প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট- পশ্চিমবঙ্গে কি এখন সুকুমার রায়ের কবিতার সেই “শিব ঠাকুরের আপন দেশে, আইন কানুন সর্বনেশে” এইরকম আইন চলছে? এই রাজ্যের পুলিশ যে তৃণমূলের হয়ে দলদাসের মত আচরণ করে, সেটা সকলের কাছেই স্পষ্ট। প্রতিনিয়ত এই অভিযোগ তোলে বিরোধীরা। কিন্তু সেই পুলিশকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করার পর তার বউ, মাকে হুমকি দেওয়ার পরেও কি করে বাইরে থাকেন অনু্ব্রত মন্ডল? দলের কাছে তিনি না হয় ক্ষমা চেয়েছেন।কিন্তু পুলিশের তো উচিত ছিল, এই রেকর্ডিং ফাঁস হয়ে যাওয়ার পরেই অনুব্রতবাবুর বাড়িতে গিয়ে তার জামার কলার ধরে তাকে জেলের ভেতরে ঢোকানো। সেই কাজ এখনও পর্যন্ত পুলিশের দ্বারা সম্ভব হলো না। আর এরপরেই প্রশ্ন উঠছে যে, সমস্ত ক্ষেত্রেই রাজ্যে এরকম আইন থাকবে তো? বিরোধীরা যদি শাসকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে বা কোনো নিরপেক্ষ সংবাদ মাধ্যম যদি শাসকের দোষ ত্রুটি ধরিয়ে দেয়, সাথে সাথে তো তার বাড়িতে পুলিশ পাঠিয়ে তাকে জেলে ঘানি টানানোর চেষ্টা করেন এই রাজ্যের প্রশাসন। তাহলে কি তৃণমূলের জন্য রাজ্যে এক আইন, আর অন্যান্য প্রতিবাদীদের জন্য আরেক আইন? প্রশ্নটা তুলে দিলেন খোদ বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার।

বলা বাহুল্য, গতকাল থেকেই রাজ্য রাজনীতি সরগরম হয়ে উঠেছে অনুব্রত মণ্ডলের একটি অডিও ক্লিপকে কেন্দ্র করে। ইতিমধ্যেই তৃণমূলের পক্ষ থেকে এই ঘটনার জন্য অনুব্রত মণ্ডলের কাছে জবাব চাওয়া হয়েছে। তিনি ক্ষমা প্রার্থনাও করেছেন। কিন্তু সেটা তো তিনি দলের কাছে চেয়েছেন। একজন পুলিশকে এইভাবে হুমকি দিলেন, তার মা, বউ তুলে গালিগালাজ করলেন, তারপরে পুলিশ কি করে চুপচাপ বসে থাকে? তাদের কি মেরুদন্ড বলে কিছু নেই? তারা কি এখন বাড়িতে গিয়ে মুখ দেখাতে পারবেন? একজন তৃণমূলের নেতা, যিনি এক কথায় গুন্ডা, তার হুমকির মুখে এইভাবে চুপ করে থাকতে হচ্ছে পুলিশকে? অথচ এই পুলিশকেই দেখা যায়, যখন বিরোধীরা শাসকের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামে, তখন তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যে কেস দিয়ে একের পর এক নেতাকে জেলে ঢোকাতে। ফলে এক যাত্রায় তো পৃথক ফল হতে পারে না। পুলিশের যেখানে অপমান হচ্ছে, সেখানে তারা শুধুমাত্র তৃণমূল নেতা বলেই কি তাকে ছাড় দিচ্ছে? প্রশ্নটা তুলতে শুরু করেছে বিরোধীরা।

এদিন অনুব্রত মণ্ডলের ভাইরাল হওয়া এই অডিও ক্লিপের প্রসঙ্গের কথা তুলে ধরে পুলিশের চাপ বাড়িয়ে দিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তিনি বলেন, “ক্ষমা চেয়ে চিঠি দিলেন। তাতেই কি অপরাধ মাফ হয়ে গেল? তাহলে পুলিশ প্রতিদিন এই যে বিজেপি কর্মীদের গন্ডা গন্ডা করে কেস দেয়, তাহলে বিজেপি কর্মীরাও এরপরে ক্ষমা চেয়ে চিঠি দিয়ে দেবে। তাহলেই অপরাধ মাফ হয়ে যাবে। ক্ষমা চাইলেন কি চাইলেন না, সেটা তো দলের ব্যাপার। প্রশাসন কোথায়, আইন কোথায়? আইনটা যে ভাঙলেন, একজন সরকারি আধিকারিকের কাজে বাধা, তাহলে সেই কাজে বাধা দেওয়ার ধারাটা কোথায়?”

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই রাজ্যের পুলিশের কাছে এখন একটা বড় চ্যালেঞ্জ। তাদের অগ্নিপরীক্ষার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। আর শুধু সুকান্তবাবু নয়, এটা তো রাজ্যের মানুষের কথা যে, অবিলম্বে অনুব্রত মণ্ডলকে গ্রেফতার করে জেলের ভেতরে ঢোকাতে হবে। কোনো নাটকীয় কথা রাজ্যের মানুষ শুনতে চাইছে না। এত বড় অন্যায় করেছেন, তারপরেও তিনি বাইরে থাকেন কি করে? বিজেপির বিরুদ্ধে কেস দেওয়ার ক্ষেত্রে তো প্রশাসনের জুড়ি মেলা ভার। তাহলে এবার যদি বিজেপি নেতাদের প্রতিবাদের জন্য, শাসকের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য কোনো নিরপেক্ষ ইউটিউবার বা প্রতিবাদী সাংবাদিকদের কেস দেওয়া হয়, তখন কিন্তু রাজ্যের মানুষ আর চুপ করে থাকবে না। এই প্রশাসনের মুখোশ টেনে খুলে দেবেন তারা। যদি না, অনুব্রত মণ্ডলকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে পুলিশ। দিনের শেষে তেমনটাই বলছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।