প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট- এই রাজ্যের পুলিশ নাকি নিরপেক্ষ। এই রাজ্যের পুলিশ নাকি যেখানেই অপরাধ হয়, সেখানেই পদক্ষেপ নেয়। কিন্তু তৃণমূলের সবেধর নীলমনি বলে পরিচিত অনুব্রত মণ্ডল সেই পুলিশের এক কর্তাকেই কদর্য ভাষায় হুমকি, গালিগালাজ করার পরেও এখনও বাড়িতে বসে রয়েছেন। তাকে গ্রেফতার করার মত সাহস মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশের, রাজীব কুমারের পুলিশের এখনও পর্যন্ত হয়নি। অথচ বিরোধীরা কোনো প্রতিবাদ করলেই এই রাজীব কুমারের পুলিশ তাদের বাড়িতে গিয়ে নোটিশ ধরিয়ে আসে। আর তারা যদি কোনো কারণে জেরায় উপস্থিত না হয়, তাহলে আবার বাড়িতে পুলিশ পাঠিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করার চেষ্টা হয়। এই ঘটনা বারবার রাজ্যের মানুষ দেখেছে। তবে পুলিশের পোশাক পরিহিত অবস্থায় রাজীব কুমার কি নিজের স্বচ্ছতার পরিচয় এবার দেবেন? রাজনীতির উর্ধ্বে উঠে পুলিশ মন্ত্রী কি নির্দেশ দিচ্ছেন, তার পরোয়া না করে রাজ্যের মানুষের চোখে নিরপেক্ষ হওয়ার জন্য কি গ্রেফতার করার সাহস দেখাবেন অনুব্রত মণ্ডলকে?
যে ঘটনা নিয়ে রাজ্য রাজনীতি বর্তমানে তোলপাড়, অনুব্রত মণ্ডলের ভাইরাল অডিও ক্লিপ, সেই ঘটনার পর এখনও পর্যন্ত ১০০ ঘণ্টা পার হয়ে গিয়েছে। কিন্তু অনুব্রত মণ্ডলকে গ্রেফতার করার সাহস দেখাতে পারেনি পুলিশ। কেন তিনি গ্রেপ্তার হচ্ছেন না, সেই প্রশ্ন করতেই রাজ্য পুলিশের ডিজিকে বড় প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেন বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। তিনি বলেন, “পুলিশ চুপ এই কারণে কারণে, পুলিশ তাদের পোশাক তৃণমূলের দপ্তরে জমায়ে রেখে এসেছে। অনুব্রতর মত তৃণমূলের প্রভাবশালী, মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ আস্থাভাজন একজন নেতা পুলিশ সম্পর্কে এই ধরনের মন্তব্য, পুলিশের পোশাক নিয়ে মানুষের মনেই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। রাজীব কুমারের যদি পোশাক পরিহিত অবস্থায় মানুষ চেহারা দেখতে চায়, তাহলে অনুব্রতর শাস্তি হবে। আর যদি লজ্জা না থাকে, তাহলে উনি পোশাক পড়ে আছেন, না পোশাক পড়ে নেই, এই নিয়ে মানুষ আর কখনই কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া দেবে না।”
বিরোধীরা বলছেন, রাজীব কুমার তো এখন রাজ্য পুলিশের ডিজির থেকেও বড় তৃণমূলের নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। শুনতে লজ্জা লাগলেও এটাই বাস্তব। কারণ অনুব্রত মণ্ডলের মত এত জঘন্য একজন নেতা, একজন গুন্ডা তিনি বাজে ভাষায় পুলিশকে আক্রমণ করেছেন। তারপরেও রাজীব কুমার কি করে চুপ থাকতে পারেন? তার মানে তিনি পুলিশের পোশাকটা খুলে রেখে এখন নিজেকে সবথেকে বড় তৃণমূলী হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন। আর সেই কারণেই অনুব্রত মণ্ডল এখনও পর্যন্ত গ্রেপ্তার হচ্ছে না বলেই কটাক্ষ বিরোধী শিবিরের।
পর্যবেক্ষকদের মতে, পুলিশের কাছে এখনও সময় আছে, নিজেদের রাজধর্ম পালন করার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন বুঝতে পারছেন না যে, তিনি যদি পুলিশকে নির্দেশ দেন, অনুব্রত মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করার জন্য, তাহলে তিনি যে দল মতের ঊর্ধ্বে উঠে রাজধর্ম পালন করতে পারেন, এটা রাজ্যের মানুষ দেখে কিছুটা হলেও খুশি হবেন। পুলিশ সম্পর্কে কিছুটা হলেও বিশ্বাস ফিরবে মানুষের মধ্যে। বিধানসভা নির্বাচনের আগে কিছুটা হলেও ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার হবে তৃণমূলের। কিন্তু সেরকম কিছু যে হচ্ছে না, এই রাজ্যের পুলিশ যে সত্যিই দলদাসের মত আচরণ করছেন, তা তো ঘন্টার পর ঘন্টা পেরিয়ে যাওয়ার পরেও অনুব্রত মণ্ডলের গ্রেপ্তার না হওয়ার মধ্যে দিয়েই স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তবে পুলিশ সম্পর্কে মানুষের বিশ্বাস এখনও রয়েছে। তাই সময় থাকতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশ, রাজীব কুমারের পুলিশ কি অনুব্রত মণ্ডলকে গ্রেফতার করে রাজধর্ম পালন করবেন, নাকি নিজেদের আরও বেশি করে তৃণমূলের দলদাস হিসেবে পরিচয় দেবেন, তার ওপরেই এই প্রশাসন এবং তৃণমূলের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক সমালোচকরা।