প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট-
বাংলা ভাষায় একটি কথা আছে, যার জন্য করি চুরি, সেই বলে চোর। বিরোধীরা বলছেন, পার্থ চট্টোপাধ্যায় চাকরি চুরি করে জেলে গিয়েছেন, এটা ধ্রুব সত্য। গোটা পশ্চিমবঙ্গের মানুষ সেটা জেনে গিয়েছে। কিন্তু কাদের জন্য তিনি এই দুর্নীতি করেছেন, এটা যে একা পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দায় নয়, এটা যে তৃণমূল দলের সংগঠিত দুর্নীতি, তা তো আর রাজ্যের মানুষকে নতুন করে বোঝাতে হবে না। ফলে এখন পার্থ চট্টোপাধ্যায় জেল থেকে বাইরে বেরোনোর পর তাকে ঝেড়ে ফেলার যে সমস্ত চেষ্টা তৃণমূলের পক্ষ থেকে করা হচ্ছে, তাতে কি তৃণমূল এত সহজেই দায় ঝেড়ে ফেলতে পারবে? সামনে নির্বাচন। এখন পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে আবার দলে গ্রহণ করলে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে, এই সমস্ত কিছু ভেবে তৃণমূল হয়ত পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে কোনো রিস্ক নেবে না। কিন্তু এত দিন ধরে যাদের জন্য দুর্নীতি করে জেল খাটলেন, বাইরে বেরিয়েই কি সেই পার্থবাবু দলের কাছে সবথেকে বড় শত্রু হয়ে গেলেন? বিরোধীদের পক্ষ থেকে এই প্রশ্নটা উঠছে, তার কারণ, গতকাল পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিভিন্ন মন্তব্য নিয়ে তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করা হয়েছিল। আর সেই প্রশ্ন উঠতেই কল্যাণবাবু যে অঙ্গভঙ্গি করলেন এবং যে কথা বললেন, তাতেই স্পষ্ট যে, পার্থ চ্যাটার্জিকে ঝেড়ে ফেলার এখন সব রকম চেষ্টা শুরু হয়ে গিয়েছে তৃণমূলের মধ্যে।

প্রায় সাড়ে তিন বছর জেল খেটে অবশেষে বাড়িতে ফিরেছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তবে তাকে নিয়ে বাংলার একটি অংশের সংবাদমাধ্যমের যা আদিখ্যেতা শুরু হয়েছে, তা দেখতে দেখতে বিরক্ত বাঙালি। একটা চোর, একটা দুর্নীতিগ্রস্ত লোককে নিয়ে এত দিনভর খবর করার কি আছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তবে সকলের একটাই কৌতুহল যে, এবার তৃণমূল দল কি করে? এতদিন ধরে জেলে থাকা পার্থ চ্যাটার্জিকে কি আবার তৃণমূল সাদরে গ্রহণ করে নেয়, তার সাসপেনশন তুলে নেয়, নাকি এখনও তার সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখে? যদিও বা পার্থবাবু নিজেই বলেছেন যে, দলের পক্ষ থেকে এখনও কেউ তার সাথে যোগাযোগ করেননি। অবশ্য তৃণমূল যে এখন পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে দলে নেবে না বা তার সাসপেনশন তুলে নেবে না, সেই ব্যাপারে নিশ্চিত বিরোধীরা। কারণ এখন সাসপেনশন তুলে নিয়ে তাকে দলে গ্রহণ করলে তৃণমূলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হতে পারে। কারণ সামনেই বিধানসভা নির্বাচন। তাই যাদের জন্য দুর্নীতি করে পার্থ চ্যাটার্জি জেলে থাকলেন, এখন তাদের কাছেই কি তিনি সব থেকে বড় অপ্রিয় পাত্র হয়ে যাচ্ছেন? কারন একটাই। কারণ গতকাল কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে একটি মন্তব্য করেছেন। আর তার ফলেই মনে করা হচ্ছে যে, বিরোধীদের থেকেও হয়ত এখন তৃণমূলের কাছে সবথেকে বড় অপছন্দের কারণ পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

গতকাল তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক বৈঠক করেন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সাংবাদিক বৈঠকের একদম শেষে তাকে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের যে বিভিন্ন বক্তব্য, তা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। আর সাংবাদিক সেই প্রশ্ন শেষ করার আগেই রীতিমত হাত নাড়িয়ে মুখে বিরক্তি নিয়ে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। জানিয়ে দেন, “ওসব ব্যাপারে কথা বলব না।” আর এখানেই বিরোধীদের প্রশ্ন যে, এখন কথা বন্ধ করে দিলে কি করে হবে? এতদিন পার্থ চট্টোপাধ্যায় যে অপকীর্তি করেছেন, তার ভাগ যদি গোটা দল পেয়ে থাকে, যদি সকলে তার সুবিধে পেয়ে থাকে, তাহলে এখন পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করলে কি এত সহজেই পার পেয়ে যাবে তৃণমূল? তাহলে কি ব্যবহার করে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়াই একমাত্র কাজ এই রাজ্যের শাসক দলের? প্রশ্ন তুলছে বিরোধীরা।