প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট – তৃণমূল কংগ্রেসের দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা নিয়ে সোচ্চার বিজেপি। রাজ্যের সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন যে, এত দুর্নীতির অভিযোগ তৃণমূলের নেতাদের বিরুদ্ধে উঠছে, কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ কোথায় হচ্ছে? তাহলে কি সেটিং রয়েছে কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যের? যদি সঠিক অভিযোগই থাকবে, তাহলে কেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা অ্যাকশন নিতে পারছে না? কেন তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে না এই রাজ্যের বিভিন্ন দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকা তৃণমূল নেতাদের? আর এই সমস্ত প্রশ্নের মধ্যেই এবার তৃণমূল নেতা কুনাল ঘোষের বিরুদ্ধে যে পদক্ষেপ গ্রহণ করলো কলকাতা হাইকোর্ট, তাতে কিন্তু চিন্তা বাড়ছে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে। তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ যে, ২৬ এর নির্বাচনের আগে তাদের হয়ে যে কুনাল ঘোষ প্রতিনিয়ত টিভি চ্যানেলে বক্তব্য রাখেন, তাদের দোষ ত্রুটিকে ঢাকার চেষ্টা করেন, সেই কুনাল ঘোষই বড় বিপদের মুখে পড়বেন না তো? কিন্তু কি ঘটনা ঘটেছে? সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্ট যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তাতে গোটা তৃণমূল পরিবার এখন রীতিমত উদ্বিগ্ন বলেই মনে করা হচ্ছে।
বলা বাহুল্য, ইতিমধ্যেই কুনাল ঘোষের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মত মারাত্মক অভিযোগ উঠেছে। আর তার পরিপ্রেক্ষিতেই এই তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টের পক্ষ থেকে একটি রুল জারি করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই সেই ব্যাপারে নারকেলডাঙ্গা থানায় একটি নোটিশ পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। যেখানে আদালতের পক্ষ থেকে নির্দেশ দিয়ে জানানো হয়েছে যে, আগামী ১৬ জুন বেলা সাড়ে বারোটার সময় হাইকোর্টের তিন সদস্যের যে বিশেষ বেঞ্চ সেখানে সশরীরে উপস্থিত থাকতে হবে কুনাল ঘোষকে। শুধু তাই নয়, সেখানে উপস্থিত থেকে তাকে জানাতে হবে যে, কেন তার বিরুদ্ধে আদালত কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে না এবং কেন তাকে জেলে পাঠানো হবে না!
এদিকে কুনাল ঘোষের বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করতেই রীতিমত চাপে পড়ে গিয়েছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। বিরোধীদের দাবি অবশ্য তেমনটাই। তারা দাবি করছেন যে, সামনে থেকে এখন প্রতিনিয়ত তৃণমূল যে সমস্ত কীর্তিকলাপ করছে, তাকে যদি ঢাকতে হয় এবং যুক্তি দিতে হয়, তাহলে তার জন্য প্রধান মুখ হচ্ছেন এই কুনাল ঘোষ। স্বাভাবিকভাবেই তার বিরুদ্ধে যখন আদালত পদক্ষেপ গ্রহণ করছে, তখন নিঃসন্দেহে যদি বড় কিছু ঘটনা ঘটে যায়, তাহলে চাপের মুখে পড়ে যেতে পারে রাজ্যের শাসকদল। আর সামনেই ২০২৬ এর বিধানসভা নির্বাচন। ফলে তার আগে কুনাল ঘোষের ক্ষেত্রে কলকাতা হাইকোর্টের এই কড়া পদক্ষেপ তৃণমূলকে যে যথেষ্ট চ্যালেঞ্জের মুখে রাখবে, সেই ব্যাপারে নিশ্চিত একাংশ। তবে তৃণমূলের একটা অংশ অবশ্য এই নোটিশকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলেই দাবি করছেন। তাদের যুক্তি, প্রতিনিয়ত সংবাদ মাধ্যমে বিরোধীদের কুৎসা, অপপ্রচারের চক্রান্ত ব্যর্থ করে দিচ্ছেন কুনাল ঘোষ। তাই তার কণ্ঠস্বরকে যাতে দমানো যায়, তার জন্যই তার বিরুদ্ধে একটা গভীর চক্রান্ত হচ্ছে।
পর্যবেক্ষকদের মতে, কুনাল ঘোষ সংবাদমাধ্যমের সামনে নিজের দলের দোষ, ত্রুটি থাকার জন্য প্রতিনিয়ত ব্যাটন লড়ে যান। নিজের মত করে যুক্তি দিয়ে তিনি চেষ্টা করেন, যাতে দল অস্বস্তিতে না পড়ে। ফলে সেই কুনাল ঘোষের বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টের এই ধরনের পদক্ষেপ যথেষ্ট চিন্তায় রাখবে স্বয়ং দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। কারণ ২০২৬ এর বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি এখন থেকে নিতে শুরু করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। বিভিন্ন ঘটনায় তারা জর্জরিত। মহার্ঘ ভাতা থেকে শুরু করে ২৬ হাজার চাকরি, এই সমস্ত অস্বস্তি যখনই এসেছে, তখন নিজের মত করে যুক্তি দিয়ে দলকে কিছুটা হলেও সেফ সাইড করেছেন এই কুনাল বাবু। ফলে তার এই ধরনের বিপদে দল কতটা তার পাশে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত তিনি কলকাতা হাইকোর্টের রোষানল থেকে রক্ষা পান কিনা, সেদিকেই নজর থাকবে সকলের।