প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট-
এর আগেও এই রাজ্যের বুকে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর বান্ধবীর বাড়ি থেকে প্রচুর টাকা উদ্ধার হয়েছিল। আর সেই প্রথম রাজ্যে এই প্রবণতা শুরু হয়। আর তারপর বিভিন্ন জায়গা থেকে, বিভিন্ন ব্যক্তির বাড়ি থেকে বিভিন্ন দুর্নীতির তদন্ত করতে গিয়ে প্রচুর অর্থ উদ্ধার করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। কিছুদিন আগেই অবৈধ বালি পাচারের ঘটনায় সৌরভ রায়ের বাড়ি থেকে তারা লক্ষ লক্ষ টাকা উদ্ধার করেছিল। আর এবার সমাজের মেরুদন্ড বলে আমরা যাদের অভিহিত করি, সেই শিক্ষক অপূর্ব সরকারের শ্বশুরবাড়ি থেকে উদ্ধার হলো কোটি কোটি টাকা। যে টাকা গুনতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হলে পুলিশকে। বক্স খাটের ভেতর থেকে একের পর এক টাকার বান্ডিল উদ্ধার হতে দেখে চক্ষু চড়ক গাছ হয়ে যায় প্রশাসনেরও। আর এখানেই প্রশ্ন উঠছে, যখন দুর্নীতির জন্য কিছু যোগ্য শিক্ষকের চাকরি চলে গিয়েছে, তখন একজন শিক্ষক নিজের শ্বশুর বাড়িতে এত টাকা মজুত রাখলেন, এটা কি করে সম্ভব? কোথা থেকে পেলেন তিনি এত অর্থ? এদিকে এই ঘটনা সামনে আসার পর বিরোধীরা আবার কটাক্ষ করে বলছেন, খোঁজ নিয়ে দেখুন, যে শিক্ষকের এই কুকীর্তি ধরা পড়েছে, তিনি হয়ত তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত।

এবার আসা যাক আসল ঘটনায়। কি হয়েছে, তা জেনে নেওয়া যাক প্রথমে। ঘটনা যেটা ঘটেছে, সেটা শুনলে হয়ত অনেকেই আশ্চর্য হতে পারেন। কিন্তু এই রাজ্যে এখন প্রতারণা চক্র এমন ভাবে বাসা বেঁধেছে যে, সেটাই যেন স্বাভাবিক রীতিনীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনলাইন গেম এবং বেটিং চালানোর ঘটনায় প্রথমে গঙ্গারামপুর থানার পুলিশ এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছিল। যার নাম পিন্টু ঘোষ। পরবর্তীতে তারা আরও দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে। যার মধ্যে একজনের নাম বিশাল দাস এবং অপরজনের নাম অপূর্ব সরকার। আর এই অপূর্ব সরকার নামে ব্যক্তি আবার গঙ্গারামপুরের একটি হাইস্কুলের শিক্ষক। অপূর্ববাবুকে গ্রেফতার করার পর পুলিশ তাকে দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ করে। আর তারপরেই তার কাছ থেকে যে তথ্য পায় পুলিশ, তার ভিত্তিতেই তারা পৌঁছে যায় অপূর্ববাবুর শ্বশুরবাড়ি বালুরঘাটে। আর তার শ্বশুরবাড়িতে তল্লাশি চালানোর পর পুলিশের চোখ কপালে উঠে যায়। সেখানে আবার কি ঘটনা ঘটে গিয়েছে? যে ঘটনা ঘটেছে, তা হয়ত আমার আপনার শুনলে চমকপ্রদ মনে হতে পারে। চমকে যেতে পারি আমরা। কিন্তু এই রাজ্যের বুকে এখন এই সবই স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলেই প্রতিক্রিয়া দিচ্ছে বিরোধীরা।

অপূর্ববাবুকে জিজ্ঞাসাবাদের পর গঙ্গারামপুরের এসডিপিওর নেতৃত্বে বালুরঘাটে তার শ্বশুরবাড়িতে পৌঁছে যায় পুলিশ। তার শ্বশুরবাড়ি রঘুনাথপুর এলাকায় পুলিশ পৌঁছে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালায়। আর সেখানেই তারা বক্স খাটের ভেতর থেকে প্রায় ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা উদ্ধার করে। এখানেই শেষ নয়। এ তো সামান্য অংক। এর বাইরেও সেই শিক্ষকের যে নিজের বাড়ি, গঙ্গারামপুরে সেই বাড়ি থেকেও আরও বেশ মোটা অংকের টাকা উদ্ধার করে প্রশাসন। আর এখানেই প্রশ্ন উঠছে যে, অনলাইন এবং বেটিং চক্রের সঙ্গে জড়িত থেকে কতদিন ধরে এই অসাধু প্রক্রিয়া চালাচ্ছিলেন সমাজের মেরুদন্ড বলে পরিচিত এই গুণধর শিক্ষক? অনেকে বলছেন, যাদের আমরা সমাজের মেরুদন্ড বলে জেনে এসেছি, এখন তারাই সমাজের সবথেকে বড় প্রতারক হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকেই অবৈধভাবে চাকরি পেয়েছেন, সেই তালিকা সামনে এসেছে। আর যারা অবৈধভাবে চাকরি পেয়েছে, যারা এই সমস্ত অবৈধ কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত, তাদের জন্য অনেক বৈধ শিক্ষক-শিক্ষিকা, অনেক যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকার ভাবমূর্তি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

ইতিমধ্যেই শিক্ষককে গ্রেফতারের পর তার শ্বশুরবাড়ি থেকে কোটি কোটি টাকা উদ্ধারের ঘটনায় মুখ খুলতে শুরু করেছে বিরোধীরা। তাদের বক্তব্য, এই রাজ্যে দুর্নীতির অপর নাম তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূলের আমলে সব থেকে বেশি অর্থনৈতিক স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে। রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর বান্ধবীর বাড়ি থেকে পর্যন্ত টাকা উদ্ধার হয়েছে। ফলে শিক্ষকের বাড়ি থেকে উদ্ধার হবে, এটা তো অত্যন্ত স্বাভাবিক ঘটনা। খোঁজ নিয়ে দেখুন, সেই শিক্ষকও হয়ত তৃণমূলের সঙ্গে জড়িত। কারণ তৃণমূল করলেই এই রাজ্যে দুর্নীতি, চুরি, প্রতারণার সমস্ত রকম লাইসেন্স পাওয়া যায় বলেই টিপ্পনি কাটছে বিরোধীরা।