প্রিয়বন্ধু মিডিয়ার রিপোর্ট-

একেই হয়তো বলে, বিনাশ কালে বিপরীত বুদ্ধি। এমনিতেই বিভিন্ন দিক থেকে জর্জরিত রাজ্য সরকার। শিক্ষা দপ্তরের দুর্নীতি নিয়ে প্রতিনিয়ত সোচ্চার হচ্ছে বিরোধীরা। আর তার মধ্যেই রাজ্যের শিক্ষা দপ্তর যেভাবে সরকারি এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলের গ্রন্থাগারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ১৯ টি বই বাধ্যতামূলকভাবে রাখার জন্য নির্দেশিকা জারি করলো, তাতে এই রাজ্যের সরকারের ফ্যাসিস্ট মনোভাব নিয়েই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে বিরোধীরা। তাদের বক্তব্য, স্কুলের গ্রন্থাগারে তো রবীন্দ্রনাথ, নজরুলের বই থাকবে। তার বদলে একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, তার বই রাখা কতটা সমীচীন? এই সিদ্ধান্ত কি করে নিতে পারে রাজ্যের শিক্ষা দপ্তর?

জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই রাজ্যের সরকারি এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলি যে গ্রন্থাগার রয়েছে, তার উন্নয়নের জন্য প্রত্যেকটি বিদ্যালয়ে এক লক্ষ টাকা করে অনুদানের ঘোষণা করেছে রাজ্যের শিক্ষা দপ্তর। তার পাশাপাশি শিক্ষা দপ্তরের পক্ষ থেকে যেভাবে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর ১৯ টি লেখা বই সেই গ্রন্থাগারের রাখার কথা বলা হয়েছে, তা নিয়েই উঠতে শুরু করেছে প্রশ্ন। কেননা এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর অনেক বই রয়েছে ঠিকই। কিন্তু তার মধ্যে বেশিরভাগ বই তো রাজনৈতিক। তাহলে সেই সমস্ত রাজনৈতিক বইগুলো স্কুলের বাচ্চাদের গ্রন্থাকারে কেন থাকবে? এটা কি ঘুরিয়ে তৃণমূল তাদের নিজেদের প্রচার করছে না? শিশুমনে এইভাবে ছোটবেলা থেকেই রাজনীতির কচকচানি ঢুকিয়ে দেওয়ার অর্থ কি?

ইতিমধ্যেই এই ব্যাপারে বিরোধীদের পক্ষ থেকেও আসতে শুরু করেছে কড়া প্রতিক্রিয়া। এদিন এই প্রসঙ্গে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, “শিক্ষা ব্যবস্থাকে রাজনীতির হাতিয়ার করা হচ্ছে। ছাত্র-ছাত্রীদের বিশ্বমানের জ্ঞান দেওয়ার পরিবর্তে শাসকদলের নেতার বই পড়তে বাধ্য করা হচ্ছে। এটি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিপন্থী।” একইভাবে কলকাতার একটি সরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষকও মুখ্যমন্ত্রীর বই যেভাবে সরকারি স্কুলের গ্রন্থাগারে রাখার নির্দেশ এসেছে, তাকে খুব একটা ভালো চোখে মেনে নিতে রাজি নন। অনেক অভিভাবকরাও এই বিষয়কে ভালো চোখে দেখছেন না। তাহলে এই রাজ্যের শাসক দল বা শিক্ষা দপ্তর কেন এটা বুঝতে পারছে না? যদিও বা এর পেছনে অন্য যুক্তি দিচ্ছেন তৃণমূল। তৃণমূল নেতা কুনাল ঘোষ বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর বইগুলো বাংলার সমাজ ও সংস্কৃতির প্রতিফলন। এগুলি পড়লে ছাত্রছাত্রীরা তার দর্শন ও বাংলার ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবে। বিরোধীরা শুধু রাজনীতি করার জন্য এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে।”

তবে কুনালবাবু যে কথা বলছেন, তারপরেই প্রশ্ন উঠছে যে, মুখ্যমন্ত্রী বাংলার সমাজ সংস্কৃতির প্রতিফলন, তার বইয়ে লিখেছেন, অত্যন্ত ভালো কথা। কিন্তু ছাত্র-ছাত্রীরা ছোটবেলা থেকে রবীন্দ্রনাথ, নজরুলকে না জেনে কেন মুখ্যমন্ত্রীকে জানবেন? কেন ছোটবেলা থেকেই তার রাজনৈতিক ইতিহাস পড়তে হবে শিশুদের? মুখ্যমন্ত্রীর বইগুলোই যদি পড়তে হয় শিশুদের, তাহলে তারা তাদের পাঠ্যবই পড়ার সময় পাবে তো? এটা কি জোর করে চাপিয়ে দেওয়া নয়? এমনিতেই তো শিক্ষা দপ্তর নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন উঠছে। তার মধ্যে তাদের এই নির্দেশ ২০২৬ এর বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূল সরকারের ক্ষেত্রে অন্তত বিনাশকালে বিপরীত বুদ্ধির সমতুল্য বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।