প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট- পশ্চিমবঙ্গে ক্ষুদ্র, কুটির এবং বৃহৎ, কোনো শিল্পই আর দেখতে পাওয়া যায় না। তবে একটা শিল্প পশ্চিমবঙ্গে খুব বহাল তবিয়তে জেলায় জেলায় দেখতে পাওয়া যায়। সেটা হচ্ছে, বোমা শিল্প। বিরোধীদের অভিযোগ তেমনই। মাঝেমধ্যেই উত্তর থেকে দক্ষিণ, বিভিন্ন জায়গা থেকে খবর আসে যে, বোমা বিস্ফোরণ হয়েছে এবং সেই বোমা বিস্ফোরণে এত মানুষের আহত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। বিভিন্ন তদন্তকারী সংস্থা আসে। তদন্তকারী টিম গঠন হয়। তার তদন্ত হয়। কিন্তু সেই তদন্ত সম্পূর্ণ হতে না হতেই আবার কোনো এক জায়গা থেকে খবর চলে আসে বোমা বিস্ফোরণের। যার পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গে এখন বোমা শিল্প ছাড়া আর কোনো শিল্প নেই বলেই কটাক্ষ করে বিরোধীরা। কিন্তু প্রশ্ন ওঠে যে, যারা এই বোমা তৈরি করেন, বোমা বিস্ফোরণের সময় তো সব থেকে বেশি তাদেরই ক্ষতি হয়, কোনো এক পরিবারের ক্ষতি হয়। তাহলে সবকিছু জেনেও কেন তারা এই বোমা তৈরি করছেন? কাদের চাপ রয়েছে তাদের ওপরে? আর আশ্চর্যজনকভাবে যখনই পশ্চিমবঙ্গে কোনো ভোট আসে তার আগেই বিভিন্ন জেলায় জেলায় এই বোমা তৈরির খবর সামনে আসে। আর সেই বোমা তৈরি করতে গিয়ে বিস্ফোরণের খবর সামনে আসে। আজ আবারও সেই রকম একটি খবর সামনে চলে এলো।

যে পশ্চিমবঙ্গ সংস্কৃতির বাংলা বলে পরিচিত, যে পশ্চিমবঙ্গকে দেখে এক সময় গোটা ভারত অনুপ্রেরণা পেত, সেই পশ্চিমবঙ্গে আজকে অনুপ্রেরণার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে, বোমা বিস্ফোরণ। হ্যাঁ, বিরোধীরা অন্তত তেমনটাই বলেন। কারণ এই রাজ্যের বুকে বিভিন্ন সময়ে এই বোমা বিস্ফোরণের খবর আসে। মাসের মধ্যে একবার যদি পশ্চিমবঙ্গ থেকে বোমা বিস্ফোরণের খবর নাই এলো, তাহলে আর বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ তাকে বলা যাবে কি করে? আর বিরোধীদের এই সমস্ত টিপ্পনির মাঝেই আজ মুর্শিদাবাদে আবারও একটি বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে যেখানে বোমা বাধার সময় সেই বোমার বিস্ফোরণ হয়েছে। আর তার পরিপ্রেক্ষিতে একজন ব্যক্তি আহত হয়েছেন। ইতিমধ্যেই তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে এই বোমা বাধার সময় চারজন ব্যক্তি সেখানে ছিলেন। তাই একজন আহত হলেও, বাকি যে তিনজন রয়েছে, তাদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে সব থেকে বড় প্রশ্ন, গ্রেফতার করে কি হবে? আর তার থেকেও বড় প্রশ্ন যে, কাদের জন্য এবং কোন উদ্দেশ্যে এই বোমা বাঁধার কাজ চলছিল?

ইতিমধ্যেই গোটা বিষয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছে বিরোধীরা। তাদের বক্তব্য, এই বোমা বাধার কাজ চলছিল আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। যত বেশি করে নির্বাচনের দিনে এগিয়ে আসবে, ততই এই সমস্ত ঘটনা আরও বেশি করে সামনে আসবে। কারণ এই রাজ্যের শাসক দল পশ্চিমবঙ্গে প্রকৃত শিল্প স্থাপন করেনি, কলকারখানা করেনি। তাই নির্বাচনের আগে তারা বোমা, বন্দুক দেখিয়ে সাধারণ মানুষের মনে ভয় স্থাপন করে ভোট নেওয়ার চেষ্টা করছে। ভোটের দিন যে বোমা ব্যবহার করা হবে, হয়ত তা বাঁধতে গিয়েই এই বিপর্যয় হয়েছে। এই রাজ্য বর্তমানে জতুগৃহতে পরিণত হয়েছে।‌ আর যাই হোক, নিজেদের ক্ষতি করে, নিজেদের প্রাণ বিসর্জন দিয়ে এইরকম অবৈধ কাজ থেকে সকলের সরে আসা উচিত বলেই দাবি করছেন তারা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বোমা যারা বাঁধার কাজ করছেন, তাদেরও তো পরিবার আছে। তাদেরও তো সংসার আছে। কেউ একটা চাপ দিয়ে তাদের এই কাজ করাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই কোনো কিছুর পাওয়ার বিনিময়েই হয়ত তারা এই কাজ করছেন। কিন্তু সেই কাজ করতে গিয়ে যদি নিজের জীবনটাই না থাকে, যদি অন্য কারও জীবন চলে যাওয়ার জন্য আমাকে এই কাজ করতে হয়, তাহলে তার মধ্যে সার্থকতা কোথায়? তাই দিনের পর দিন গ্রেপ্তার হবে, পুলিশ ধরে নিয়ে যাবে, কিন্তু আসল সমস্যার সমাধানটা কবে হবে? সমাজের যারা প্রধান, তারা কবে এই ঘটনাকে বন্ধ করার জন্য নিজেরা এগিয়ে আসবেন? নাকি ক্ষমতা দখলের একটা বাসনা থেকেই চলছে আগামী নির্বাচনে জেতার আগে এই বোমা বাঁধার প্রক্রিয়া? যদি বিরোধীদের এই বক্তব্য সত্যি হয়, তাহলে কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সত্যিই বারুদের স্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক সমালোচকরা।