প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট- গতকাল ছিল পুলিশ দিবস। আর সেই পুলিশ দিবসেই পুলিশের হয়ে ব্যাটন করতে গিয়ে এমন এক মন্তব্য করে বসলেন রাজ্যের মন্ত্রী ববি হাকিম, তার পরিপ্রেক্ষিতে পাল্টা প্রশ্ন তোলার সুযোগ পেয়ে গেল বিরোধীরা। এই রাজ্যের বুকে বারবার পুলিশ প্রশাসন যেভাবে আচরণ করছে, তাতে তারা তৃণমূলের দলদাস হয়ে গিয়েছে বলেই অভিযোগ করে বিরোধীরা। বিরোধীদের ক্ষেত্রে, প্রতিবাদী মানুষের ক্ষেত্রে পুলিশ যেভাবে কন্ঠরোধ করতে ব্যস্ত, যেভাবে সাধারণ মানুষদের শাসকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্য মিথ্যে কেস দিতে ব্যস্ত, তাতে পুলিশের ওপর এই রাজ্যের মানুষের আর কোনো ভরসা নেই। অন্তত তেমনটাই বিরোধীদের পক্ষ থেকে বারবার করে দাবি করা হয়। আর পুলিশ একের পর এক ভুল করে গেলেও, তা ছোটখাটো ঘটনা বলে মন্তব্য করে যারা সেই ভুল নিয়ে প্রতিবাদ করছেন, এবার তাদেরকেই সমাজবিরোধী বলে আখ্যা দিয়ে বসলেন কলকাতার মহানাগরিক।

কি ঘটনা ঘটেছে? গতকাল ছিল পুলিশ ডে। আর সেই পুলিশ দিবসের একটি কর্মসূচিতেই উপস্থিত হয়ে এই রাজ্যের পুলিশের ভূয়সী প্রশংসা করেন কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের মন্ত্রী ববি হাকিম। স্বাভাবিক ভাবেই তিনি শাসকদলের একজন উচ্চপদস্থ মন্ত্রী। তিনি তার সরকারের পুলিশের প্রশংসা করবেন, প্রশংসায় ভরিয়ে দেবেন, কোনো ভুল কাজ করলেও পুলিশের ত্রুটি দেখতে পাবেন না, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু পুলিশের কাজকর্ম নিয়ে যারা সমালোচনা করেন, তাদেরকে যে ভাষায় আক্রমণ করে বসলেন ববি হাকিম, তাতে প্রশ্ন উঠছে যে, এই রাজ্যে কি তাহলে গণতান্ত্রিক পরিসরে প্রতিবাদ করার মত অধিকার কারওর নেই? প্রতিবাদ করলেই, আওয়াজ তুললেই তাকে সমাজ বিরোধী আখ্যা দেওয়া হবে?

প্রসঙ্গত এদিন পুলিশ দিবসের কর্মসূচিতে উপস্থিত হয়ে ববি হাকিম বলেন, “একটা আধটা ভুল বা একটা আধটা ভুল ঠিক নয়, একটা হয়ে গেল ঘটনা। সেই ঘটনাকে নিয়ে তাদের যে পরিশ্রম, তাদের যে আত্মত্যাগ, সেটাকে যখন অপমান করা হয়, তা নিয়ে আপনাদের যেমন খারাপ লাগে, আমারও খারাপ লাগে। একটা আধটা ঘটনা ঘটে গেলে সেটাকে নিয়ে যারা আরও বেশি রোমাঞ্চিত করে, আরও বেশি কলঙ্কিত করার চেষ্টা করে, তারাই বেশি সমাজবিরোধী। তারা সমাজের বন্ধু নয়, তারা সমাজের ভালো চায় না।”

আর ববি হাকিমের এই মন্তব্যের পরেই পাল্টা প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে বিরোধীরা। বিজেপির ঘনিষ্ঠ মহলের বক্তব্য, একসময় এই রাজ্যের পুলিশকে সর্বশ্রেষ্ঠ আখ্যা দেওয়া হত। কিন্তু তৃণমূল সরকারের আমলে এই পুলিশ দলদাসের মত আচরণ করছে জন্যেই তাদের ভূমিকা নিয়ে বারবার করে প্রশ্ন উঠছে। সেক্ষেত্রে পুলিশ যে সমস্ত কাজ করছে, তা নিয়ে সমালোচনা করলে, তাদেরকে ধরিয়ে দিলেই তো তারা ঠিক পথে চলতে পারবে। তাই পুলিশের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কেউ যদি প্রতিবাদ করে, তাহলেই সে সমাজ বিরোধী হয়ে যাবে? আসলে এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে মন্ত্রীদের সমালোচনা শোনার মত কোনো ধৈর্য বা ক্ষমতা নেই। তাই একের পর এক অন্যায় করে গেলেও পুলিশ, প্রশাসনকে দিয়ে একের পর এক অন্যায়মূলক কাজ করিয়ে যাওয়ার পরেও তাদের সমালোচনা করা যাবে না, এটাই এই রাজ্যের নিয়ম। আর সমালোচনা করলেই সেই পুলিশকে দিয়ে মিথ্যে মামলা করিয়ে জেলে ঢোকানোর চেষ্টা হবে, দাগিয়ে দেওয়া হবে সমাজবিরোধী বলে। ববি হাকিমের মন্তব্যের পর কটাক্ষ করে তেমনটাই বলছেন বিরোধীরা।