প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট-
এই রাজ্যের বুকে এখনও কিছু মানুষ আছেন, যারা পুলিশ প্রশাসন এবং শাসকের ভয়কে উপেক্ষা করে প্রতিবাদ করেন এবং চোখে চোখ রেখে লড়াই করেন। কিন্তু লড়াই করে কি তারা তাদের অধিকার আদায় করতে পারেন? এর আগে অভয়ার মৃত্যুর পর গোটা রাজ্যের মানুষ পথে নেমেছিল। কিন্তু দিনের শেষে কি হলো? অভয়া বিচার পেল না, কিন্তু আন্দোলন থেমে গেল। একইভাবে শিক্ষা নিয়োগ দুর্নীতি সামনে এলো। যারা যোগ্য ছিলেন, অযোগ্যদের কারণে তাদের চাকরিও চলে গেল। সেই সমস্ত যোগ্য চাকরিহারা ব্যক্তিকে আবার আদালতের নির্দেশে সরকারের দুর্নীতির কারণে পরীক্ষায় বসতে হচ্ছে। তারা অনেক প্রতিবাদ করেছিলেন যে, পরীক্ষায় বসবেন না। কিন্তু তারপরেও তাদের পরীক্ষায় বসতে হলো। আর আজ এসএসসির একাদশ, দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় দুই যোগ্য চাকরিহারা পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় নিজেদের এক অভিনব প্রতিবাদ সামনে আনলেন। যেখানে তাদের দুজনের টি-শার্টে লেখা ছিল, “শিরদাড়া বিক্রি নেই”। অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে যে, তারা এই রাজ্যের যে শাসক এবং তাদের যে দুর্নীতি, তার বিরুদ্ধে লড়াই করছেন এবং তাদের এই লড়াই থামবে না। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে যে, এই রাজ্যের বুকে এরকম লড়াই অনেকেআ করেছেন। কিন্তু দিনের শেষে তারা কি কোনো ফলাফল পেয়েছেন? বিরোধীরা বলছেন, অভিনব প্রতিবাদ অবশ্যই সাধুবাদ জানানোর মত। এই দুই পরীক্ষার্থী যেভাবে মাথা উঁচু করে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময়ও টি শার্টের মধ্যে দিয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন, তা অবশ্যই গ্রহণযোগ্য। তবে এই সমস্ত প্রতিবাদ করে লাভ নেই। আখেরে ভোটবাক্সে মানুষকে আসল প্রতিবাদটা করতে হবে। যতক্ষণ না এই তৃণমূল সরকারকে বিদায় জানানো যায়, ততক্ষণ দুর্নীতি এবং অস্বচ্ছতা প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে বজায় থাকবে বলেই দাবি করছে বিরোধীরা।

ইতিমধ্যেই এসএসসির নবম, দশম শ্রেণির পরীক্ষা গত রবিবার সমাপ্ত হয়েছে। আজ একাদশ দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষা হচ্ছে। তবে যারা যোগ্য, তাদের একটাই আফসোস যে, এতদিন ধরে তারা পড়াশুনা করে মেধার ভিত্তিতে চাকরি পেয়েছিলেন। কিন্তু রাজ্যের এবং এসএসসি দুর্নীতির কারণে কিছু অযোগ্যের কারণে আবার তাদের পরীক্ষায় বসতে হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই তারা প্রথমবার যেভাবে পরীক্ষা দিয়ে চাকরি পেয়েছিলেন, সেই একইভাবে তারা যে এবার পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হবেন, সেই নিশ্চয়তা কোথায়? এরপর যদি ফলাফলে তারা চাকরি না পান, তাহলে তাদের ভবিষ্যৎ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? তারা তো যোগ্যতার ভিত্তিতে এক সময় চাকরি পেয়েছিলেন। তাহলে কি এই রাজ্যের সরকারের দুর্নীতির জন্য দায়ী নয়? তার জন্য তারা কেন স্যাক্রিফাইস করবেন? তাই আজ দেখা গেল, বাঁকুড়ায় দুই পরীক্ষার্থী, যারা যোগ্য ছিলেন, তারা নিজেদের পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় একটি টি-শার্ট পড়ে পরীক্ষা দিতে যাচ্ছেন। যেখানে লেখা রয়েছে, “শিরদাঁড়া বিক্রি নেই।”

অবশ্যই অত্যন্ত ভালো কথা। তারা তাদের প্রতিবাদ অবশ্যই জানাতে পারেন। এই রাজ্যের বুকে যখন প্রতিবাদীদের খুঁজে পাওয়া যায় না, যখন বুদ্ধিজীবীরা সঠিক জায়গায় প্রতিবাদ করতে ভুলে যান, শুধুমাত্র কিছু ভাতা এবং পুরস্কার পাওয়ার লোভে, যে অভিযোগ বিরোধীদের মধ্যে থেকে উঠে আসে। তখন নিঃসন্দেহে এই প্রতিবাদ অবশ্যই সাধুবাদ জানানোর মত বিষয়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, তারা তো স্বচ্ছতা এবং স্বচ্ছ নিয়োগের জন্য প্রতিবাদ করছেন। দিনের শেষে এবার যে সরকার এবং এসএসসি সেই স্বচ্ছ নিয়োগ করবে, তার গ্যারান্টি আছে তো? যদি তাদের সেই লক্ষ্যই পূরণ না হয়, তাহলে এই সমস্ত প্রতিবাদ করে কি লাভ? আগে সরকারকে ব্যাপক চাপের মুখে ফেলে দিয়ে এটা নিশ্চিত করতে হবে যে, আর কোনো দুর্নীতি রাজ্যবাসী মেনে নেবে না। যদি দিনের শেষে এবারের নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হয়, তাহলে তাদের প্রতিবাদের মূল্য যে আছে, সেটা প্রমাণিত হয়ে যাবে। আর যদি এবারেও সরকার এবং এসএসসি দুর্নীতির মধ্যে দিয়ে কিছু অযোগ্য ব্যক্তিকে চাকরি করে দেওয়ার সুযোগ করে দেয়, তাহলে এই সমস্ত প্রতিবাদের যে এই রাজ্যের বুকে কোনো মূল্য নেই, তা আবারও প্রমাণ হয়ে যাবে। তাই বিরোধীদের বক্তব্য একটাই, টি-শার্টের মধ্যে দিয়ে প্রতিবাদ চলছে, অবশ্যই সেটা অব্যাহত থাকুক। রাজপথে প্রতিবাদ চলুক। কিন্তু আসল প্রতিবাদটা যেন ২০২৬ এর বিধানসভা নির্বাচনে হয়। তখন যেন এই সরকারের বিরুদ্ধে এই সমস্ত প্রতিবাদীরা একজোট হয়ে নিজেদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করেন। কারণ, এই সরকার সরলেই আর যাই হোক, দুর্নীতিকে কেন্দ্র করে যে অচলাবস্থা শিক্ষাঙ্গনে তৈরি হয়েছে, দুর্নীতিগ্রস্ত এই সরকারের পতন হলে তা ভেঙে দেওয়া কিছুটা হলেও সহজলভ্য হবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।