প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট- অবশেষে বোঝা যাচ্ছে যে, তৃণমূল কংগ্রেস কতটা চাপে পড়েছে। তারা যতই দাবি করুক যে, তারা ২০০ এর বেশি আসন নিয়ে ক্ষমতায় আসবে, তাদের সেনাপতি যতই বড় বড় গলায় বলুন না কেন, এসআইআর করে বিজেপির আসন সংখ্যা কমবে, যতই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চতুর্থবার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখুক না কেন, তৃণমূল খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে যে, এবার ক্ষমতায় আসার রাস্তা অতটা প্রশস্ত নয়। আর সেই কারণেই কি সংহতি দিবসের মঞ্চে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাজনীতিতে সেভাবে পাত্তা না দেওয়া কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে তার প্রশংসা শোনা গেল? প্রশ্নটা তুলছে বিরোধীরা। পাশাপাশি তারা এটাও বলছে যে, একেই বলে ঠ্যালার নাম বাবাজি। এখন তৃণমূল মোক্ষম চাপে পড়েছে। তাই কল্যান বন্দ্যোপাধ্যায়ের মত নেতাকেও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্তুতি করে বোঝাতে হচ্ছে যে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কত বড় মাপের নেতা। কারণ ২০২৬ এ যদি দল ক্ষমতায় না আসে, তাহলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তো অনেক দূরের কথা, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে তার দলের নেতা নেত্রীদের কোনো অস্তিত্ব থাকবে না। তাই নিজেদের সংসার বাঁচাতেই সবাই মিলেমিশে এখন এক হওয়ার চেষ্টা করছে। কোনো রকমে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে এই রাজ্যের শাসক দল বলেই দাবি করছে বিরোধীরা।
আজ দিনভর রাজ্য রাজনীতিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন কর্মসূচি ছিল। একদিকে হুমায়ুন কবীরের বিতর্কিত বাবরি মসজিদের শিলান্যাস ঘিরে এমনিতেই সরগরম ছিল রাজ্য রাজনীতি। আর তার মধ্যে তৃণমূল আজ আবার সংহতি দিবস পালন করেছে। অন্যদিকে বিজেপির পক্ষ থেকে শৌর্য দিবস পালন করা হয়েছে। আর পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি যে হিন্দু ভোটকে একত্রিত করেছে, তা খুব ভালো মতই বুঝতে পেরেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তার দল তৃণমূল কংগ্রেস। তবে যে সংখ্যালঘু ভোট তৃণমূলের দিকে সবটাই আসবে বলে ধরে নিয়েছিল এই রাজ্যের শাসক দল, হুমায়ুন কবীর আজ বাবরি মসজিদে শিলান্যাসের অনুষ্ঠানে যে চমক দেখিয়ে দিয়েছেন, যেভাবে তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, তাতে তার এই হুঁশিয়ারি যদি সেটিং না হয়ে থাকে, তাহলে আগামী দিনে তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোটে যে একটা বড় থাবা বসতে চলেছে, সেই সম্পর্কে দ্বিমত নেই বিশেষজ্ঞদের মধ্যে। আর এসব দেখেই কি এবার সমস্ত দূরত্ব ঘুচিয়ে নিয়ে মিলেমিশ শুরু হয়ে গেল তৃণমূল নেতাদের মধ্যে? আজ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের যে প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, তাতে মঞ্চে যারা তৃণমূলের নেতা, নেত্রীরা ছিলেন, তারাও অনেকে হতবাক হয়ে গিয়েছেন। আর এই কল্যাণবাবুর মত সিনিয়র নেতার বক্তব্য শুনে বিরোধীরা বলছেন, পাঁকে পড়েছে তৃণমূল। তাই এখন ঐক্যবদ্ধ হয়ে লিমিটেড কোম্পানিকে বাঁচানোর চেষ্টা চলছে।
এদিন সংহতি দিবসের মঞ্চে বক্তব্য রাখতে গিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূয়সী প্রশংসা করেন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “অভিষেক হচ্ছে আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। অভিষেককে নিয়ে যে যতই হিংসা করুক, যে যতই রাগ করুক, বাংলায় যে এই নবীন প্রজন্ম রয়েছে, বাংলায় যে এই যুবসমাজ রয়েছে, সারা বাংলায় তারা আজ অভিষেককে নিয়ে স্বপ্ন দেখছে। দিদি আছে, দিদি থাকবে। দিদি যতদিন থাকবে, কেউ তৃণমূল কংগ্রেসের ক্ষতি করতে পারবে না। আর তারপরেই যিনি রয়েছেন, আমাদের সবার প্রিয়, পশ্চিমবঙ্গের মানুষের ভালোবাসার, তার নাম অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।” আর কল্যানবাবুর এই কথা শুনেই বিরোধীরা বলছেন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে সবার আগে তো বিস্ফোরক মন্তব্য করেছিলেন এই কল্যাণবাবুই। তিনিই তো প্রকাশ্য অসন্তোষ প্রকাশ করে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই রাজনৈতিক দক্ষতা নেই। আসলে তৃণমূল খুব ভালো মতই বুঝতে পারছে, এবার আর তাদের সাজানো সোনার সংসার টিকে থাকবে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও থাকবেন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় থাকবেন। কিন্তু সবাই থাকবেন, বিরোধী দলের নেতা নেত্রী হিসেবে। পশ্চিমবঙ্গে চতুর্থ বারের জন্য যে তৃণমূলের ক্ষমতায় আসা হচ্ছে না, তা কল্যাণবাবুর মত অভিজ্ঞ নেতারা হয়ত বুঝতে পেরেছেন। আর সেই কারণেই হয়ত তৃণমূলের এই সঙ্ঘবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা এবং কল্যাণবাবু দল যাতে পাকে না পড়ে, তার জন্য অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় স্তুতি করে নিজেদের ঐক্যবদ্ধ দেখানোর একটা মরিআ চেষ্টা করলেন। কিন্তু এসব করে লাভ হবে না। তৃণমূলের বিদায় এবার নিশ্চিত বলেই দাবি গেরুয়া শিবিরের ঘনিষ্ঠ মহলের।