প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট- এই রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থায় যে দুর্নীতি রন্ধ্রে রন্ধ্রে ভরা, সেখানে যে ব্যাপক পরিমাণে শুধুমাত্র অনিয়মই হয়ে গিয়েছে তৃণমূল সরকারের আমলে, তা ইতিমধ্যেই স্পষ্ট। এসএসসিতে যে পরিমাণ দুর্নীতি হয়েছে, সেখানে যেভাবে অযোগ্যদের চাকরি দেওয়া হয়েছে, তার ফলে এই সরকারকে আর বিশ্বাস করতে পারছেন না মেধার ভিত্তিতে চাকরি দেওয়া পরীক্ষার্থীরা। তবে শুধু এসএসসি নয়, প্রাথমিক স্তরেও ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে দীর্ঘদিন ধরে। প্রায় ৫০ হাজার শূন্যপদ থাকলেও সেখানে নিয়োগ না হওয়ায় কিছুদিন আগেই রাস্তায় নেমেছিলেন ২০২২ সালে টেস্ট উত্তীর্ণরা। যেখানে বিধানসভার গেটের বাইরে তারা অবস্থান বিক্ষোভ পর্যন্ত করেছিলেন। পরবর্তীতে তাদেরকে যেভাবে পুলিশ টানা হ্যাঁচড়া করে সেখান থেকে সরিয়ে দিয়েছে। তা নিয়ে গোটা রাজ্য জুড়ে একটা সমালোচনার আবহ লক্ষ্য করা গিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, যে সরকার চাকরি দিতে পারে না, সেখানে টেট পরীক্ষা পাস করে যারা বসে রয়েছে, তারা কেন আন্দোলন করতে পারবে না? কেন এই রাজ্যের পুলিশ তাদের আন্দোলন করার অধিকারটুকু দেবে না? এইভাবে শিক্ষিত যুবক যুবতীদের সঙ্গে অসভ্যতা করার অধিকার পুলিশকে কে দিয়েছে? তবে পুলিশ প্রশাসন দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যতই শিক্ষিত যুবক যুবতীদের আন্দোলনকে আটকানোর চেষ্টা করুন না কেন, তাতে যে লাভের লাভ কিছু হবে না, তা প্রমাণ করে দিয়ে আজ আবার পথে নামতে চলেছেন ২০২২ সালের টেট উত্তীর্ণরা।

বিরোধীরা দাবি করে যে, এই রাজ্যের প্রশাসন, যেভাবেই হোক রাজ্যের শিক্ষিত সমাজকে বোকা বানিয়ে রাখতে চাইছে। দীর্ঘদিন ধরে এই রাজ্যে চাকরি নেই। আসলে সরকারের একটাই উদ্দেশ্য, চাকরি না দিয়ে, ভাতা দিয়ে শিক্ষিত সমাজের মেরুদন্ডটাকে ভেঙে দেওয়া। কিন্তু তৃণমূল সরকারের এই অসৎ উদ্দেশ্য ধরে ফেলেছে বাংলার প্রতিবাদী যুব সমাজ। যারা এতদিন ধরে পরীক্ষা দিয়ে পাস করে বসে রয়েছেন, তারা এবার চাকরির দাবিতে রাজপথে নেমেছেন। এসএসসির যে দুর্নীতি সামনে এসেছে, তা নিয়ে এমনিতেই গোটা রাজ্য জুড়ে আলোড়ন পড়ে গিয়েছে। সরকার চাপে রয়েছে। আর তার মধ্যেই এবার ২০২২ সালের টেট উত্তীর্ণরা সরকারের এবং প্রশাসনের সমস্ত বাধাকে অতিক্রম করে আজ বিকাশ ভবন এবং প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ অভিযানের ডাক দিয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই তাদের এই অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসন যে আগেভাগেই সতর্ক থাকবে এবং তারা যে এই শিক্ষিত সমাজকে বাধা দেওয়ার জন্য সব রকম চেষ্টা করবে, তা বলাই যায়। তবে প্রতিবাদের কণ্ঠস্বরকে তৃণমূল সরকার যে প্রশাসন দিয়ে দমাতে পারবে না, যতবার তাদের সঙ্গে অসভ্যতা করা হবে, তাদের বাধা দেওয়া হবে, তারা যে ততবারই রাজপথে নেমে নিজেদের দাবি এবং অধিকার আদায়ের জন্য এই আন্দোলন চালিয়ে যাবেন, তা যত সময় যাচ্ছে, ততই স্পষ্ট হতে শুরু করেছে।

জানা গিয়েছে, আজ ২০২২ সালের টেট উত্তীর্ণরা ফের রাজপথে নামছেন। যেখানে দুপুরে তারা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ এবং বিকাশ ভবন অভিযানের ডাক দিয়েছেন। তাদের একটাই দাবি যে, ৫০ হাজার যে শূন্যপদ রয়েছে, তা অবিলম্বে পূরণ করতে হবে। কিছুদিন আগেও তারা এই দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমেছিলেন। পুলিশের বাধাকে অতিক্রম করে তারা বিধানসভার গেটের বাইরে অবস্থান বিক্ষোভে বসেছিলেন। তারপর পুলিশ তাদের সঙ্গে রীতিমত দুর্ব্যবহার করে বলে অভিযোগ। গোটা ঘটনার প্রতিবাদ করতে দেখা যায় রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকেও। আর ফের আজ সেই একই দাবি নিয়ে তারা বিকাশ ভবন এবং প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ অভিযানের ডাক দিয়েছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টাটার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় এসেছিলেন। আর এবার টেটে যে কেলেঙ্কারি হয়েছে, তার জন্যই হয়ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তার সরকারের বিদায়ের ঘন্টা বাঁজতে শুরু করবে। এসএসসি থেকে শুরু করে প্রাথমিক শিক্ষায় নিয়োগ, সর্বক্ষেত্রে যে দুর্নীতির গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে এবং যেভাবে তার প্রতিবাদে পথে নামছেন চাকরি প্রার্থীরা, তাতে রীতিমত জর্জরিত এই রাজ্যের সরকার। তবে যখনই এই রাজ্যের সরকার যে কোনো ক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ লক্ষ্য করেছে, তখনই তারা পুলিশ প্রশাসনকে নামিয়ে দিয়েছে। প্রতিবাদীদের কণ্ঠস্বরকে দমন করার চেষ্টা করেছে। ২৬ হাজার চাকরি দুর্নীতির কারণে আদালতের পক্ষ থেকে বাতিল হয়ে যাওয়ার পর যে আন্দোলন হয়েছে, সেখানেও প্রশাসনের অতি সক্রিয়তা সেই আন্দোলনকে বাধাদান করতে দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিবাদীদের বিরুদ্ধে মিথ্যে মামলা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে বলে অভিযোগ। তবে এবার নতুন করে প্রাথমিকে নিয়োগের দাবিতে আন্দোলনের ঝাঁঝ যেভাবে বাড়তে শুরু করেছে, তাতে পুলিশ মামলা কোনো কিছু দিয়েই এই আন্দোলনকে দমন করার মত ক্ষমতা প্রশাসনের হবে না বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।