প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট-
সর্ষে দিয়ে ভূত তাড়ানো হয়, এ কথা সবাই জানে। কিন্তু যদি সেই ভূত তাড়ানো সর্ষের মধ্যেই ভূত থাকে, তাহলে কি আদৌ ভূত তাড়ানো সম্ভব? বর্তমানে বাংলায় এসআইআর প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর যাদের দিয়ে এই প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার কথা, সেই বিএলওদের নিরপেক্ষতা নিয়ে ক্রমাগত প্রশ্ন তুলছে বিজেপি। তাদের বক্তব্য, অধিকাংশ জায়গায় তৃণমূলের সক্রিয় সদস্যদের বিএলও করা হয়েছে, যারা ঘুরপথে ভোটার তালিকায় কারচুপি করার একটা চেষ্টা করবে বলেই অভিযোগ করছে তারা। আর এসবের মধ্যেই এবার সেই সর্ষের মধ্যেই ভূত থাকার মত, যিনি বিএলও আধিকারিক হিসেবে এই এসআইআর প্রক্রিয়াকে দায়িত্বপূর্ণ সহকারে সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত করবেন, তিনিই কিনা প্রকাশ্যে তার বিরোধিতা করে বসলেন! যার ফলে আরও বেশি করে সেই বিএলওর ভূমিকা এবং নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ পেয়ে গেল বিরোধীরা।

প্রসঙ্গত, এসআইআর প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গে শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে বিরোধীদের কাছে এখন চিন্তার কারণ একটাই, বিএলওদের ভূমিকা। কেননা বিভিন্ন জায়গায় বিএলওরা নিরপেক্ষতা সহিত কাজ করছেন না বলেই অভিযোগ। আর এসবের মধ্যেই দেখা গেল, নদীয়ার শান্তিপুরে এক বিএলও, যার নাম প্রসেনজিৎ সাহা, তিনি প্রকাশ্যেই এসআইআর বিরোধী বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছেন। স্বাভাবিকভাবেই একজন বিএলও হিসেবে তিনি যখন দায়িত্ব পালন করছেন, তখন কি করে তিনি প্রকাশ্যে সেই এসআইআরের বিরোধিতা করছেন, তাহলে তিনি কি করে এই দায়িত্ব নিরপেক্ষতার সঙ্গে পালন করবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে বিজেপি।

ইতিমধ্যেই নদীয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা বিজেপির নেতা সোমনাথ কর বলেন, “সরাসরি দ্বিচারিতা। যিনি নিজে একজন বিএলও, তিনি বুথে বুথে গিয়ে মানুষকে এসআইআর সম্পর্কে বোঝাবেন এবং কাগজপত্র দেখে ভোটে নাম তুলবেন, এটা তার কাজ। তার আগে এই ব্যক্তি রাস্তায় দাঁড়িয়ে আমাদের এই যে নির্বাচন কমিশন, তার বিরুদ্ধে যত কথা বলা যায়, সেই সব কথা বলছেন। কুযুক্তি দিয়ে সাধারণ মানুষকে ক্ষেপিয়ে চলেছেন। মানুষ ঠকানোর কারণে যদি এসআইআরে প্রভাব পড়ে, তাহলে তার দায় এই ব্যক্তির ওপরেও বর্তায়। তিনি কিভাবে নিরপেক্ষভাবে কাজ করবেন, সেটাই মূল প্রশ্ন।” যদিও বা তিনি বাইরে যে সমস্ত কথা বলেছেন তার সঙ্গে তার কাজের কোনো প্রভাব পড়বে না বলে পাল্টা সাফাই দিয়েছেন সেই প্রসেনজিৎ সাহা। তিনি বলেন, “আমি স্কুলে পড়াই। সেখানে আমার বাইরের যে কর্মকাণ্ড বা বাইরের আমার যে বিশ্বাস, আমার শিক্ষা সম্পর্কে যে বিশ্বাস বা আমার এখানে যা হচ্ছে, সেটা তো আমার পড়ানোর মধ্যে রিফ্লেক্ট হয় না। আমি যখন পড়াতে যাই, তখন শিক্ষক হিসেবে পড়াই। বাইরে যখন আমি কথা বলি, সেটা আমার রাজনৈতিক মতামত ব্যক্ত করি। সেটা আমার রাজনৈতিক দর্শন। তার সঙ্গে আমার পেশা গুলিয়ে ফেললে হবে না।” তবে যিনি বিএলও হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন, তিনি যদি প্রকাশ্যে এইভাবে এসআইআরের বিরোধিতা করেন, তাহলে তিনি কতটা তার সরকারি কাজের মধ্যে নিরপেক্ষতা সহকারে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন, তা নিয়ে যে প্রশ্ন থেকেই যায়, সেই সম্পর্কে দ্বিমত নেই বিশেষজ্ঞদের মধ্যে। এখন একজন বিএলও হিসেবে প্রকাশ্যে এসআইআরের বিরোধিতা করার পর এই ব্যক্তিকে বিভিন্ন পদে রাখা হয় কিনা, আদৌ এর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয় কিনা নির্বাচন কমিশন, সেদিকেই নজর থাকবে সকলের।