প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট-
এসআইআর আবহে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, প্রচুর বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের ভিড়। তারা ওপার বাংলায় ফিরে যাওয়ার জন্য বসে রয়েছেন। আর এই তথ্যকে সামনে এনে বিজেপি নেতারা দাবি করছেন যে, তারা এতদিন ধরে যে কথা বলতেন যে, পশ্চিমবঙ্গ অনুপ্রবেশ কারীদের আতুড়ঘর হয়ে গিয়েছে, তা তো এই চিত্রের মধ্যে দিয়েই স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠছে। তবে বিজেপি নেতারা যখন এই ধরনের বক্তব্য রাখছেন, তখন পাল্টা তৃণমূলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, অনুপ্রবেশ যদি হয়ে থাকে, তার জন্য তো দায়ী কেন্দ্রীয় সরকার। কারণ সীমান্তে প্রহরা দেয় বিএসএফ। ফলে তাদের গাফিলতির জন্যই অনুপ্রবেশ হয়েছে। কিন্তু এর পেছনেও যে একটা বড় গল্প রয়েছে, সেটা তৃণমূল বেমালুম অস্বীকার করে। মাঝেমধ্যেই বিজেপি নেতারা দাবি করেন যে, পশ্চিমবঙ্গে এখনও পর্যন্ত ৫৬৩ কিলোমিটার উন্মুক্ত রয়েছে, সেখানে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া সম্ভব হয়নি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সহযোগিতার অভাবের জন্য। তাই যে তৃণমূলের যে সমস্ত নেতারা অনুপ্রবেশ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার বা বিএসএফকে দায়ী করছেন, তারা আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের কাছে গিয়ে বলুন যে, এই বেড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে তারা কেন সহযোগিতা করছে না? আর তৃণমূল এবং বিজেপির এই যুক্তি, পাল্টা যুক্তির মাঝেই এবার সংসদে সেই অনুপ্রবেশ ইস্যু নিয়ে যে বক্তব্য রাখলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, তাতে সত্যিই তৃণমূলের যে প্রেস্টিজ পামচার হয়ে গেল, তা বলার অপেক্ষায় রাখে না।
এই রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস কতটা মিথ্যা কথা বলে, কিভাবে তারা সমস্ত দোষ কেন্দ্রীয় সরকার এবং বিজেপির ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করে, তা প্রতিমুহূর্তে প্রমান হয়ে যাচ্ছে। কেন এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর থেকেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে দেখে বেশি আতঙ্কিত হন এবং তাকেই বেশি আক্রমণ করেন, সেই সম্পর্কেও একটা ভাবনা রয়েছে বিশেষজ্ঞদের। কারণ তারা জানেন যে, অমিত শাহের যে রাজনৈতিক ট্র্যাটেজি এবং চোখে চোখ রেখে কথা বলার মত ক্ষমতা, তা দেখে তৃণমূল নেত্রী যথেষ্ট আতঙ্কিত। আর এই পরিস্থিতিতে যে অনুপ্রবেশ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে প্রতিমুহূর্তে চাপে রাখার চেষ্টা করেন তৃণমূল সাংসদরা, সংসদে এবার সেই তৃণমূলেরই মুখোশ খুলে দিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি যে যুক্তি দিলেন, তারপর তৃণমূলের যে সমস্ত সাংসদরা সংসদে বিজেপির বিরুদ্ধে গলা ফাটান, তাদের বলার মত কি কোনো জায়গা রয়েছে, তা নিয়ে উঠতে শুরু করেছে প্রশ্ন।
সূত্রের খবর, এদিন সংসদে অনুপ্রবেশ নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ভূমিকা নিয়ে সোচ্চার হয় তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিরা। যেখানে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় অনুপ্রবেশের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারকে দায়ী করেন। আর তার পাল্টা বক্তব্য রাখতে গিয়ে তৃণমূলের মুখোশ খুলে দেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের ২২১৬ কিলোমিটার এলাকা সীমান্ত। ১৬৫৩ কিলোমিটার বেড়া দেওয়া হয়েছে। উন্মুক্ত রয়েছে ৫৬৩ কিলোমিটার। এই উন্মুক্ত ৫৬৩ কিলোমিটার সীমান্তের পুরোটাই পশ্চিমবঙ্গে। শুধুমাত্র বাংলার সীমান্তে বেড়া দেওয়া সম্ভব হয়নি।” অর্থাৎ এতদিন যে অভিযোগ শুভেন্দু অধিকারী করে আসতেন যে, পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর অসহযোগিতার কারণেই সীমান্তে বেড়া দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, আর তার ফলেই অনুপ্রবেশ হচ্ছে, সেই একই কথা সংসদে তুলে ধরলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তাই এখন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি অমিত শাহের এই তথ্য ভুল হয়ে থাকে, তাহলে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী জবাব দিন। তিনি প্রকাশ্যে বলুন যে, অমিত শাহ মিথ্যে কথা বলছেন। আর যদি তিনি সেই কথা না বলতে পারেন, তাহলে তো কোনটা সাদা আর কোনটা কালো, তা দিনের আলোর মত স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বোঝা যাচ্ছে যে, এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং তার দলের নেতা, নেত্রীরা এতদিন অনুপ্রবেশকারী নিয়ে বিজেপিকে যেভাবে আক্রমণ করছিলেন, তাদের ঘাড়ে যেভাবে দোষ চাপাচ্ছিলেন, তার সবটাই মিথ্যে এবং ভিত্তিহীন। অন্তত তেমনটাই দাবি করছেন রাজনৈতিক সমালোচকরা।