রাজ্য রাজনীতিতে ফের উত্তেজনার পারদ চড়ালেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সোমবার বোলপুরে দাঁড়িয়ে তিনি তৃণমূল নেতা কাজল শেখের বিরুদ্ধে তোলাবাজি, সাম্প্রদায়িক বৈষম্য এবং জেলা পরিষদে ‘হিন্দু বঞ্চনার’ অভিযোগ তোলেন। অনুব্রত মণ্ডলের পরে এবার কাজল শেখই হয়ে উঠেছেন বীরভূমে বিজেপির মূল টার্গেট। শুভেন্দুর ভাষায়, “কাজল শেখ আরেকটা গর্তে ঢুকে পড়েছে, মাল তুলছে। বীরভূম জেলা পরিষদে কোনও হিন্দু ঠিকাদার কাজ করতে পারে না। কাজ করতে গেলে ২০ শতাংশ কাটমানি দিতে হয়।” তাঁর এই অভিযোগকে কেন্দ্র করে জোর বিতর্ক শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে।

শুভেন্দুর অভিযোগ অনুযায়ী, জেলা পরিষদের সভাধিপতির ঘনিষ্ঠ বাপ্পা শেখ, দিলীপ শেখ, সুমন হোসেন এবং কাদির জিলানিরা নিয়মিত হিন্দু ঠিকাদারদের ভয় দেখিয়ে কাটমানি আদায় করে। এমনকি, তাঁদের বাড়িতে গিয়ে লেটারহেডে জোর করে সই করিয়ে টেন্ডার প্রত্যাহার করানো হয় বলেও দাবি করেন তিনি। তাঁর মতে, “ওরা জেলা পরিষদকে হিন্দুমুক্ত করার পরিকল্পনা করছে। এটা ভয়াবহ।” তিনি আরও বলেন, জেলার সরকারি বালি ঘাটগুলো থেকে টাকা ওঠে বাপ্পা শেখদের মাধ্যমে, আর প্রতিদিন প্রায় ১০ লক্ষ টাকা কাজল শেখের কাছে পৌঁছায়।

এই অভিযোগে শুধু আর্থিক নয়, ধর্মীয় বিভাজনের প্রসঙ্গও টেনে এনেছেন শুভেন্দু। তাঁর বক্তব্য, জেলা প্রশাসনে হিন্দু ঠিকাদারদের পরিকল্পিতভাবে প্রান্তে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি, কাজল শেখের প্রভাব বীরভূমের পাথর খাদান থেকে শুরু করে জেলার নানা প্রশাসনিক স্তর পর্যন্ত ছড়িয়ে রয়েছে বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, “নলহাটির পাথর ক্রাশার থেকেও নিয়মিত মোটা টাকা ওঠে। যার বড় অংশ সরাসরি যায় কাজল শেখের পকেটে।” এভাবেই বীরভূমে আর্থিক এবং রাজনৈতিক ক্ষমতার অশুভ সখ্যের ছবি তুলে ধরেন শুভেন্দু।

শুধু আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগেই থেমে থাকেননি তিনি। এদিন আরও বিস্ফোরক দাবি করে বলেন, “একসময় অনুব্রতর দয়ায় টিকে ছিল কাজল। কোলাঘাটে আমার অফিসে এসে পা ধরেছিল। এখন নিজেই দ্বিতীয় কেষ্ট হয়ে উঠেছে।” তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট, রাজ্যের রাজনীতিতে কাজল শেখ এখন তৃণমূলের নতুন ‘চালক’ হয়ে উঠেছেন, এবং তাঁর উত্থান নিয়েই উদ্বেগে বিরোধীরা। ছাব্বিশের বিধানসভা নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে, রাজনীতিতে ব্যক্তিগত আক্রমণ এবং নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ততই বাড়ছে। বীরভূমে দাঁড়িয়ে শুভেন্দুর এই অভিযোগ রাজ্য রাজনীতিকে আরও একধাপ উত্তপ্ত করল।