প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট- পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকায় যে দুধ এবং জল এক হয়ে রয়েছে এবং তা আলাদা করার জন্যই যে নির্বাচন কমিশন বিহারের মত বাংলাতেও বাড়তি নজর দিয়েছে, তা হয়ত বুঝতে পেরেছে তৃণমূল কংগ্রেস। সেই কারণেই রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের নির্বাচন কমিশন ঠিকমত পদক্ষেপ গ্রহণ করলে নাম বাদ যাবে এবং তার ফলে তৃণমূল ক্ষমতা থেকে খুব সহজেই বিদায় নিতে পারে। এই আশঙ্কাতেই এখন ভোটার তালিকা সংশোধনের বিরোধিতা করতে শুরু করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। তাদের বক্তব্য, বিজেপি নির্বাচন কমিশনকে কাজে লাগিয়ে অনেকের নাম বাদ দেওয়ার চেষ্টা করছে। যদিও বা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই অভিযোগকে গুরুত্ব না দিয়ে ইতিমধ্যেই নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বারুইপুর পূর্ব এবং ময়নার চারজন আধিকারিকের বিরুদ্ধে নেওয়া হয়েছে কড়া পদক্ষেপ। মুখ্যসচিবের কাছে চিঠি দিয়ে জাতীয় নির্বাচন কমিশন তাদের বিরুদ্ধে এফআইআর করার নির্দেশ দিয়েছে। আর এতেই ক্ষুব্ধ হয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশ্য সভা থেকে নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশ্যে যে মন্তব্য করলেন, তাতে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কবে ব্যবস্থা হবে, তা নিয়ে পাল্টা সোচ্চার হচ্ছে বিজেপি।

বস্তুত, এদিন নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে বেলাগাম আক্রমণ করে বসেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রকাশ্য সভা থেকে নির্বাচন কমিশনকে বিজেপির বন্ডেড লেবার বলে আক্রমণ করেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “দুই মাসের জন্য আপনারা ইলেকশনে আসেন, আবার চলে যান। বসন্তের কোকিলের মত। এবার নির্বাচনের অনেক দেরি আছে। এখন থেকেই সাসপেন্ড করতে শুরু করেছেন। হরিদাস সব, ক্রীতদাস সব। বিজেপির বন্ডেড লেবার। লজ্জা করে না? তুমি তোমার ক্ষমতা জানো না! অমিত শাহের দালালি করছ চেয়ারে বসে?” আর একজন মুখ্যমন্ত্রী, যিনি মানুষের ভোটে নির্বাচিত, সেই মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ্যে একেবারে নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে এই ধরনের আক্রমণ করবেন, এটা সত্যিই সংবিধান নিয়ে আলোচনা করা রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের কেউই মেনে নিতে পারছেন না। তারা সকলেই বলছেন যে, এবার অন্তত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই ধরনের মন্তব্যের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।

তবে শুধু রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরাই নয়, বিরোধীদের পক্ষ থেকেও মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি উঠতে শুরু করেছে। বিজেপির ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, বারবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবিধানিক সংস্থাগুলোকে চ্যালেঞ্জ জানান। আদালতকে মানেন না। আর এবার নির্বাচন কমিশনকেও চ্যালেঞ্জ জানানোর প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছেন তিনি। যেভাবে প্রকাশ্য সভা থেকে নির্বাচন কমিশনকে বেলাগাম আক্রমণ করলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। আসলে মুখ্যমন্ত্রী বুঝতে পেরেছেন যে, ভোটার তালিকায় সংশোধনী প্রক্রিয়া শুরু হলে তার দল আর পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় থাকবে না। সেই কারণেই এখন থেকেই গাত্রদাহ শুরু হয়েছে তৃণমূল নেত্রীর। যার ফলে তিনি নির্বাচন কমিশনকে বেলাগাম আক্রমণ করে নিজের সমস্ত সীমারেখা লংঘন করেছেন বলেই দাবি গেরুয়া শিবিরের।