনীদের কাছে সেই সমস্ত তথ্য তুলে ধরে তারা যাতে একত্রিত হয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধেই নিজেদের মত প্রতিষ্ঠিত করে, সেই ব্যাপারে নিশ্চিত হতে চাইছেন শুভেন্দু অধিকারী। দিনের শেষে তেমনটাই বলছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।