প্রিয়বন্ধু মিডিয়া – ছাব্বিশের বিধানসভা ভোট যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই রাজ্য রাজনীতিতে তীব্র হচ্ছে অনুপ্রবেশ নিয়ে বিতর্ক। দক্ষিণ ২৪ পরগণার কাকদ্বীপে ‘বাংলাদেশি’ নিউটন দাসের নাম ভোটার তালিকায় ধরা পড়ার পর থেকেই রাজ্য রাজনীতি সরগরম। এর মধ্যেই সামনে এল আরও একটি চাঞ্চল্যকর অভিযোগ। দীর্ঘ ৩৫ বছর আগে বাংলাদেশ থেকে ভারতে এসে বসবাস শুরু করা এক বৃদ্ধ—অর্জুন দাস—দাবি করেছেন, স্থানীয় এক তৃণমূল নেতাকে মোটা টাকা দেওয়ার পরও তিনি ভোটার কার্ড পাননি। এই ঘটনা নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে ভোটার তালিকায় অনুপ্রবেশকারীদের অন্তর্ভুক্তি ও রাজনৈতিক সুবিধাভোগ নিয়ে।

বৃদ্ধ অর্জুন দাসের দাবি, তিনি কাকদ্বীপের শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ গ্রাম পঞ্চায়েতের পূর্ব গঙ্গাধরপুরে বসবাস করেন। ভারতীয় এক মহিলাকে বিয়ে করে এই দেশেই সংসার গড়েছেন। তাঁর আধার ও প্যান কার্ড থাকলেও ভোটার কার্ড এখনও হয়নি। প্রায় ১২ বছর আগে স্থানীয় তৃণমূল নেতা কাশীনাথ বিশ্বাস তাঁকে ভোটার কার্ড করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা নেন। সেই টাকা অর্জুন নাকি তাঁর স্ত্রীর গয়না বিক্রি করে জোগাড় করেছিলেন। কিন্তু টাকা নেওয়ার পর বহু বছর পেরিয়ে গেলেও ভোটার কার্ড হাতে আসেনি।

অর্জুনের অভিযোগ সামনে আসতেই বিতর্কে জড়িয়েছে শাসকদল। অভিযুক্ত কাশীনাথ বিশ্বাস যদিও সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। কাশীনাথের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রয়েছে স্থানীয় তৃণমূল নেতা দেবাশিস দাসের। দেবাশিস অবশ্য দাবি করেছেন তিনি “অর্জুন” নামে কাউকে চেনেন না, তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি আরও জানিয়েছেন, যদি কোনওভাবে অর্জুনের থেকে কেউ টাকা নিয়ে থাকে, তবে সেই অর্থ ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে এবং পুলিশকে বিষয়টি জানানো হবে। যদিও এত বছর পরে এই অভিযোগ উঠলেও প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।

এই ঘটনার পর বিজেপি আক্রমণের সুর চড়িয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, তৃণমূলের ‘বড় মাথারাই’ টাকা নিয়ে বাংলাদেশিদের ভোটার তালিকায় ঢোকাচ্ছেন। এমনকি, অনুপ্রবেশকারীদের নাম ভোটার তালিকায় ঢোকানো হচ্ছে ভোটব্যাংকের স্বার্থে। নিউটন দাসের ঘটনা সামনে আসার পর তৃণমূল নেতার সঙ্গে তাঁর ছবি ভাইরাল হওয়ায় যেমন শোরগোল পড়েছিল, এবার অর্জুন দাসের অভিযোগ তৃণমূলের আরও অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিজেপির দাবি, এভাবে ‘ভোট কারচুপি’ বন্ধ না করলে গণতন্ত্রের ভিত্তিই দুর্বল হবে।

সবমিলিয়ে, ভোটের আগে অনুপ্রবেশ ইস্যু রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে আগুন ধরিয়েছে। একদিকে ভোটার তালিকায় সন্দেহজনক নাম, অন্যদিকে স্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে টাকা নেওয়ার অভিযোগ—এই দুই বিষয় মিলে শাসক দলের ভাবমূর্তিতে বড় ধাক্কা দিতে পারে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।