প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট – অবশেষে জেগে উঠেছে বাংলার নারী শক্তি। লক্ষ্মীর ভান্ডার দিয়ে বাংলার মা-বোনেদের মুখ বন্ধ রাখার যে চেষ্টা এই তৃণমূল সরকার করেছিল বলে অভিযোগ তোলে বিরোধীরা, সেই চেষ্টার কি এবার অবসান হতে শুরু করলো? যে বীরভূম জেলায় এতদিন দাপট দেখিয়ে এসেছিলেন অনুব্রত মণ্ডল, এবার কিন্তু তার বিরুদ্ধে তাকে ঘিরে যে উচিত শিক্ষা দিলো মহিলা বাহিনী, তাতে সেই মা-বোনেদের স্যালুট জানাচ্ছে গোটা রাজ্যবাসী। শুধু বীরভূম নয়, অনুব্রত মণ্ডল যেভাবে এক পুলিশ কর্তাকে ফোন করে তার মা-বউ তুলে কদর্য ভাষায় আক্রমণ করেছেন, তাতে পুলিশের না হয় মেরুদন্ড নেই, তারা না হয় পদক্ষেপ নিচ্ছে না, কিন্তু একজন মহিলা হয়ে আর একজন মহিলার প্রতি সহমর্মিতা দেখানোর জন্য গোটা রাজ্যের মা-বোনেদের এভাবেই পথে নেমে তৃণমূলের গুন্ডা নেতা অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া উচিত বলেই দাবি করছে বিরোধীরা।
কি ঘটনা ঘটেছে? গতকাল অর্থাৎ শনিবার হাওড়ার জিটি রোডের পঞ্চানন তলা মোড়ে পথে নামে সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি। যেখানে বোলপুরের আইসি লিটন হালদারের মা, বউ তুলে যে কদর্য ভাষায় তাকে হুমকি এবং গালিগালাজ দিয়েছেন অনুব্রত মণ্ডল, তাতে তারা একটি প্রতিবাদ করেন। যেখানে মহিলারা সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে অনুব্রত মণ্ডলের ছবি হাতে নিয়ে সেই ছবিতে জুতোর মালা পরিয়ে দেন। পাশাপাশি তার গ্রেফতারের দাবি তুলে সোচ্চার হন। করা হয় পথ অবরোধও। আর এই চিত্র সামনে আসার পরেই একটা বিষয় স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে যে, পুলিশের মা, বউকে অপমান করলে পুলিশ চুপ থাকতে পারে। কিন্তু রাজ্যের সাধারণ মহিলারা কিন্তু আর চুপ থাকবেন না। তারা কিন্তু এই ঘটনার বিরুদ্ধে এবার রাস্তায় নামতে শুরু করেছেন। পুলিশের না হয় মেরুদন্ড নেই। কিন্তু পুলিশের মা-বউকে অপমান করা মানে যে, বাংলার প্রত্যেকটি মহিলাদের অপমান করা, সেই নিয়ে যেভাবে সাধারণ মহিলারা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করলেন, অনুব্রত মন্ডলের মত নেতার থোতা মুখ যেভাবে ভোঁতা করে দিলেন, তাতে পুলিশের কবে শুভ বুদ্ধির উদয় হবে, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলছে বিরোধীরা।
বিরোধীদের দাবি, এই রাজ্যের পুলিশের বিন্দুমাত্র লজ্জা বলতে কিছু নেই। তাদের জন্য সাধারণ মানুষ লড়াই করছে। কিন্তু তারা নিজেদের মেরুদন্ড সোজা রেখে অনুব্রত মণ্ডলকে বাড়ি থেকে তুলে এনে জেলের ঘানি টানাতে পারছে না। বহুদিন সময় চলে যাওয়ার পর অনুব্রত মণ্ডল পুলিশের কাছে গিয়ে জেরার মুখোমুখি হয়েছিলেন। কিন্তু এত বড় অপরাধের পরেও কেন তাকে ছেড়ে রাখা হচ্ছে? তাহলে কি পুলিশ তৃণমূলের দলদাস? তাদের বাড়ির মা-বউকে তুলে একজন তৃণমূল নেতা অপমান করছেন, এটা তো সাধারণ মানুষের গায়ে লাগছে। কিন্তু পুলিশ কেন নিজেদের এই অপমান মেনে নিচ্ছে? শুধুমাত্র শাসকের তাবেদারি করাই কি এই রাজ্যের পুলিশের একমাত্র কাজ? প্রশ্ন তুলছে বিরোধীরা।
পর্যবেক্ষকদের মতে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মহিলাদের জন্য অনেক কাজ করেছেন বলে এতদিন দাবি করতেন। কিন্তু তার দলের গুণধর নেতা অনুব্রত মণ্ডল যেভাবে একজন পুলিশের মা-বউকে কদর্য ভাষায় হুমকি দিলেন, আক্রমণ করলেন, তারপর কিন্তু মহিলারা আর তৃণমূলের প্রতি বিন্দুমাত্র ভরসা রাখতে পারছেন না। রাজ্যের সাধারণ মানুষ এবার পথে নামতে শুরু করেছেন। বিশেষ করে মহিলারা, তারা বুঝতে পেরেছেন যে, লক্ষীর ভান্ডার দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যতই তাদের ভোট নেওয়ার চেষ্টা করুন না কেন, আজকে অনুব্রত মণ্ডল পুলিশের মা-বউকে ছাড়ছেন না! কালকে যে তাদের তৃণমূল নেতারা এই ধরনের হুমকি দেবেন না, তার কি গ্যারান্টি আছে? যারা পুলিশকে ভয় পায় না, তারা যে রাজ্যের সাধারণ মা-বোনেদের ওপর চরম নির্যাতন চালাতে পারে এবং এত কিছু হওয়ার পরেও যে পুলিশ চোখ বন্ধ করে থাকে, তা তো দিনের আলোর মত পরিষ্কার। তাই এবার নিজেদের বাঁচার জন্য, কোনো ভয় না পেয়ে রাস্তায় নেমে এবার তৃণমূল নেতাদের সবক শেখানোর কৌশল বেছে নিলো মহিলা বাহিনী। যা ২৬ এর ভোটের আগে তৃণমূলের কাছে যথেষ্ট চিন্তার কারণ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।