প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট – ২৬ এর বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন জেলার স্তরের সংগঠন ঢেলে সাজিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। তবে এবার আরও বড় সিদ্ধান্ত নিচ্ছে রাজ্যের শাসক দল। সমস্ত বাঁধা ধরা নিয়মের বাইরে গিয়ে এবার তারা যা সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে, তা শাসকদলের ক্ষেত্রে বড়সড় ঝাকুনি বলেই মনে করা হচ্ছে। কিন্তু কি সেই সিদ্ধান্ত? যতদূর খবর পাওয়া যাচ্ছে যে, তৃণমূলের জেলা স্তরের সংগঠন সাজানোর পর ব্লক স্তরের মাদার সংগঠন নতুন করে সাজানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল। তবে সেই ব্লক স্তরের সংগঠন সাজানোর আগেই এবার রাজ্যস্তরের ছাত্র থেকে শুরু করে যুব, শ্রমিক থেকে মহিলা, সমস্ত সংগঠনের ক্ষেত্রে কারা মাথা হবেন, তাদের নাম ঘোষণা করতে চলেছে রাজ্যের শাসক দল।
বলা বাহুল্য, অপারেশন সিঁদুরের পরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক স্তরে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে যে প্রতিনিধি দল পাঠানো হয়েছিল, সেখানে ছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলে তিনি দীর্ঘদিন বাইরে ছিলেন। আর সেই সময় ব্লক স্তরের সংগঠন নিয়ে নবান্নে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছিলেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। বর্তমানে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যে ফিরে এলেও, ব্লক স্তরের সংগঠন নিয়ে বেশ কিছু জটিলতা থাকার কারণে আগেই তৃণমূলের রাজ্য স্তরে ছাত্র থেকে শুরু করে যুব মতো সংগঠনে সভাপতিদের নাম ঘোষণা হয়ে যাওয়ার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। এক্ষেত্রে বর্তমানে তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতি থাকা সায়নী ঘোষ যে আর দায়িত্বে থাকছেন না, তা একপ্রকার নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে তার জায়গায় কে দায়িত্বে আসবেন, জয়া দত্ত নাকি দেবরাজ চক্রবর্তী, সেটা নিয়েও চড়ছে জল্পনার পারদ। অন্যদিকে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি থাকা তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য্যকেও তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে। কেননা তিনি দীর্ঘদিন এই পদে রয়েছেন। অন্যদিকে আরজিকরের ঘটনার পর তৃণমূল ছাত্র পরিষদে সেই ভাবে সক্রিয়তা ছিল না বলে দলের অনেক প্রবীণ নেতা অভিযোগ করেছিলেন। আর এই সমস্ত কিছু বিষয়কে সামনে রেখেই তৃণমূল ছাত্র পরিষদের পরবর্তী মুখ কে হবে, তা নিয়েও ছাত্র সংগঠনের মধ্যে তৈরি হয়েছে জল্পনা। একইভাবে শ্রমিক সংগঠনে থাকা ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের বদলে অন্য কেউ আসবেন, নাকি তিনিই থাকবেন, তা নিয়েও চর্চা শুরু হয়েছে। তবে এক প্রকার ঠিক আছে যে, মহিলা সংগঠনের সভানেত্রী পদেই থাকবেন রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য্য। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেখানেও বদল হবে কিনা, তা নিয়েও মুখ খুলতে নারাজ তৃণমূল নেতৃত্ব।
এদিকে দলের এই শাখা সংগঠনের মুখ নিয়ে তৎপরতা সব মহলেই গুঞ্জন সৃষ্টি করেছে। তৃণমূলের কর্মীরা কার্যত মুখিয়ে রয়েছেন যে, ছাত্র থেকে শুরু করে যুব, শ্রমিক থেকে শুরু করে মহিলা, সেখানে ২৬ এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে কারা দায়িত্ব পান! কারণ যারাই দায়িত্ব পাবেন, তাদের ওপর ভরসা করেই যে দল ২৬ এর নির্বাচন পার করতে চলেছে, তা একপ্রকার স্পষ্ট হয়ে যাবে। এদিন এই ব্যাপারে এক তৃণমূল নেতা বলেন, “২৬ এর ভোটের আগে শাখা সংগঠনগুলিতে কিছুটা তো বদল হবেই। তবে কে কোন সংগঠনে দায়িত্ব পাবেন কোথায় বদল আসবে। তা এখনই বলা যাবে না। কারণ শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।”
তবে তৃণমূল ব্লক স্তরের সংগঠনের আগে নিজেদের শাখা সংগঠনগুলির রদবদল করলেও, তা নিয়ে ভাবতে নারাজ বিরোধীরা। তাদের বক্তব্, তৃণমূল যতই নিজেদের সংগঠনে বদল আনুক, মানুষ এবার তৃণমূলকেই আস্থাকুঁড়ে ছুড়ে ফেলে দেবে। দলে আর বদল এনে কোনো লাভ হবে না। তৃণমূলের কর্মীরাই তৃণমূলের ওপর সবথেকে বেশি বিরক্ত। কারণ যারা দলকে ক্ষমতা এনেছে, তারাই আজকে গুরুত্বহীন। অন্য দল থেকে এসে নেতারা তৃণমূলে জায়গা করে নিয়েছে। আর তাদের জন্য আজকে তৃণমূল জনবিরোধী হয়ে গিয়েছে। তাই তারা কাকে কোন পদে বসালো, তা নিয়ে বাংলার মানুষ ভাবিত নয়। বাংলার মানুষ অপেক্ষা করছে, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হলে তারা এই রাজ্যের শাসক দলকে নবান্ন থেকে উৎখাত করবে। তাই তৃণমূল এখন নিজেদের বিদায়ের দিন গোনা শুরু করুক বলেই দাবি বিরোধী শিবিরের।